পুজোর আগেই বাংলায় নিম্নচাপের হুমকি! আগামী ৪৮ ঘন্টায় ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা, জানুন আবহাওয়ার সর্বশেষ পূর্বাভাস

দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি চলার মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে নিম্নচাপের প্রভাবে আবহাওয়ার অবনতি ঘটেছে। আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে আগামী ৪৮ ঘন্টায় রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।…

Avatar

 

দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি চলার মধ্যেই পশ্চিমবঙ্গে নিম্নচাপের প্রভাবে আবহাওয়ার অবনতি ঘটেছে। আবহাওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে আগামী ৪৮ ঘন্টায় রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। বিশেষত কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় দিনভর বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর।

আবহাওয়াবিদদের মতে, বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পশ্চিম অংশে গঠিত এই নিম্নচাপের কেন্দ্র বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ উপকূল থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থান করছে। এই আবহাওয়া ব্যবস্থার প্রভাবে রাজ্যের দক্ষিণাঞ্চলে ইতিমধ্যে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। আগামীকাল থেকে এই বৃষ্টিপাতের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

কলকাতা শহরে শুক্রবার সকাল থেকেই মেঘাচ্ছন্ন আকাশ দেখা যাচ্ছে। বিকেল নাগাদ শহরের বিভিন্ন এলাকায় হালকা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী রবিবার পর্যন্ত এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ ডিগ্রি কম থাকবে, যা পুজোর প্রস্তুতিতে নিয়োজিত মানুষদের জন্য কিছুটা স্বস্তিদায়ক হলেও বৃষ্টির কারণে অসুবিধার সম্মুখীন হতে হতে পারে।

পুজো কমিটিগুলোর জন্য এই আবহাওয়া পরিস্থিতি বিশেষ চ্যালেঞ্জ নিয়ে এসেছে। উত্তর কলকাতার একটি বড় পুজো কমিটির সম্পাদক জানিয়েছেন, “প্যান্ডেল নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের দিকে। কিন্তু এই অপ্রত্যাশিত বৃষ্টি আমাদের চূড়ান্ত প্রস্তুতিতে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষত আলোকসজ্জা ও বৈদ্যুতিক কাজে সমস্যা হচ্ছে।” অনেক পুজো কমিটি এরই মধ্যে তাদের প্যান্ডেলে অতিরিক্ত জলনিরোধক ব্যবস্থা করতে শুরু করেছে।

দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলোতে পরিস্থিতি আরও গুরুতর। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলীয় এলাকায় বাতাসের গতিবেগ ঘন্টায় ৪০-৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে বলে সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দপ্তর। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। সুন্দরবন অঞ্চলের বাসিন্দাদের জন্য বিশেষ সতর্কতামূলক বার্তা প্রচার করা হচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে।

হাওড়া ও হুগলি জেলাতেও একই ধরনের আবহাওয়া পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই অঞ্চলের কৃষকরা তাদের পাকা ধানের ফসল নিয়ে চিন্তিত। আশ্বিন মাসের এই সময়ে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত ধান কাটার কাজে বিলম্ব ঘটাতে পারে। স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

রেল ও সড়ক যোগাযোগেও এই আবহাওয়ার প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। পূর্ব রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। প্রয়োজনে ট্রেনের গতি কমানো বা বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজ্য পরিবহন দপ্তরও বাস পরিষেবায় সম্ভাব্য বিঘ্নের জন্য প্রস্তুত রয়েছে।

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছেন। হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়া ও আর্দ্রতা বৃদ্ধির কারণে শ্বাসকষ্ট, জ্বর-সর্দি ও অ্যালার্জিজনিত সমস্যা বৃদ্ধি পেতে পারে। বিশেষত বয়স্ক ব্যক্তি ও শিশুদের জন্য অতিরিক্ত যত্নের প্রয়োজন।

গত বছরের তুলনায় এবারের পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। ২০২৪ সালে পুজোর সময় আবহাওয়া অনুকূলে ছিল, কিন্তু এবার সেপ্টেম্বরের শেষে এই অপ্রত্যাশিত নিম্নচাপের সৃষ্টি হওয়ায় পুজোর আমেজে কিছুটা ভাটা পড়তে পারে। তবে আবহাওয়াবিদরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন যে, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

পুজো সংগঠকরা এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় বিকল্প পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছেন। অনেক কমিটি তাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য আচ্ছাদিত মঞ্চের ব্যবস্থা করেছে। কিছু এলাকায় প্যান্ডেলের চারদিকে অস্থায়ী ছাদের ব্যবস্থা করা হচ্ছে যাতে ভক্তদের দর্শনে কোনো অসুবিধা না হয়।

ব্যবসায়ীরাও এই আবহাওয়া পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। বিশেষত নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাট ও দক্ষিণেশ্বরের মতো জনপ্রিয় কেনাকাটার জায়গাগুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি কমে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। অনেক দোকানদার ইতিমধ্যে তাদের পণ্য রক্ষার জন্য অতিরিক্ত ব্যবস্থা নিয়েছেন।

কলকাতা পুলিশ ও রাজ্য সরকার এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে। জরুরি অবস্থায় দ্রুত সাহায্যের জন্য বিশেষ টিম গঠন করা হয়েছে। যে সমস্ত এলাকায় জলাবদ্ধতার সম্ভাবনা রয়েছে, সেখানে পাম্প ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

আবহাওয়া দপ্তরের সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী, আগামী সোমবার থেকে নিম্নচাপের তীব্রতা কমতে শুরু করবে। তবে তার আগে শনিবার রাতে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। জনসাধারণকে অপ্রয়োজনীয় বাইরে না যাওয়ার এবং প্রয়োজনে ছাতা সঙ্গে রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এই আবহাওয়া পরিবর্তন সত্ত্বেও পুজোর উৎসবমুখর পরিবেশ ম্লান হবে না বলে আশা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা। বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো যে কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই সমান উৎসাহ ও আনন্দের সাথে পালিত হয়ে আসছে। এবারও সেই ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ থাকবে।

About Author
Avatar

আমাদের স্টাফ রিপোর্টারগণ সর্বদা নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন যাতে আপনি বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সর্বশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ খবর পেতে পারেন। তাঁদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও প্রতিশ্রুতি আমাদের ওয়েবসাইটকে একটি বিশ্বস্ত তথ্যের উৎস হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।তারা নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ রিপোর্টিংয়ে বিশ্বাসী, দ্রুত পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে তাৎক্ষণিক প্রতিবেদন তৈরিতে সক্ষম