মুম্বাইয়ে NCP নেতা বাবা সিদ্দিকীর হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে কুখ্যাত গ্যাংস্টার Lawrence Bishnoi-এর গ্যাং। শনিবার রাতে মুম্বাইয়ের বান্দ্রা এলাকায় তাঁর পুত্র জিশান সিদ্দিকীর অফিসের বাইরে তিনজন দুষ্কৃতকারী বাবা সিদ্দিকীকে গুলি করে হত্যা করে। এই ঘটনার পর একটি Facebook পোস্টে Lawrence Bishnoi গ্যাংয়ের একজন সদস্য এই হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে।
পোস্টে বলা হয়েছে যে বলিউড অভিনেতা সলমান খান এবং আন্ডারওয়ার্ল্ড ডন দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে বাবা সিদ্দিকীর যোগাযোগের কারণেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। পোস্টে লেখা হয়েছে, “সলমান খান, আমরা এই যুদ্ধ চাইনি কিন্তু তুমি আমাদের ভাইকে প্রাণ হারাতে বাধ্য করেছ। আজ বাবা সিদ্দিকীর সততার পুকুর শুকিয়ে গেছে, একসময় সে দাউদের সঙ্গে MCOCA-এর অধীনে ছিল। তার মৃত্যুর কারণ হল বলিউড, রাজনীতি এবং সম্পত্তি লেনদেনে দাউদ এবং অনুজ থাপানের সঙ্গে তার যোগাযোগ।”
RG Kar Doctor Rape-Murder Case: বলিউড তারকাদের প্রতিবাদ: “নারীরা কোথাও নিরাপদ নয়”
এই হত্যাকাণ্ডের পিছনে Lawrence Bishnoi গ্যাংয়ের সম্পৃক্ততার বিষয়টি মুম্বাই পুলিশ যাচাই করছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত দুইজন অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হল হরিয়ানার কর্নেল সিং এবং উত্তরপ্রদেশের ধর্মরাজ কাশ্যপ। জিজ্ঞাসাবাদের সময় তারা Lawrence Bishnoi গ্যাংয়ের সদস্য হওয়ার কথা স্বীকার করেছে। তৃতীয় অভিযুক্ত এখনও পলাতক রয়েছে।
বাবা সিদ্দিকী ছিলেন NCP-র একজন প্রভাবশালী নেতা এবং প্রাক্তন মন্ত্রী। তিনি তিনবার বান্দ্রা (পশ্চিম) আসন থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হয়েছিলেন। দীর্ঘদিন কংগ্রেসে থাকার পর এই বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি অজিত পাওয়ারের নেতৃত্বাধীন NCP-তে যোগ দেন। তাঁর Y-category সুরক্ষা ছিল।
Lawrence Bishnoi গ্যাংয়ের সঙ্গে সলমান খানের শত্রুতার সূত্রপাত হয় ১৯৯৮ সালে কৃষ্ণসার হরিণ শিকারের ঘটনা থেকে। বিষ্ণোই সম্প্রদায়ের কাছে কৃষ্ণসার হরিণ পবিত্র প্রাণী। সেই ঘটনায় সলমান খান অভিযুক্ত হন। এরপর থেকেই Lawrence Bishnoi গ্যাং সলমান খানকে হুমকি দিয়ে আসছে। ২০২২ সালে পাঞ্জাবি গায়ক সিধু মুসেওয়ালার হত্যাকাণ্ডের পর সলমান খান এবং তাঁর পিতাকে হুমকি দেওয়া হয়। এরপর থেকে সলমান খানের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে এবং তিনি Y+ category সুরক্ষা পাচ্ছেন।
বাবা সিদ্দিকীর হত্যাকাণ্ড মহারাষ্ট্রের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিরোধী দলগুলি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিসের পদত্যাগ দাবি করেছে। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শরদ পাওয়ার এবং কংগ্রেস নেতা বিজয় ওয়াদেত্তিওয়ার রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এই হত্যাকাণ্ড মুম্বাইয়ের অপরাধ জগতের একটি ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেছে। গত এক বছরে মুম্বাইয়ে অন্তত ছয়টি এই ধরনের হামলার ঘটনা ঘটেছে। ৫ অক্টোবর NCP (অজিত পাওয়ার গোষ্ঠী) নেতা সচিন কুর্নিকে তাঁর বাড়ির কাছে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। ১৪ এপ্রিল Lawrence Bishnoi গ্যাংয়ের লোকেরা সলমান খানের বান্দ্রার বাড়ির বাইরে গুলি চালায়। ৭ এপ্রিল আন্তোপ হিল এলাকায় আর্থিক বিবাদ নিয়ে গুলি চালানোর ঘটনা ঘটে। ৮ ফেব্রুয়ারি শিবসেনা (UBT) নেতা অভিষেক ঘোষালকরকে দহিসর এলাকায় গুলি করে হত্যা করা হয়। ২ ফেব্রুয়ারি হিল লাইন থানার ভিতরে BJP বিধায়ক গণপত গায়কোয়াড় শিন্দে সেনার এক কর্মীকে গুলি করেন। গত ডিসেম্বরে স্থানীয় গ্যাংস্টার সুমিত ইয়েরুনকরকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
ভোলে বাবার ‘চরণধূলি’তে রক্তের দাগ! হাথরাসে ১২৩ জনের মৃত্যুর পর কী হবে স্বঘোষিত ধর্মগুরুর?
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই হত্যাকাণ্ড মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করতে পারে। প্রায় তিন দশক পর মুম্বাইয়ে এই প্রথম কোনো উচ্চ পদস্থ রাজনৈতিক নেতাকে হত্যা করা হল। এটি নির্বাচন-মুখী মহারাষ্ট্রে আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্দে বলেছেন, “আমরা নিশ্চিত করব যে সমস্ত দোষীকে গ্রেপ্তার করা হবে।” তিনি একটি বিস্তৃত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। পুলিশ বিভিন্ন দিক থেকে তদন্ত চালাচ্ছে, যার মধ্যে রয়েছে সুপারি হত্যা, ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা বস্তি পুনর্বাসন প্রকল্প নিয়ে হুমকির সম্ভাবনা।
বাবা সিদ্দিকীর হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করে যে মুম্বাইয়ে অপরাধ জগতের প্রভাব এখনও কমেনি। Lawrence Bishnoi গ্যাংয়ের মতো সংগঠিত অপরাধ চক্রগুলি এখনও সক্রিয় রয়েছে। এই ঘটনা মহারাষ্ট্র সরকারের কাছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগামী দিনগুলিতে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্ক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।