Indian cinema at Oscars: ২০২৫ সালের অস্কার পুরস্কারের জন্য ভারতের অফিসিয়াল এন্ট্রি হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে পরিচালক কিরণ রাওয়ের ‘লাপাতা লেডিজ’ ছবিটি। ফিল্ম ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (এফএফআই) এই ঘোষণা করেছে। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে কিরণ রাওয়ের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে গেল ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প।
‘লাপাতা লেডিজ’ একটি হৃদয়স্পর্শী এবং নারী ক্ষমতায়নের গল্প নিয়ে তৈরি ছবি। ২০০১ সালের গ্রামীণ ভারতের পটভূমিতে দুই নববধূর কাহিনী নিয়ে এই ছবি। ট্রেন যাত্রার সময় দুজন নববধূ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং একজন হারিয়ে যায়। এই ঘটনার পর একজন পুলিশ অফিসার কিশান তদন্তের দায়িত্ব নেন এবং এক জটিল রহস্যের মুখোমুখি হন।ছবিটিতে নিতানশি গোয়েল, প্রতিভা রান্তা, স্পর্শ শ্রীবাস্তব এবং ছায়া কাদম মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
70th National Film Awards 2024: ‘আত্তাম’ সেরা চলচ্চিত্র, ঋষভ শেট্টি সেরা অভিনেতা
কিরণ রাও পরিচালনা করেছেন এবং আমির খান প্রযোজনা করেছেন।কিরণ রাও এই খবর শুনে অত্যন্ত আনন্দিত। তিনি বলেন, “আমার স্বপ্ন পূরণ হবে যদি এটি অস্কারে যায়। কিন্তু এটা একটা প্রক্রিয়া, আমি আশা করছি ‘লাপাতা লেডিজ’ বিবেচনা করা হবে। আমি নিশ্চিত যে সবচেয়ে ভালো ছবিই যাবে, যাকেই তারা নির্বাচন করুক না কেন।”‘লাপাতা লেডিজ’ এর আগে ২০২৩ সালে টরন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে (টিআইএফএফ) বিশ্ব প্রিমিয়ার হয়েছিল। এরপর ২০২৪ সালের মার্চ মাসে ভারতে মুক্তি পায় এবং সমালোচকদের কাছ থেকে ব্যাপক প্রশংসা পায়।ছবিটি শুধু মনোরঞ্জনমূলক নয়, বরং গ্রামীণ ভারতে লিঙ্গ সমতা, নারী শিক্ষা এবং ক্ষমতায়নের বার্তা বহন করে। এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা শুরু করার জন্য গত মাসে ভারতের সুপ্রিম কোর্টে একটি বিশেষ স্ক্রিনিংও করা হয়েছিল। প্রধান বিচারপতি, বিচারক, তাদের পরিবার এবং কর্মকর্তাদের জন্য এই স্ক্রিনিং আয়োজন করা হয়।
কিরণ রাও বলেন, “লিঙ্গ সমতা, নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে আলোচনা শুরু করার জন্য আমাদের প্রধান বিচারপতির দূরদর্শিতা ছিল এই ধরনের একটি ছবি স্ক্রিন করার। তিনি ছবিটি দেখে আমাদের কাছে পৌঁছেছিলেন, আমরা বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। আমরা খুবই কৃতজ্ঞ ও উত্তেজিত ছিলাম।”এই ছবির অস্কার মনোনয়ন ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য একটি বড় সাফল্য। গত বছর এসএস রাজামৌলির ‘আরআরআর’ ছবির ‘নাটু নাটু’ গান সেরা মূল গানের বিভাগে অস্কার জিতেছিল। এবার ‘লাপাতা লেডিজ’ এর মাধ্যমে ভারতীয় সিনেমা আবারও বিশ্ব দরবারে নিজের স্থান করে নেওয়ার সুযোগ পেল।ইন্ডিয়ান ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল অফ মেলবোর্নে ‘লাপাতা লেডিজ’ ইতিমধ্যেই পাঁচটি বিভাগে মনোনীত হয়েছে। এগুলি হল:
- সেরা অভিনেত্রী (দুটি মনোনয়ন)
- সেরা অভিনেতা
- সেরা ছবি – সমালোচক
- সেরা পরিচালক – সমালোচক
এই মনোনয়নগুলি প্রমাণ করে যে ‘লাপাতা লেডিজ’ শুধু ভারতেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও স্বীকৃতি পেয়েছে।চিত্রনাট্যকার বিপ্লব গোস্বামী এই খবর শুনে উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেন, “এটা খুবই আনন্দের খবর। কিরণ রাও একজন প্রতিভাবান পরিচালক। তিনি যে ধরনের ছবি করেন, তা সত্যিই অসাধারণ। ‘লাপাতা লেডিজ’ একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে তৈরি ছবি। এটি অস্কারে যাওয়ার যোগ্য।”‘লাপাতা লেডিজ’ এর অস্কার মনোনয়ন ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য একটি বড় সুযোগ। এটি শুধু একটি ছবির সাফল্য নয়, বরং ভারতীয় সিনেমার মান ও বৈচিত্র্যের প্রতিফলন।
এই ছবির মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী দর্শকরা ভারতের গ্রামীণ জীবন, সামাজিক প্রথা এবং নারীদের সমস্যাগুলি সম্পর্কে জানতে পারবেন।কিরণ রাও বলেন, “সিনেমা হৃদয়কে স্পর্শ করে। আমি আশা করি ‘লাপাতা লেডিজ’ শুধু ভারতীয় দর্শকদের নয়, বিশ্বব্যাপী দর্শকদের হৃদয় স্পর্শ করবে।”‘লাপাতা লেডিজ’ এর অস্কার যাত্রা শুধু একটি ছবির সাফল্য নয়, এটি ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ও গুণমানের প্রমাণ। এই ছবির মাধ্যমে ভারতীয় সিনেমা আবারও প্রমাণ করল যে তারা শুধু বলিউডি গান-নাচের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং গভীর সামাজিক বার্তা বহন করতে সক্ষম।
অস্কার মনোনয়নের এই খবর ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য একটি বড় উৎসাহ। এটি আরও বেশি পরিচালক ও প্রযোজকদের উৎসাহিত করবে গুণমানসম্পন্ন ও অর্থবহ ছবি তৈরি করতে। এর ফলে ভারতীয় সিনেমার মান আরও উন্নত হবে এবং বিশ্ব দরবারে তার স্থান আরও সুদৃঢ় হবে।’লাপাতা লেডিজ’ এর সাফল্য প্রমাণ করে যে ভারতীয় দর্শকরা এখন গুণমানসম্পন্ন ও অর্থবহ সিনেমা দেখতে আগ্রহী। কিরণ রাও বলেন, “এখন দর্শকরা অসাধারণ আর্ট হাউস সিনেমার প্রতি আরও বেশি উন্মুখ।
দেশপ্রেমের ৫ মাস্টারপিস: বলিউডের এই ছবিগুলি দেখলে আপনার বুক গর্বে ফুলে উঠবে!
তাই এখন এই ধরনের ছবি আবার থিয়েটারে মুক্তি পেলে কেমন প্রতিক্রিয়া হয় তা দেখতে ভালো লাগবে।”‘লাপাতা লেডিজ’ এর অস্কার যাত্রা শুধু একটি ছবির সাফল্য নয়, এটি ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা। এটি প্রমাণ করে যে ভারতীয় সিনেমা এখন বিশ্বমানের এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির যোগ্য।এই সাফল্য ভবিষ্যতে আরও বেশি ভারতীয় ছবিকে অস্কারের মঞ্চে পৌঁছানোর পথ সুগম করবে। এটি ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে এবং বিশ্ব সিনেমার মানচিত্রে ভারতের অবস্থান আরও সুদৃঢ় করবে।