Is live-in relationship right or wrong? : বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে ‘লিভ-ইন রিলেশনশিপ’ একটি প্রচলিত শব্দ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে শহরাঞ্চলে, তরুণ-তরুণীরা বিয়ের আগে একসাথে থাকার সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত কি ঠিক নাকি ভুল? আমাদের সমাজে যেখানে বিবাহ প্রথা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ, সেখানে লিভ-ইন রিলেশনশিপ কতটা যৌক্তিক? আজকের এই ব্লগে আমরা জানবো লিভ-ইন সম্পর্কের সুবিধা-অসুবিধা এবং এটি আপনার জন্য উপযুক্ত কিনা৷
লিভ-ইন রিলেশনশিপ: সমাজের দৃষ্টিতে তাকালে
লিভ-ইন সম্পর্ক হল এমন একটি সম্পর্ক যেখানে দুজন মানুষ বিবাহিত না হয়েও স্বামী-স্ত্রীর মতো একসঙ্গে থাকে। ভারতীয় সমাজের প্রেক্ষাপটে, বিয়ের আগে কারো সাথে বসবাস করা এখনও একটি সামাজিক টাবু হিসেবে দেখা হয়। এটি বিশেষত নারীদের ক্ষেত্রে সমস্যাজনক, কারণ পরম্পরাগত দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে, একজন নারী যদি বিয়ের আগে পুরুষের সাথে শারীরিক সম্পর্ক রাখে, তবে তাকে ‘অপবিত্র’ হিসেবে দেখা হয়।
তবে আধুনিক তরুণ প্রজন্ম সমাজের এই রক্ষণশীল মতবাদের সাথে একমত নয়। তারা মনে করে লিভ-ইন রিলেশনশিপ তাদেরকে স্বাধীনতা দেয় এবং বিবাহ প্রতিষ্ঠানের বাধা ছাড়াই দাম্পত্য জীবনের অনুভূতি উপভোগ করতে সাহায্য করে।
লিভ-ইন রিলেশনশিপের সুবিধাগুলি
একে অপরকে গভীরভাবে চেনার সুযোগ
লিভ-ইন সম্পর্কের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল আপনি আপনার সঙ্গীকে আরও ভালোভাবে চিনতে পারেন। শুধু ডেটিং করলে যা জানা যায় না, একসাথে বাস করলে সেই সব অভ্যাস, স্বভাব এবং জীবনযাত্রার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারেন।
“বিয়ের আগে লিভ ইন করলে একে অপরকে বোঝাও অনেক সহজ হয়ে যায়। এতে আপনার অভ্যাসগুলোও পার্টনার আগে থেকে জেনে যাবেন। ফলে শ্বশুর বাড়ির লোকজন আপনাকে কোনও কারণে ভুল বুঝলে পার্টনার আপনাকে সাপোর্ট করবেন।”
মানসিক নিরাপত্তা ও সহযোগিতা
একসাথে বসবাস করলে মানসিক নিরাপত্তা ও সহযোগিতার অনুভূতি গড়ে ওঠে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ3। আপনারা যখন একসাথে থাকেন, গৃহস্থালির কাজ ও আর্থিক দায়িত্ব ভাগ করে নেন, যা চাপ কমায় এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনে সাহায্য করে।
বিয়ের আগে সম্পর্কের পরীক্ষা
লিভ-ইন সম্পর্ক আপনাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে যে আপনি আপনার সঙ্গীর সাথে সারা জীবন কাটাতে পারবেন কি না। বলিউড অভিনেত্রী জীনত আমান বলেছেন, “বিয়ে করার আগে একসাথে বাস করুন! আমার কাছে যুক্তিসঙ্গত মনে হয় যে দুজন লোক তাদের পরিবার এবং সরকারকে তাদের সম্পর্কে জড়িত করার আগে, তারা প্রথমে তাদের সম্পর্ককে চূড়ান্ত পরীক্ষায় ফেলুক।”
যোগাযোগ ও সংঘাত সমাধানের দক্ষতা বাড়ায়
একসাথে বাস করলে যোগাযোগ এবং সংঘাত সমাধানের দক্ষতা উন্নত হতে পারে। আপনি আপনার সঙ্গীকে একজন সম্পূর্ণ ব্যক্তি হিসাবে দেখতে শেখেন, আদর্শায়িত সংস্করণের বাইরে।
লিভ-ইন রিলেশনশিপের অসুবিধা এবং চ্যালেঞ্জ
সামাজিক অসম্মতি ও সমালোচনা
যদিও আধুনিক সমাজে পরিবর্তন আসছে, তবুও লিভ-ইন সম্পর্কে থাকা ব্যক্তিদের সামাজিক সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয়। “পাশের বাড়ির ছেলে বা মেয়েটা লিভ ইন করে! ব্যস, আর পায় কে? তাঁকে নিয়ে হাজারও সমালোচনা শুরু। সমাজ এখনও ততটা সহজ ভাবে মেনে নিতে পারেনি এই সম্পর্ককে।”
অস্থিরতা ও অনিরাপত্তা
লিভ-ইন সম্পর্কে, কোনও আইনি বন্ধন না থাকায় সম্পর্কের স্থায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন থাকে। “স্বাধীনতা ও অঙ্গীকারের অভাবের কারণে, অস্থিরতা ও অনিরাপত্তার সম্ভাবনা বেশি থাকে। আপনি যদি বিবাহিত ও আইনি বন্ধনে আবদ্ধ না হন, তবে আপনি এটি নিয়ে নিশ্চিত হতে পারেন না।”
মানসিক ও আইনি জটিলতা
লিভ-ইন সম্পর্কে অনেক সময় মানুষ আবেগগতভাবে এমনভাবে জড়িয়ে পড়ে যে, সম্পর্ক শেষ হলে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, যা বছরের পর বছর তাদের পীড়া দেয়। এছাড়াও, আইনি দিক থেকেও জটিলতা থাকে।
আর্থিক জটিলতা
লিভ-ইন সম্পর্কে আর্থিক সম্পদ ও দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়া হয়, কিন্তু আইনি সুরক্ষা ছাড়া, সম্পর্ক ভেঙে গেলে এটি সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।
গবেষণা কী বলে?
কিছু গবেষণা দেখায় যে বিয়ের আগে একসাথে বাস করা দম্পতিরা উচ্চতর সন্তুষ্টি, বোঝাপড়া এবং স্থিরতার কথা জানায়। তবে অন্যান্য গবেষণায় দেখা যায় যে এটি ‘কোহ্যাবিটেশন ইনার্শিয়া’ নামক একটি অবস্থার দিকে নিয়ে যেতে পারে, যার অর্থ দম্পতিরা সামঞ্জস্যতার পরিবর্তে সুবিধার কারণে বিয়ে করে।
লিভ-ইন রিলেশনশিপ এবং বিবাহ: তুলনামূলক বিশ্লেষণ
বিবাহ: স্থিরতা ও প্রতিশ্রুতি
বিবাহ হল একটি আইনি ও সামাজিকভাবে স্বীকৃত সম্পর্ক যা স্থিরতা এবং দীর্ঘমেয়াদি প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। ভারতীয় সমাজে, বিবাহকে স্বর্গে নির্ধারিত বলে মনে করা হয় এবং এই ধারণা অনেক লোকের মনে দৃঢ়ভাবে রয়েছে। এই বিশ্বাসের কারণে, বিবাহিত দম্পতিরা তাদের সম্পর্ক দীর্ঘস্থায়ী করতে কঠোর পরিশ্রম করে, এমনকি কখনও কখনও মৃত্যু পর্যন্ত।
লিভ-ইন: স্বাধীনতা ও লচকতা
অন্যদিকে, লিভ-ইন সম্পর্ক আপনাকে আরও বেশি স্বাধীনতা ও লচকতা প্রদান করে। যদি আপনি মনে করেন যে জিনিসগুলি কাজ করছে না, তবে আপনি চলে যেতে বা থাকতে পারেন1। তবে, এই স্বাধীনতার কারণে সম্পর্কে অস্থিরতা ও অনিরাপত্তা থাকতে পারে।
কোন পথ বেছে নেবেন?
লিভ-ইন রিলেশনশিপ সঠিক কি ভুল, এটা সম্পূর্ণভাবে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। আপনার মূল্যবোধ, বিশ্বাস, জীবনযাত্রার লক্ষ্য এবং আপনার সঙ্গীর সাথে যোগাযোগের উপর নির্ভর করে এই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
বিবেচনা করার বিষয়গুলি:
-
আপনার সাথে সম্পর্কের মূল্যবোধ ও মতামত কী? দুজনের মধ্যে স্পষ্ট যোগাযোগ থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
-
আপনি কি আপনার পরিবারের সমর্থন পাবেন? পারিবারিক মতামত অনেকের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
-
আপনি কি সামাজিক সমালোচনা সামলাতে প্রস্তুত? সমাজের অনেক অংশে এটি এখনও সমালোচিত।
-
দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য কি? যদি আপনার উদ্দেশ্য হয় ভবিষ্যতে বিয়ে করা, তবে এটি স্পষ্ট করা উচিত।
-
সম্পর্কে আর্থিক দায়িত্ব কীভাবে ভাগ করা হবে? এটি স্পষ্ট করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
মনোবিজ্ঞানী ডঃ চন্দ্রি টুগনাইট বলেন, “লিভ-ইন সম্পর্কে থাকায় মানসিক নিরাপত্তা ও সহযোগিতার অনুভূতি গড়ে ওঠে, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।”
আরতি চাওলা মনে করেন যে লিভ-ইন সম্পর্ক দম্পতিদের একে অপরকে আরও গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করে। “এটি তাদের একে অপরের সঙ্গে বাস করার সূক্ষ্মতা দেখতে সাহায্য করে – শুধু রুমমেট হিসাবে নয়, বরং পরবর্তী ৪০-৫০ বছরের জন্য সঙ্গী হিসাবে।”
লিভ-ইন রিলেশনশিপ আপনার জন্য সঠিক কি না, তা নির্ভর করে আপনার ব্যক্তিগত মূল্যবোধ, বিশ্বাস এবং জীবনের লক্ষ্যের উপর। যদি আপনি আপনার সঙ্গীকে বিয়ের আগে আরও ভালভাবে চিনতে চান, একসাথে থাকার জীবনের বাস্তবতা সম্পর্কে জানতে চান, এবং সামাজিক সমালোচনা মোকাবেলা করতে প্রস্তুত থাকেন, তবে লিভ-ইন সম্পর্ক আপনার জন্য একটি ভাল বিকল্প হতে পারে।
তবে, যদি আপনি অনুভব করেন যে আপনার মূল্যবোধ এবং বিশ্বাস এই ধরনের সম্পর্কের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, বা যদি পারিবারিক এবং সামাজিক সমর্থন আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়, তবে হয়ত বিবাহ আপনার জন্য উপযুক্ত পথ হতে পারে।সর্বোপরি, দুজনের মধ্যে স্পষ্ট এবং ঈমানদার যোগাযোগ, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং সম্পর্কের প্রতি প্রতিশ্রুতি – এগুলিই সফল সম্পর্কের চাবিকাঠি, সেটি লিভ-ইন হোক বা বিবাহ।
আপনার জীবন, আপনার সিদ্ধান্ত। সেই সিদ্ধান্ত যেন আপনার সুখ এবং আনন্দ নিয়ে আসে, তাই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ভালো করে ভেবে দেখুন। মনে রাখবেন, সফল সম্পর্ক নির্ভর করে বোঝাপড়া, বিশ্বাস এবং পারস্পরিক সম্মানের উপর, সেটি যে সম্পর্কই হোক না কেন।
