পশ্চিমবঙ্গে আগামী ১৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিতব্য ৬টি বিধানসভা আসনের উপনির্বাচনে বামফ্রন্ট একাই লড়াই করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট না করেই ৫টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বামফ্রন্ট। এর মধ্যে নৈহাটি আসনটি সিপিআই(এমএল) লিবারেশনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বামফ্রন্টের এই সিদ্ধান্তে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে দুই দলের জোট কোনও ফল দেয়নি। বাম-কংগ্রেস জোট একটিও আসন জিততে পারেনি পশ্চিমবঙ্গে। এর আগে ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও একই অবস্থা হয়েছিল।
– সীতাই (তপসিলি জাতি): অরুণ কুমার বর্মা (ফরওয়ার্ড ব্লক)
– মাদারিহাট (তপসিলি উপজাতি): পদম ওরাঁও (আরএসপি)
– মেদিনীপুর: মণি কুন্তল খামরুই (সিপিআই)
– তালডাঙ্গা: দেবকান্তি মাহান্তি (সিপিআইএম)
– নৈহাটি: দেবজ্যোতি মজুমদার (সিপিআই-এমএল লিবারেশন)
হারোয়া আসনটি আইএসএফকে ছেড়ে দেওয়া হতে পারে বলে জানা গেছে।
এই সিদ্ধান্তের পিছনে কারণ হিসেবে বামফ্রন্ট নেতারা বলছেন, তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির বিরুদ্ধে একযোগে লড়াই করার জন্য বাম ও কংগ্রেস জোট গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু বারবার নির্বাচনী পরাজয়ের পর এই জোটের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক ও প্রাক্তন লোকসভা সাংসদ মহম্মদ সেলিম বলেছেন, বাম-কংগ্রেস জোট একটি “সুচিন্তিত” সিদ্ধান্ত যা সমস্ত বাম শরিকদের সঙ্গে আলোচনার পর নেওয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে বাম শারীরিক, মতাদর্শগত ও রাজনৈতিক আক্রমণের শিকার। তৃণমূল আমাদের কর্মীদের কাজ করতে দেয় না, আবার বিজেপির সঙ্গে আমাদের মতাদর্শগত লড়াই চলছে। বাম ও কংগ্রেস একসঙ্গে এই প্রতিপক্ষদের মোকাবিলা করছে।”
তবে অল ইন্ডিয়া ফরওয়ার্ড ব্লকের রাজ্য সম্পাদক নারেন চ্যাটার্জি সম্প্রতি মন্তব্য করেছিলেন যে বাম-কংগ্রেস জোট কাজ করেনি এবং ভবিষ্যতে বামপন্থীদের একাই লড়াই করা উচিত। এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সেলিম বলেন, “আমরা যদি সফল হতাম, তাহলে অনেকে আমাদের অভিনন্দন জানাতে লাইন দিত। কিন্তু ব্যর্থতা অনেককে প্রশ্ন করার সুযোগ দেয়।”
অন্যদিকে, কংগ্রেস সূত্রে জানা গেছে, দল ইতিমধ্যে ৬টি আসনের জন্য প্রার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করে হাইকমান্ডের কাছে পাঠিয়েছে। এতে স্পষ্ট যে কংগ্রেসও একা লড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাম-কংগ্রেস জোট ভেঙে যাওয়ায় বিরোধী ভোট ভাগ হয়ে যাবে, যা ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল কংগ্রেসকে লাভবান করতে পা।
উল্লেখ্য, এই ৬টি আসনে উপনির্বাচন হচ্ছে কারণ এখানকার নির্বাচিত বিধায়করা ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়েছেন। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এই ৬টি আসনের মধ্যে ৫টিতে তৃণমূল কংগ্রেস জয়ী হয়েছিল, শুধুমাত্র মাদারিহাটে বিজেপি জিতেছিল।
তৃণমূল কংগ্রেস ইতিমধ্যে ৬টি আসনের জন্য প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছে এবং প্রচার শুরু করেছে। দলের লক্ষ্য ৬টি আসনই জয় করা। অন্যদিকে বিজেপির কাছে চ্যালেঞ্জ হল মাদারিহাট আসনটি ধরে রাখা, কারণ ২০২১ সালের পর থেকে পশ্চিমবঙ্গে অনুষ্ঠিত কোনও উপনির্বাচনে দলটি জয়ী হতে পারেনি।
তৃণমূল কংগ্রেস সূত্রে জানা গেছে, দল এবার নতুন মুখদের টিকিট দিতে চায়। তবে কোনও তারকা প্রার্থী দেওয়া হবে না। দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ইতিমধ্যে প্রতিটি কেন্দ্র থেকে তিনটি করে নাম চেয়ে নিয়েছেন। এই তালিকা দলনেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে।
নৈহাটি কেন্দ্রে তৃণমূল শহর সভাপতি সনৎ দে-এর নাম শীর্ষে রয়েছে। তবে রাজ্য তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্যের নামও শোনা যাচ্ছে।
মেদিনীপুর কেন্দ্রে দলীয় সংগঠন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি সুজয় হাজরাকে প্রার্থী করতে চায়। তালডাঙ্গা কেন্দ্রে বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি অনসূয়া রায়ের নাম বিবেচনা করা হচ্ছে।
হারোয়া কেন্দ্রে প্রয়াত সাংসদ হাজি নুরুল ইসলামের ছেলে রবিউল ইসলামকে প্রার্থী করা হতে পারে।
উত্তরবঙ্গের সীতাই ও মাদারিহাট কেন্দ্রেও তৃণমূল নতুন মুখ খুঁজছে।
এই উপনির্বাচনের ফলাফল ২৩ নভেম্বর ঘোষণা করা হবে।
বাম-কংগ্রেস জোট ভেঙে যাওয়ায় রাজ্যের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে। তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে দ্বিমুখী লড়াই হলে তৃতীয় শক্তি হিসেবে বাম ও কংগ্রেস কতটা প্রভাব ফেলতে পারে তা দেখার বিষয়। তবে বারবার নির্বাচনী পরাজয়ের পর বাম ও কংগ্রেসের কাছে এই উপনির্বাচন একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাদের ভোট শক্তি কতটা রয়েছে তা এই নির্বাচনে পরিষ্কার হয়ে যাবে।
মন্তব্য করুন