লেবাননে পেজার বিস্ফোরণে মৃত্যু বাড়ছে, ইজরায়েলের বিরুদ্ধে হিজবুল্লাহর প্রতিশোধের হুমকি

লেবাননে পেজার ও ওয়াকি-টকি বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ জনে, আহত হয়েছেন প্রায় ৪০০০ জন। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪) দ্বিতীয় দফায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, যাতে আরও ৯ জন…

Avatar

 

লেবাননে পেজার ও ওয়াকি-টকি বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১ জনে, আহত হয়েছেন প্রায় ৪০০০ জন। বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪) দ্বিতীয় দফায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, যাতে আরও ৯ জন নিহত হন। এর আগে মঙ্গলবার প্রথম দফায় পেজার বিস্ফোরণে ১২ জন নিহত হন। হিজবুল্লাহ এই হামলার জন্য ইজরায়েলকে দায়ী করেছে এবং প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছে।

লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বুধবারের বিস্ফোরণে নিহতদের মধ্যে একজন শিশুও রয়েছে। আহতদের মধ্যে অনেকেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক। বেশিরভাগ আহতের মুখ, হাত ও পেটে আঘাত লেগেছে। হাসপাতালগুলোতে রক্তদানের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

হিজবুল্লাহর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এটি তাদের জন্য সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা বিপর্যয়। তিনি বলেন, “এই হামলা আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। আমরা এর জন্য ইজরায়েলকে দায়ী করছি এবং এর উপযুক্ত জবাব দেব।”

লেবাননের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদাল্লাহ বু হাবিব এই ঘটনাকে “লেবাননের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তার উপর স্পষ্ট আক্রমণ” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন যে এটি “একটি বৃহত্তর যুদ্ধের ইঙ্গিত দিতে পারে”।

ফোনের ব্যাটারি বিস্ফোরণ: কারণ ও প্রতিরোধের উপায়

ইজরায়েল এই হামলার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে সিএনএন-এর এক সূত্র জানিয়েছে, এই হামলা ইজরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ ও সেনাবাহিনীর যৌথ অপারেশন ছিল।

আল জাজিরার সাংবাদিক জেইনা খোদর জানিয়েছেন, “এটি একটি বড় নিরাপত্তা ফাঁক। মনে হচ্ছে হিজবুল্লাহর যোগাযোগ ব্যবস্থা হ্যাক করা হয়েছে। লেবানন জুড়ে আহত লোকজনের ছবি দেখা যাচ্ছে, হাসপাতালগুলো রক্তদানের আহ্বান জানাচ্ছে।”

সামরিক বিশ্লেষক ইলিজাহ ম্যাগনিয়ার মতে, হিজবুল্লাহ ইজরায়েলি অনুপ্রবেশ থেকে রক্ষা পেতে পেজার ব্যবহার করে। তিনি বলেন, “এই ডিভাইসগুলো হিজবুল্লাহ সদস্যদের দেওয়ার আগেই সম্ভবত কম্প্রোমাইজ করা হয়েছিল। দূর থেকে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য কোনো তৃতীয় পক্ষ জড়িত থাকতে হবে।”

এই হামলার আগের দিন ইজরায়েল তার যুদ্ধের লক্ষ্য সম্প্রসারণ করেছে। এখন লেবানন সীমান্তের কাছে থেকে পালিয়ে যাওয়া ইজরায়েলিদের ফিরিয়ে আনাও তাদের লক্ষ্যের অন্তর্ভুক্ত। গত এক বছর ধরে ইজরায়েল ও হিজবুল্লাহর মধ্যে সীমান্তে লড়াই চলছে, যাতে উভয় পক্ষের হাজার হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, “রাজনৈতিক-নিরাপত্তা ক্যাবিনেট যুদ্ধের লক্ষ্য সংশোধন করেছে, যাতে এখন উত্তরাঞ্চলের বাসিন্দাদের নিরাপদে বাড়ি ফেরানো অন্তর্ভুক্ত।”

ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট সোমবার বলেছিলেন, উত্তর ইজরায়েলের সম্প্রদায়গুলোকে ফিরিয়ে আনার জন্য “সামরিক পদক্ষেপই একমাত্র বিকল্প”।

বাংলাদেশের কোটা আন্দোলন: পুলিশ-প্রশাসনের ক্ষয়ক্ষতির অজানা কাহিনী

এদিকে সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান বুধবার বলেছেন, প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া সৌদি আরব ইজরায়েলকে স্বীকৃতি দেবে না। তিনি “ইজরায়েলি দখলদারদের অপরাধ” নিন্দা করেছেন এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে স্বাধীন প্যালেস্টাইন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস লেবাননে পরিস্থিতি উত্তেজনা বৃদ্ধির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বেসামরিক লক্ষ্যবস্তু রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন এবং আরও হিংসা প্রতিরোধের জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনায় জড়িত নয় এবং কে দায়ী তা জানে না। তিনি বলেন, “আমরা এই ঘটনা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করছি। আমি আপনাকে নিশ্চিত করতে পারি যে যুক্তরাষ্ট্র এতে জড়িত ছিল না এবং এ সম্পর্কে আগে থেকে কিছু জানত না।”

এই ঘটনার পর লেবাননের রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, তারা ৩০টিরও বেশি অ্যাম্বুলেন্স মোতায়েন করেছে এবং আরও ৫০টি অ্যাম্বুলেন্স স্ট্যান্ডবাই রয়েছে। দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পেজার বা ওয়াকি-টকি রয়েছে এমন নাগরিকদের সেগুলো ফেলে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।

এই ঘটনা লেবানন ও ইজরায়েলের মধ্যে দীর্ঘদিনের উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, এটি আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো পক্ষই খোলাখুলি যুদ্ধের ঘোষণা দেয়নি।

পরিস্থিতি এখনও অস্থির এবং পরিবর্তনশীল। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উভয় পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে। তবে হিজবুল্লাহর প্রতিশোধের হুমকি এবং ইজরায়েলের যুদ্ধের লক্ষ্য সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে।

এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক ও সামরিক পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। লেবানন ও ইজরায়েলের মধ্যে সংঘাত বৃদ্ধি পেলে তা সারা অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন উদ্বিগ্ন দৃষ্টিতে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের আশা করছে।

 

About Author
Avatar

আন্তর্জাতিক খবরের সর্বশেষ আপডেট, গভীর বিশ্লেষণ এবং বিশ্বের প্রভাবশালী ঘটনাবলীর বিস্তারিত প্রতিবেদন পেতে আমাদের International Desk-এ আসুন। বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তের গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ, রাজনৈতিক গতিবিধি, অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং সাংস্কৃতিক ঘটনাবলী সম্পর্কে জানতে এই পাতাটি আপনার একমাত্র গন্তব্য।