Impact of masks on skin reported effects: কোভিড-১৯ মহামারীর পর থেকে মাস্ক পরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে। কিন্তু দীর্ঘ সময় মাস্ক পরার ফলে অনেকেরই ত্বকের নানা সমস্যা দেখা দিচ্ছে। গবেষণায় দেখা গেছে, মাস্ক পরার ফলে ৫৪% মানুষের ত্বকে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় মুখে ব্রণ (৪০%), মুখের এক্জিমা (১৮%) এবং চুলকানি (১৬%)। তাই মাস্ক পরার পাশাপাশি ত্বকের যত্ন নেওয়াও জরুরি।
মাস্ক পরার ফলে ত্বকের কী কী সমস্যা হতে পারে?
দীর্ঘ সময় মাস্ক পরার ফলে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে:
ব্রণ বা Acne
মাস্কের নিচে আর্দ্র ও গরম পরিবেশ তৈরি হয়, যা ব্রণের সৃষ্টি করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৫৩.১% মানুষের মাস্ক পরার ফলে মুখে ব্রণ হয়েছে। এর মধ্যে ১১.১% মানুষের ১-৩ ঘণ্টা মাস্ক পরার পরেই ব্রণ হয়েছে, আর ৪৭.৮% মানুষের ৩ ঘণ্টার বেশি সময় মাস্ক পরার পর ব্রণ হয়েছে।
ত্বকের শুষ্কতা ও জ্বালা-পোড়া
মাস্কের নিচে ঘাম জমে থাকার ফলে ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা নষ্ট হয়ে যায়। এতে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় এবং জ্বালা-পোড়া করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৬৮.৬% মানুষের মাস্ক পরার ফলে ত্বকের শুষ্কতা দেখা দিয়েছে।
ত্বকে লালচে ভাব বা Erythema
মাস্কের ঘর্ষণে ত্বকে লালচে ভাব দেখা দিতে পারে। একটি গবেষণায় ৬০.৪% মানুষের মাস্ক পরার ফলে ত্বকে লালচে ভাব দেখা দিয়েছে।
ত্বকের ক্ষত
টাইট মাস্ক পরলে নাকের ব্রিজ এবং গালের হাড়ের উপর চাপ পড়ে, যা ত্বকের ক্ষতের কারণ হতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৫১% মানুষের মাস্ক পরার ফলে ত্বকের ক্ষত হয়েছে।
পায়ে সোনার গয়না পরা নিষিদ্ধ কেন? জেনে নিন এর পিছনের অজানা রহস্য!
মাথাব্যথা
দীর্ঘ সময় মাস্ক পরার ফলে মাথাব্যথা হতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৭১.৪% মানুষের মাস্ক পরার ফলে মাথাব্যথা হয়েছে। এর মধ্যে ১৫.২% মানুষের ১ ঘণ্টার মধ্যেই মাথাব্যথা শুরু হয়েছে, ৩০.৬% মানুষের ১ ঘণ্টা পর, এবং ২৯.৭% মানুষের ৩ ঘণ্টা বা তার বেশি সময় পর মাথাব্যথা শুরু হয়েছে।
মাস্ক পরার ফলে ত্বকের ক্ষতি কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়?
মাস্ক পরার ফলে ত্বকের ক্ষতি প্রতিরোধ করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
১. নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করুন
প্রতিদিন মৃদু ও সুগন্ধহীন ক্লিনজার দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এতে ত্বকের ময়লা ও তেল দূর হবে, যা ব্রণের ঝুঁকি কমাবে।
২. ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন
মাস্ক পরার আগে ও পরে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের আর্দ্রতা বজায় থাকবে এবং মাস্কের ঘর্ষণ থেকে ত্বক রক্ষা পাবে। আপনার ত্বকের ধরন অনুযায়ী ময়েশ্চারাইজার বেছে নিন:
- তৈলাক্ত ত্বকের জন্য: জেল ময়েশ্চারাইজার
- সাধারণ বা মিশ্র ত্বকের জন্য: লোশন
- শুষ্ক ত্বকের জন্য: ক্রিম
৩. ঠোঁটে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগান
মাস্ক পরার আগে ঠোঁটে পেট্রোলিয়াম জেলি লাগালে ঠোঁট শুষ্ক হওয়া থেকে রক্ষা পাবে।
৪. মেকআপ এড়িয়ে চলুন
মাস্ক পরার সময় মেকআপ এড়িয়ে চলুন। মেকআপের কারণে ত্বকের রোমকূপ বন্ধ হয়ে যেতে পারে, যা ব্রণের কারণ হতে পারে।
৫. সঠিক মাপের মাস্ক পরুন
আপনার মুখের আকারের সাথে মানানসই মাস্ক পরুন। খুব টাইট বা ঢিলে মাস্ক পরলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।
৬. প্রতি ৪ ঘণ্টায় ১৫ মিনিট মাস্ক খুলে রাখুন
প্রতি ৪ ঘণ্টায় ১৫ মিনিট মাস্ক খুলে রাখলে ত্বক শ্বাস নিতে পারবে এবং ত্বকের ক্ষতি কম হবে।
মাস্ক পরার ফলে ত্বকের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব
দীর্ঘ সময় মাস্ক পরার ফলে ত্বকের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব পড়তে পারে। একটি গবেষণায় ৬ মাস ধরে মাস্ক পরার ফলে ত্বকের উপর নিম্নলিখিত প্রভাব দেখা গেছে:
- ত্বকের মধ্য দিয়ে পানি বেরিয়ে যাওয়ার হার (TEWL) বেড়েছে
- ত্বকের আর্দ্রতা কমেছে
- ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমেছে
- ত্বকের রোমকূপের আকার বেড়েছে
- ত্বকের কেরাটিনের পরিমাণ বেড়েছে
- ত্বকের রং পরিবর্তন হয়েছে
এই পরিবর্তনগুলি মাস্ক পরা এলাকায় বেশি দেখা গেছে।
মাস্ক পরার ফলে ত্বকের ক্ষতি: বিশেষ গ্রুপের জন্য সতর্কতা
কিছু বিশেষ গ্রুপের মানুষের জন্য মাস্ক পরার ফলে ত্বকের ক্ষতির ঝুঁকি বেশি থাকে:
স্বাস্থ্যকর্মীরা
স্বাস্থ্যকর্মীদের দীর্ঘ সময় মাস্ক পরতে হয়, তাই তাদের ত্বকের ক্ষতির ঝুঁকি বেশি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে ৪৬% মানুষের মাস্ক পরার ফলে ত্বকের ক্ষতি হয়েছে।
সংবেদনশীল ত্বকের মানুষ
যাদের আগে থেকেই সংবেদনশীল ত্বক আছে, তাদের মাস্ক পরার ফলে ত্বকের ক্ষতির ঝুঁকি বেশি। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৪৭.৮% মানুষের আগে থেকেই সংবেদনশীল ত্বক ছিল।
ব্রণ প্রবণ মানুষ
যাদের আগে থেকেই ব্রণের সমস্যা আছে, তাদের মাস্ক পরার ফলে ব্রণের সমস্যা আরও বাড়তে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ৩৫.৩% মানুষের আগে থেকেই ব্রণের সমস্যা ছিল।
মাস্ক পরা আমাদের নিরাপদ রাখে, কিন্তু এর ফলে ত্বকের ক্ষতি হতে পারে। তবে সঠিক যত্ন নিলে এই ক্ষতি প্রতিরোধ করা সম্ভব। নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করা, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা, সঠিক মাপের মাস্ক পরা এবং মাঝে মাঝে মাস্ক খুলে রাখা – এই পদক্ষেপগুলি নিলে আপনি নিরাপদে থাকার পাশাপাশি আপনার ত্বককেও সুস্থ রাখতে পারবেন। তবে যদি ত্বকের কোনো গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে অবশ্যই একজন ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন।