কলকাতা ডার্বি পিছিয়ে গেল ২৬ জুলাই – নিরাপত্তা ও টিকিট বিতরণের জটিলতায় বদলে গেল তারিখ

নিরাপত্তা ও টিকিট বিতরণের জটিলতার কারণে কলকাতা লিগের বহুপ্রতীক্ষিত ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ডার্বি পিছিয়ে গেছে। আগামী ১৯ জুলাই শনিবার নির্ধারিত এই ম্যাচটি এখন অনুষ্ঠিত হবে ২৬ জুলাই শনিবার কল্যাণী স্টেডিয়ামে। বুধবার প্রায়…

Chanchal Sen

 

নিরাপত্তা ও টিকিট বিতরণের জটিলতার কারণে কলকাতা লিগের বহুপ্রতীক্ষিত ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ডার্বি পিছিয়ে গেছে। আগামী ১৯ জুলাই শনিবার নির্ধারিত এই ম্যাচটি এখন অনুষ্ঠিত হবে ২৬ জুলাই শনিবার কল্যাণী স্টেডিয়ামে। বুধবার প্রায় পাঁচ ঘন্টা দীর্ঘ বৈঠকের পর আইএফএ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা বাংলার ফুটবল প্রেমীদের মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে।

আইএফএ সচিব অনির্বাণ দত্ত, উত্তর ২৪ পরগনা স্পোর্টস ফেডারেশনের সচিব নবাব ভট্টাচার্য এবং পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। ডার্বি ম্যাচের সময় ও ভেন্যুতে কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি – কল্যাণী স্টেডিয়ামে বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকেই শুরু হবে এই বিশেষ ম্যাচটি।

টিকিট বিতরণ এবং দুই দলের সমর্থকদের প্রবেশ-প্রস্থানের জন্য আলাদা গেটের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করা চ্যালেঞ্জিং ছিল বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। ডার্বির মতো গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পর্যাপ্ত সময় প্রয়োজন, যা ১৯ জুলাইয়ের আগে সম্ভব হচ্ছিল না। ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগান সুপার জায়েন্ট উভয় দলের কর্তৃপক্ষ এই সিদ্ধান্তে সবুজ সংকেত দিয়েছেন।

এর আগে গত কয়েক দিন ধরে কলকাতা ডার্বি পিছিয়ে যাওয়ার জল্পনা শুরু হয়েছিল। নিরাপত্তার জন্য ডার্বি পিছিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব উঠেছিল, যদিও ক্লাব কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে আইএফএ কর্তারা আশা করেছিলেন নির্ধারিত সময়েই হবে ম্যাচটি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই আশায় গুড়ে বালি পড়েছে।

মূলত বারাসাত স্টেডিয়ামে ডার্বি আয়োজনের কথা ছিল, কিন্তু মাঠ তৈরি হলেও স্টেডিয়াম পুরোপুরি তৈরি না হওয়ায় বড় ম্যাচ কল্যাণী স্টেডিয়ামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কল্যাণী স্টেডিয়ামে এর আগেও প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আই লিগ, সন্তোষ ট্রফির ম্যাচ সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে এই মাঠে। তবে কলকাতা লিগের ডার্বি প্রথমবারের মতো কল্যাণীতে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে।

কলকাতা লিগের এই মরসুমে দুই দলই তাদের রিজার্ভ টিম নামালেও ডার্বিতে কিছু মূল দলের ফুটবলার খেলার সম্ভাবনা রয়েছে। এই ম্যাচের বিশেষ গুরুত্ব সবসময়ই থাকে, যার কারণে দর্শকরা ভিড় করেন স্টেডিয়ামে। ইস্টবেঙ্গল এবং মোহনবাগান সুপার জায়েন্ট ডার্বির আগে কল্যাণী স্টেডিয়ামে খেলেছে, যা তাদের এই মাঠে অভিজ্ঞতা দিয়েছে।

কলকাতা লিগের বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী, চার ম্যাচ খেলে মোহনবাগানের পয়েন্ট সাত এবং তারা লিগ টেবিলে পঞ্চম স্থানে রয়েছে। অন্যদিকে সপ্তম স্থানে থাকা ইস্টবেঙ্গলের তিন ম্যাচ খেলে পয়েন্ট পাঁচ। ডার্বিতে নামার আগে ইস্টবেঙ্গল ১-০ গোলে পাঠচক্রের কাছে হেরে গেছে।

ঐতিহাসিক দিক থেকে দেখলে, কলকাতা ডার্বি এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম ফুটবল প্রতিদ্বন্দ্বিতা। দুই দলের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ১০০ বছরেরও বেশি পুরনো। এই মুহূর্তে দুই দলের মধ্যে মোট ৪০১ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে ইস্টবেঙ্গল জিতেছে ৫৫ ম্যাচ এবং মোহনবাগানের জয়ের সংখ্যা ৪৮।

বাংলার ফুটবলে এই দুই দলের সংঘর্ষ সবসময়ই বিশেষ উৎসাহের সৃষ্টি করে। সাধারণত বছরে অন্তত তিনবার দুই দল মিলিত হয় – দুবার ইন্ডিয়ান সুপার লিগে এবং একবার কলকাতা ফুটবল লিগে। প্রায়শই এই দুই ক্লাব অন্যান্য প্রতিযোগিতায়ও মুখোমুখি হয়, যেমন ডুরান্ড কাপ, আইএফএ শিল্ড ইত্যাদি।

পূর্ববর্তী কলকাতা লিগের ডার্বিতে ২০২৪ সালে ইস্টবেঙ্গল ২-১ গোলে মোহনবাগানকে পরাজিত করেছিল। এবার কোন দল ইজ্জতের লড়াইয়ে জয়ী হবে তা নিয়ে প্রত্যাশা বাড়ছে সমর্থকদের মধ্যে। যদিও তারিখ পরিবর্তনের কারণে অপেক্ষার সময় আরো বেড়েছে, কিন্তু এই বিলম্ব নিরাপত্তা এবং সুষ্ঠু আয়োজনের স্বার্থে প্রয়োজনীয় ছিল।

আগামী ২৬ জুলাই শনিবার কল্যাণী স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই কলকাতা ডার্বি বাংলার ফুটবল প্রেমীদের জন্য এক অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা হয়ে উঠবে। দুই দলের তরুণ প্রতিভা এবং ভবিষ্যতের তারকাদের পারফরম্যান্স দেখার সুযোগ পাবেন দর্শকরা। নিরাপত্তা ও সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য এই বিলম্ব হলেও কলকাতা ডার্বির জনপ্রিয়তা ও গুরুত্ব অটুট থাকবে।

About Author
Chanchal Sen

চঞ্চল সেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক। তিনি একজন অভিজ্ঞ লেখক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক, যিনি পলিটিক্স নিয়ে লেখালিখিতে পারদর্শী। চঞ্চলের লেখায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের গভীর বিশ্লেষণ এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর সঠিক উপস্থাপন পাঠকদের মুগ্ধ করে। তার নিবন্ধ এবং মতামতমূলক লেখা বস্তুনিষ্ঠতা ও বিশ্লেষণধর্মিতার কারণে পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। চঞ্চল সেনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিভঙ্গি এবং গভীর গবেষণা তাকে রাজনৈতিক সাংবাদিকতার জগতে একটি স্বতন্ত্র স্থান প্রদান করেছে। তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে পাঠকদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং সমাজে পরিবর্তন আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছেন।