কলকাতায় মঙ্গলবার ভোর থেকে টানা বৃষ্টিতে সেপ্টেম্বরে রেকর্ড বৃষ্টি হয়েছে—আবহাওয়া দফতরের প্রাথমিক হিসাবে প্রায় ৩৯ বছরে এমন নজিরবিহীন সেপ্টেম্বর-বৃষ্টি দেখা যায়নি; দুপুর নাগাদ শহরের বহু রাস্তায় হাঁটু-সমান জল জমে যান চলাচল ব্যাহত হয় এবং অফিসযাত্রী-স্কুলছাত্রছাত্রীদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।
মঙ্গলবার সকালেই ধারাবাহিক বৃষ্টিপাতে উত্তর থেকে দক্ষিণ—শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে জল জমতে শুরু করে। মাঝারি থেকে ভারী দাপটে নামা বৃষ্টির কারণে নিকাশি ব্যবস্থার ওপর চাপ বাড়ে, ফলে কয়েকটি সংযোগকারী রাস্তায় দীর্ঘ যানজট তৈরি হয় এবং গণপরিবহনে বিলম্ব দেখা যায়।
আবহাওয়া দফতরের হিসাবে বঙ্গোপসাগরের উপর সক্রিয় আবহাওয়াজনিত সিস্টেমের প্রভাবে এই ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। শহর ও সংলগ্ন এলাকায় সকালের পর থেকেই বজায় ছিল বৃষ্টির দৌরাত্ম্য, যা মধ্যাহ্নে আরও তীব্র হয়। পূর্বাভাস–পর্যবেক্ষণ মিলিয়ে দফতর পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে নজরে রেখেছে এবং প্রয়োজন হলে সতর্কতা জারি করার কথা জানিয়েছে।
শহরের রাস্তাঘাটে জল উঠতেই একাধিক নিম্নাঞ্চলে দোকানপাট আংশিক বন্ধ রাখতে হয়। অফিসপাড়া ও বাণিজ্যকেন্দ্রগুলিতে কর্মী উপস্থিতি কমে যায়। গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতে ট্র্যাফিক পুলিশ নজরদারি বাড়ায় এবং জল জমা সংবেদনশীল আন্ডারপাস ও সাবওয়েতে অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
পরিবহন ব্যবস্থায় ভোরের পর থেকেই বিপর্যয় দেখা দেয়। বাস-ট্যাক্সি ও অ্যাপ ক্যাব রুট বদল করে চলতে বাধ্য হয়, কোথাও কোথাও সার্ভিস কমিয়ে দেওয়া হয়। কিছু লোকাল ট্রেন-স্টেশন এলাকায় প্ল্যাটফর্মের সামনে জল জমে পড়া-ওঠায় বিলম্ব হয় বলেই খবর। বিমানবন্দরে আগত ও বহির্গামী যাত্রীদের রাস্তা পৌঁছতে সময় বেশি লাগে, যদিও বিমানের উড়ানসূচিতে বড় ধরনের বিঘ্নের খবর মেলেনি।
নাগরিক দুর্ভোগ কমাতে কলকাতা পুরসভা জরুরি কন্ট্রোল রুম সক্রিয় রাখে এবং পাম্পিং স্টেশনগুলিতে অতিরিক্ত কর্মী মোতায়েন করা হয়। খোলা ম্যানহোল ও জল জমা পয়েন্টগুলিতে অ্যাসিস্ট্যান্স টিম কাজ করে। পুলিশ-পুরসভা যৌথভাবে হেল্পলাইন নম্বরগুলি চালু রাখার অনুরোধ জানায়, যাতে জলমগ্ন এলাকা, বিদ্যুৎ–বিচ্ছিন্নতা বা গাছ পড়ে যাওয়ার মতো বিপদের খবর দ্রুত পৌঁছয়।
পটভূমিতে দেখা যায়, গত প্রায় চার দশকে সেপ্টেম্বর মাসে একদিনে এমন বৃষ্টিপাত খুব কমই নথিভুক্ত হয়েছে। ৩৯ বছরের ব্যবধানে এই মাত্রার সেপ্টেম্বর-বৃষ্টি শহরের জন্য বিরল, যা ‘রেকর্ড বৃষ্টি’ হিসেবে আবহাওয়াবিদদের পরিভাষায় ধরা পড়েছে। বর্ষা মৌসুমে স্বল্পসময়ে অতিবৃষ্টির ঘটনাগুলি বিগত কয়েক বছরে বাড়তি নজরে এসেছে—শহুরে নিকাশি, নির্মাণকাজ ও অতি নিুমাঞ্চলগুলির কারণে জল নামার গতি কমে গেলে দুর্ভোগ বাড়ে।
বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে শহরের ড্রেনেজ ও ক্যানালের নিয়মিত ডেসিল্টিং, পাম্পিং ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি এবং জলাবদ্ধতা–প্রবণ ওয়ার্ডে আগাম স্যান্ডব্যাগিং করলে তাৎক্ষণিক স্বস্তি মেলে। নাগরিকদেরও অনাবশ্যক যাতায়াত এড়িয়ে চলা, খোলা বৈদ্যুতিক খুঁটি বা পানিতে ডোবা ম্যানহোল থেকে দূরে থাকা, এবং প্রয়োজন হলে নিকটবর্তী সেফ শেল্টারে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
কেন শিরোনামে ‘৩৯ বছরে প্রথম’—আবহাওয়া দফতরের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সেপ্টেম্বর মাসে একটানা এমন বৃষ্টিপাত শহরে বহু বছর পর নথিবদ্ধ হলো। সেই সঙ্গে ‘রেকর্ড বৃষ্টি’ শব্দযুগল এসেছে দিনভর বৃষ্টিপাতে বৃষ্টিমাপক কেন্দ্রগুলির উচ্চমাত্রার নথি ও জলাবদ্ধতাজনিত নগর–বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপট থেকে; আর ‘দুর্ভোগে শহর’ প্রতিফলিত করছে গণপরিবহন ব্যাঘাত, অফিসসময়ের জট, এবং নিুমাঞ্চলের জলমগ্নতার ছবি।
আগামী ঘন্টার দিকে নজর রেখে আবহাওয়া দফতর পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে। নাগরিকদের আবহাওয়া–বুলেটিন দেখে রুট পরিকল্পনা করার আবেদন থাকছে এবং জলাবদ্ধ সংযোগপথ এড়িয়ে বিকল্প রাস্তা বেছে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পুরসভা-পুলিশ-বিদ্যুৎ দফতর সমন্বয়ে কাজ করছে।
সব মিলিয়ে, সেপ্টেম্বরে রেকর্ড বৃষ্টি কলকাতায় যে বিরল আবহাওয়াগত নজির তৈরি করল, তা শহুরে পরিকাঠামোর স্থিতিশীলতা ও দুর্যোগ–প্রস্তুতির ক্ষেত্রে নতুন করে ভাবনার দরজা খুলে দিল—তাৎক্ষণিক সাড়া, দ্রুত জল নামানো এবং সঠিক তথ্যপ্রবাহই এখন স্বস্তির চাবিকাঠি।