Krishna Janmashtami 2025: কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ২০২৫ আসছে আগস্ট মাসে, আর ভক্তদের মনে এখনই শুরু হয়ে গেছে প্রস্তুতির তোড়জোড়। শ্রীকৃষ্ণের জন্মতিথি উপলক্ষে এই পবিত্র দিনে উপবাস পালন করা হিন্দু ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহ্য। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে, এই উপবাসের রয়েছে নির্দিষ্ট নিয়মকানুন এবং বিশেষ করণীয়-বর্জনীয়।
এই বছর জন্মাষ্টমী পড়েছে ১৬ আগস্ট, শনিবার। তবে উপবাস শুরু হবে ১৫ আগস্ট সন্ধ্যা থেকেই। আপনি যদি সঠিকভাবে এই ব্রত পালন করতে চান, তাহলে জেনে নিন সব নিয়মকানুন এবং আধ্যাত্মিক গুরুত্ব।
কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ২০২৫ এর তারিখ ও সময়
এবছর কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ২০২৫ পালিত হবে ১৬ আগস্ট, শনিবার। অষ্টমী তিথি শুরু হবে ১৫ আগস্ট রাত ১১:৪৯ মিনিটে এবং শেষ হবে ১৬ আগস্ট রাত ৯:৩৪ মিনিটে।
পূজার শুভ মুহূর্ত:
- নিশীথ পূজার সময়: ১৭ আগস্ট রাত ১২:০৪ থেকে ১২:৪৭ মিনিট পর্যন্ত
- মধ্যরাত্রির মুহূর্ত: ১৭ আগস্ট রাত ১২:২৫ মিনিট
- চন্দ্রোদয়ের সময়: রাত ১১:৩২ মিনিট
জন্মাষ্টমী উপবাসের নিয়মাবলী
উপবাস শুরুর নিয়ম
জন্মাষ্টমীর উপবাস দুই ধরনের হতে পারে – নির্জলা এবং ফলাহার। নির্জলা উপবাসে সারাদিন কোনো খাবার বা জল খাওয়া যায় না। আর ফলাহার উপবাসে ফল, দুধ এবং সাত্ত্বিক খাবার খাওয়া যায়।
সংকল্প গ্রহণ: সকালে স্নানের পর গণেশ পূজা করে সংকল্প নিতে হয়। এই সংকল্পে স্পষ্ট করে বলতে হয় যে আপনি কেন শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তিতে এই ব্রত পালন করছেন।
উপবাস ভাঙার সময়
উপবাস ভাঙতে হবে মধ্যরাত্রির পর, অর্থাৎ ১৭ আগস্ট রাত ১২:৪৭ মিনিটের পরে। কারণ মধ্যরাত্রিতেই শ্রীকৃষ্ণের জন্ম হয়েছিল বলে শাস্ত্রে উল্লেখ আছে।
কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ২০২৫ এ করণীয় বিষয়সমূহ
১. পবিত্রতা বজায় রাখা
ঘর পরিষ্কার করুন: সকালে উঠে প্রথমেই ঘর পরিষ্কার করুন, বিশেষভাবে পূজার স্থান। নতুন ফুল, আম পাতা, তোরণ দিয়ে সাজান পূজার জায়গা।
পবিত্র স্নান: ভোরে উঠে স্নান করে পরিচ্ছন্ন হন। লাড্ডু গোপাল বা কৃষ্ণমূর্তিকেও পবিত্র জলে স্নান করান।
কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ২০২৫ কবে: যে পূজা মুহূর্ত, আচার-অনুষ্ঠান ও গুরুত্ব জানা আবশ্যক
২. সাত্ত্বিক জীবনযাত্রা
সাত্ত্বিক খাবার: এদিন শুধুমাত্র সাত্ত্বিক খাবার খান। ফল, দুধ, মাখন, মিশ্রি, তুলসী পাতা – এসব কৃষ্ণের প্রিয় খাবার।
ঘরে প্রসাদ তৈরি: বাড়িতে পেঁড়া, ঘি এর লাড্ডু, নারকেল গজক, পঞ্জেরী এবং দুধের মিষ্টি তৈরি করুন।
৩. আধ্যাত্মিক চর্চা
রাত জাগরণ: সারারাত জেগে থেকে কৃষ্ণ ভজন, কীর্তন করুন। ভাগবত গীতা বা ভাগবত পুরাণ পড়ুন।
মধ্যরাত্রি পূজা: নিশীথ কালে বিশেষ পূজা করুন। এই সময়ে আরতি, ভজন এবং প্রসাদ বিতরণ করুন।
৪. দান ও সেবা
গরিবদের সেবা: খাবার, কাপড় বা অর্থ দান করুন। এটি কর্ম যোগের একটি শক্তিশালী রূপ বলে মনে করা হয়।
গো-সেবা: শ্রীকৃষ্ণের গরুর প্রতি ভালোবাসার কথা মনে রেখে গরু ও অন্যান্য প্রাণীদের খাবার দিন।
কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ২০২৫ এ বর্জনীয় বিষয়সমূহ
খাদ্য সংক্রান্ত বিধিনিষেধ
মাংস ও অমাংসাশী খাবার: উপবাসের সময় সম্পূর্ণভাবে মাংস, মাছ, ডিম বর্জন করুন। এমনকি পরিবারের অন্য সদস্যরাও এদিন মাংসাশী খাবার এড়িয়ে চলুন।
পেঁয়াজ-রসুন ও নেশাজাতীয় দ্রব্য: পেঁয়াজ, রসুন, মদ, তামাক এবং অন্যান্য নেশাজাতীয় দ্রব্য সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলুন।
চা-কফি: উপবাসের সময় চা ও কফি পান করবেন না। এর পরিবর্তে নারকেল জল বা তাজা ফলের রস পান করুন।
আচরণগত বিষয়
রাগ ও অশান্তি: এদিন কারো সাথে ঝগড়া করবেন না, রাগ করবেন না। ঘরে শান্তিপূর্ণ ও আনন্দময় পরিবেশ বজায় রাখুন।
অপরিচ্ছন্নতা: অপরিচ্ছন্ন পাত্র ব্যবহার করবেন না। বিশেষভাবে যে সব পাত্রে মাংস রান্না হয়েছে, সেগুলো এড়িয়ে চলুন।
বিভিন্ন ধরনের উপবাসের নিয়ম
নির্জলা উপবাস
এটি সবচেয়ে কঠিন উপবাস যেখানে সারাদিন কোনো খাবার বা জল খাওয়া যায় না। এই উপবাস শুধুমাত্র মধ্যরাত্রির পর, শ্রীকৃষ্ণের জন্ম উদযাপনের পর ভাঙা হয়।
ফলাহার উপবাস
এই উপবাসে সাবুদানা, মাখন, ফল, দুধ, দই, মিষ্টি এবং ব্রতের আটার খাবার খাওয়া যায়। তবে কোনো ধরনের শস্য বা ডাল খাওয়া যায় না।
জন্মাষ্টমীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য
কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ২০২৫ পালনের মূল উদ্দেশ্য হল আত্মশুদ্ধি এবং আধ্যাত্মিক উন্নতি। উপবাস পালনের মাধ্যমে ইন্দ্রিয় নিয়ন্ত্রণ এবং মন-দেহের পবিত্রতা অর্জন করা যায়।
ভাগবত পুরাণ অনুযায়ী, শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেছিলেন অধর্ম ও অত্যাচারের বিনাশ এবং ধর্ম প্রতিষ্ঠার জন্য। তাই এই দিনে উপবাস পালন করলে ভক্তদের মধ্যে শান্তি, সমৃদ্ধি এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞান আসে বলে বিশ্বাস করা হয়।
বিশেষ পূজা পদ্ধতি
বাল গোপাল সাজানো
লাড্ডু গোপালকে হলুদ বা নীল রঙের কাপড় পরান। মুকুট, ময়ূরের পালক, বাঁশি দিয়ে সাজান। একটি ছোট দোলনা বা ঝুলায় কৃষ্ণমূর্তি রাখুন।
ঝুলন উৎসব
অনেক মন্দিরে বাল কৃষ্ণের মূর্তি সাজানো ঝুলায় রাখা হয়। ভক্তরা ভালোবাসা ও যত্নের প্রতীক হিসেবে আলতো করে ঝুলা দোলান।
কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী ২০২৫ এর এই পবিত্র দিনে সঠিক নিয়মে উপবাস পালন করলে পাবেন আধ্যাত্মিক শান্তি ও মানসিক প্রশান্তি। মনে রাখবেন, এই ব্রত শুধু খাদ্য বিধিনিষেধ নয়, বরং একটি সম্পূর্ণ আধ্যাত্মিক সাধনা। শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তি ও ভালোবাসার মাধ্যমে এই দিনটি উদযাপন করুন। আপনার অভিজ্ঞতা কমেন্টে শেয়ার করুন এবং অন্যদের সাথে এই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ভাগ করে নিন