Eating late at night health risks: আপনি কি প্রায়ই রাত ১০টার পরে খাবার খান? সাবধান! সাম্প্রতিক গবেষণাগুলি দেখাচ্ছে যে রাতে দেরি করে খাওয়া আপনার হার্টের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হতে পারে। বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে যারা ৮ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে দিনের সব খাবার খান, তাদের কার্ডিওভাসকুলার রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি ৯১% পর্যন্ত বেড়ে যায়। এমনকি রাত ৯টার পর খাবার খেলে সেরেব্রোভাসকুলার রোগের ঝুঁকি ২৮% বেড়ে যেতে পারে। আসুন জেনে নেই কেন রাতে দেরি করে খাওয়া এতটা ক্ষতিকর এবং কীভাবে আমরা এই ঝুঁকি কমাতে পারি।
দেরি করে খাওয়া এবং হার্ট হেলথ: গবেষণার প্রমাণ
বিভিন্ন বড় মাপের গবেষণা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে যে আমরা কখন খাই তা আমাদের হার্টের স্বাস্থ্যকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। American Heart Association দ্বারা উপস্থাপিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা দিনের সমস্ত খাবার ৮ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখেন (যাকে টাইম-রেস্ট্রিক্টেড ইটিং বলা হয়), তাদের কার্ডিওভাসকুলার রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি ৯১% বেড়ে যায়। এই ফলাফল গবেষকদের অবাক করেছে, কারণ এই ধরনের খাওয়ার পদ্ধতি স্বল্পমেয়াদী উপকারের জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা ব্রেকফাস্ট বাদ দেন এবং ঘুমানোর ঠিক আগে ডিনার খান, তাদের হার্ট অ্যাটাকের পরে আরও খারাপ ফলাফল অনুভব করার সম্ভাবনা বেশি। এই ধরনের অস্বাস্থ্যকর খাওয়ার অভ্যাস থাকা ব্যক্তিদের হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে মৃত্যু, আরেকটি হার্ট অ্যাটাক, বা এনজাইনা (বুকে ব্যথা) হওয়ার সম্ভাবনা ৪-৫ গুণ বেশি।
একটি বড় গবেষণায় ১০৩,০০০ এরও বেশি প্রাপ্তবয়স্ক অংশগ্রহণকারীদের খাওয়ার সময়সূচি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে যে যারা সকালে ৯টার পরে তাদের প্রথম খাবার খান (সকাল ৮টার আগে খাওয়ার তুলনায়) এবং রাত ৯টার পরে শেষ খাবার খান (রাত ৮টার আগে খাওয়ার তুলনায়), তাদের কার্ডিওভাসকুলার ঘটনা যেমন হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি।
রাত্রিকালীন খাবার এবং কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের মধ্যে সম্পর্ক
প্রশ্ন হতে পারে, কেন রাতে খাওয়া এতটা ক্ষতিকর? এর পিছনে বেশ কিছু বিজ্ঞানভিত্তিক কারণ রয়েছে।
আমাদের শরীরে একটি সার্কাডিয়ান রিদম বা জৈবিক ঘড়ি রয়েছে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, বিপাক এবং হরমোন নিঃসরণের মতো বিভিন্ন শারীরিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। খাবারের সময় এই জৈবিক ঘড়িকে প্রভাবিত করে। রাতে দেরিতে খাওয়া এই সার্কাডিয়ান রিদম ব্যাহত করে, যা শরীরের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় অনিয়ম সৃষ্টি করতে পারে।
গবেষকরা আরও দেখিয়েছেন যে রাতে খাওয়া শরীরের রাতের বেলার ফাস্টিং পিরিয়ড কমিয়ে দেয়। গ্লুকোজ, এপিনেফ্রিন এবং কর্টিসল সবই সার্কাডিয়ান রিদমকে উল্লেখযোগ্যভাবে প্রভাবিত করে। ঘুমানোর ঠিক আগে খাওয়া অগ্ন্যাশয় এবং চর্বি টিস্যুর উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে, যা হাইপারগ্লাইসেমিয়া, উচ্চ ননএস্টারিফাইড ফ্যাটি অ্যাসিড স্তর এবং ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স সৃষ্টি করতে পারে। এসব হাইপারগ্লাইসেমিয়া, অক্সিডেটিভ স্ট্রেস এবং প্রদাহ বাড়িয়ে এন্ডোথেলিয়াল ডিসফাংশন এবং আর্টেরিয়াল স্টিফনেস (ধমনী কঠিন হওয়া) বাড়ায়।
রাতে কি খাওয়া হয় সেটাও গুরুত্বপূর্ণ
রাতে দেরি করে খাওয়ার ক্ষতিকারক প্রভাব শুধু সময়ের উপর নির্ভর করে না, বরং আমরা যা খাই তার উপরও নির্ভর করে। গবেষণায় দেখা গেছে যে রাতের খাবার প্রায়ই লবণযুক্ত স্ন্যাকস হয়, যা আর্টেরিয়াল স্টিফনেস এবং এন্ডোথেলিয়াল ডিসফাংশনের সাথে জড়িত।
রাতে অতিরিক্ত খাওয়া (Late-night overeating) বেশ কয়েকটি CVD রিস্ক ফ্যাক্টরের সাথে যুক্ত, যেমন স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, গ্লাইসেমিক এবং লিপিড প্রোফাইল ডিসঅর্ডার। এই ধরনের খাওয়ার আচরণের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য এই সম্পর্কে অবদান রাখতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, রাতে বেশি খাওয়া থেকে দৈনিক ক্যালোরি গ্রহণ বাড়ে, এবং সাথে ফুড থার্মোজেনেসিস এবং রেস্টিং মেটাবলিক রেট কমে যায়, যা পজিটিভ এনার্জি ব্যালেন্স এবং স্থূলতার দিকে নিয়ে যেতে পারে।
মহিলাদের উপর বেশি প্রভাব
উল্লেখযোগ্যভাবে, রাতে দেরি করে খাওয়ার এই নেতিবাচক প্রভাবগুলি মহিলাদের ক্ষেত্রে আরও শক্তিশালী। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষকরা দেখিয়েছেন যে সন্ধ্যা ৬টার পরে বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করা মহিলাদের কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। প্রতি ১% ক্যালোরি যা সন্ধ্যা ৬টার পরে খাওয়া হয়, তা কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য স্কোর কমিয়ে দেয় এবং রক্তচাপ এবং বডি মাস ইনডেক্স বাড়ায়।
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা প্রথম খাবার দেরিতে খান এবং শেষ খাবার রাত ৯টার পরে খান, তাদের মধ্যে মহিলাদের কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি পুরুষদের তুলনায় বেশি।
আদর্শ খাবার সময়সূচি কী হতে পারে?
বিভিন্ন গবেষণা থেকে একটি সুস্পষ্ট ছবি উঠে আসে যে কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্যের জন্য আদর্শ খাবারের সময়সূচি কী হতে পারে:
-
প্রথম খাবার সকাল ৮টার আগে খাওয়া: গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা সকাল ৮টার আগে প্রথম খাবার খান, তাদের কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি কম।
-
শেষ খাবার রাত ৮টার আগে খাওয়া: রাত ৯টার পরে খাওয়ার তুলনায় রাত ৮টার আগে শেষ খাবার খাওয়া সেরেব্রোভাসকুলার রোগের ঝুঁকি ২৮% কমায়।
-
ঘুমের আগে কমপক্ষে ২ ঘন্টার ফাঁক রাখা: গবেষণায় দেখা গেছে যে ঘুমানোর আগে কমপক্ষে ২ ঘন্টা খাবার না খাওয়া উচিত।
-
রাতের ফাস্টিং পিরিয়ড বাড়ানো: দিনের শেষ খাবার আগে খাওয়া এবং পরের দিনের প্রথম খাবার পরে খাওয়ার বদলে, দিনের শেষ খাবার আগে খাওয়া রাতের ফাস্টিং পিরিয়ড বাড়ায়, যা সেরেব্রোভাসকুলার রোগের ঝুঁকি ৭% কমাতে পারে।
ব্রেকফাস্ট স্কিপিং এবং লেট ডিনার: একটি মারাত্মক কম্বিনেশন
সকালের নাস্তা বাদ দেওয়া এবং রাতে দেরি করে খাওয়া – এই দুটি খাদ্যাভ্যাস একসাথে হার্ট অ্যাটাকের জন্য বিশেষভাবে বিপজ্জনক। যারা এই দুটি অভ্যাস একসাথে রাখেন, তাদের হার্ট অ্যাটাকের পর ৩০ দিনের মধ্যে মৃত্যু, আরেকটি হার্ট অ্যাটাক, বা এনজাইনা হওয়ার সম্ভাবনা ৪-৫ গুণ বেশি।
গবেষণায় দেখা গেছে যে অংশগ্রহণকারীদের ৫৮% সকালের নাস্তা বাদ দিয়েছেন, ৫১% রাতে দেরি করে খেয়েছেন, এবং ৪১% উভয় অভ্যাসই রেখেছেন। এই গবেষণাটি স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে যে সকালের নাস্তা বাদ দেওয়া এবং রাতে দেরি করে খাওয়া – দুটিই স্বতন্ত্রভাবে হার্ট অ্যাটাকের পর খারাপ ফলাফলের সাথে যুক্ত, কিন্তু একসাথে এগুলি আরও বেশি ক্ষতিকর।
সুস্থ ব্রেকফাস্টের গুরুত্ব
ব্রাজিলের সাও পাওলো স্টেট ইউনিভার্সিটির গবেষক ডঃ মার্কোস মিনিকুচি বলেন, “বলা হয় যে সবচেয়ে ভালো জীবনযাপনের উপায় হল রাজার মতো সকালের নাস্তা করা”। একটি ভালো সকালের নাস্তায় সাধারণত দুগ্ধজাত পণ্য (ফ্যাট-ফ্রি বা লো ফ্যাট মিল্ক, দই এবং চিজ), কার্বোহাইড্রেট (হোল হুইট ব্রেড, বেগেলস, সিরিয়ালস), এবং সম্পূর্ণ ফল থাকে। এটি আমাদের দৈনিক মোট ক্যালোরি গ্রহণের ১৫% থেকে ৩৫% হওয়া উচিত।
টাইম-রেস্ট্রিক্টেড ইটিং: সাবধানতা অবলম্বন করুন
সম্প্রতি টাইম-রেস্ট্রিক্টেড ইটিং (যেমন ৮ ঘন্টার জানালার মধ্যে সব খাবার খাওয়া) ওজন কমানোর জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। যাইহোক, নতুন গবেষণা দেখাচ্ছে যে এটি হার্টের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
ন্যাশনাল হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন এক্সামিনেশন সার্ভে (NHANES) এবং ন্যাশনাল ডেথ ইনডেক্স ডাটাবেস থেকে তথ্য বিশ্লেষণ করে গবেষকরা দেখিয়েছেন যে যারা দিনের সমস্ত খাবার ৮ ঘন্টার কম সময়ের মধ্যে খান, তাদের কার্ডিওভাসকুলার রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি ৯১% বেশি।
এমনকি হৃদরোগ বা ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যেও এই বর্ধিত ঝুঁকি দেখা যায়। যারা আগে থেকেই কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত, তাদের ক্ষেত্রে ৮ থেকে ১০ ঘন্টার খাওয়ার সময়সীমাও হার্ট ডিজিজ বা স্ট্রোকে মৃত্যুর ঝুঁকি ৬৬% বাড়ায়।
রাতে কম করে খাওয়া: কীভাবে শুরু করবেন?
আপনি যদি রাতে দেরি করে খাওয়ার অভ্যাস পরিবর্তন করতে চান, এখানে কিছু টিপস রয়েছে:
-
ডিনার আগে সময়ে প্ল্যান করুন: দিনের শেষে ডিনার রাত ৮টার আগে শেষ করার লক্ষ্য রাখুন।
-
ঘুমানোর আগে অন্তত ২ ঘন্টা খাবার এড়িয়ে চলুন: এটি শরীরকে খাবার হজম করার জন্য যথেষ্ট সময় দেয় এবং ঘুমের মান উন্নত করে।
-
সকালের নাস্তা নিয়মিত খান: সকাল ৮টার আগে একটি সুষম ব্রেকফাস্ট খাওয়ার চেষ্টা করুন।
-
সারাদিন সুষম খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন: এটি রাতে অতিরিক্ত খাওয়া প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
-
রাতের স্ন্যাকিং কমান: রাতে লবণযুক্ত বা মিষ্টি স্ন্যাকস খাওয়া এড়িয়ে চলুন।
-
রাতের ফাস্টিং পিরিয়ড বাড়ান: দিনের শেষ খাবার আগে খেয়ে এবং পরের দিনের প্রথম খাবার নিয়মিত সময়ে খেয়ে রাতের ফাস্টিং সময় বাড়ান।
বিভিন্ন গবেষণা থেকে একটি স্পষ্ট বার্তা উঠে আসে: রাত ১০টার পর খাবার খাওয়া, বিশেষ করে ভারী খাবার, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ায়। আমাদের খাওয়ার সময় আমাদের শরীরের জৈবিক ঘড়িকে প্রভাবিত করে, যা রক্তচাপ, মেটাবলিজম এবং হরমোন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।সর্বোত্তম অভ্যাস হল সকাল ৮টার আগে প্রথম খাবার খাওয়া, রাত ৮টার আগে শেষ খাবার শেষ করা, এবং ঘুমানোর আগে কমপক্ষে ২ ঘন্টা খাবার এড়িয়ে চলা। এই সাধারণ পরিবর্তনগুলি আপনার কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে পারে।
মনে রাখবেন, প্রত্যেকের শরীর আলাদা, তাই আপনার যদি কোনো বিদ্যমান স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে বা আপনি ওজন কমাতে টাইম-রেস্ট্রিক্টেড খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করছেন, একজন স্বাস্থ্যসেবা পেশাদারের সাথে পরামর্শ করা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার হার্টের স্বাস্থ্য রক্ষা করার জন্য সঠিক খাওয়ার সময় আপনার খাদ্যের গুণমান উন্নত করার মতোই গুরুত্বপূর্ণ।