Maha Shivratri rituals and traditions: মহা শিবরাত্রি হিন্দুধর্মের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎসব, যেখানে ভগবান শিবের আরাধনা করা হয়। এই দিনটি ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথিতে পালিত হয়। উপবাস, রাত্রিজাগরণ, শিবলিঙ্গে দুধ-জল অর্পণ, এবং “ওম নমঃ শিবায়” মন্ত্রজপের মাধ্যমে ভক্তরা শিবের কৃপা লাভের চেষ্টা করেন। পৌরাণিক কাহিনী, আধ্যাত্মিক তাৎপর্য, এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য মিলিয়ে এই উৎসব শিবের মহিমা ও মানবজীবনের গূঢ় দর্শনকে প্রতিধ্বনিত করে।
পুরাণ অনুযায়ী, এই দিনেই শিব ও পার্বতীর বিবাহ সম্পন্ন হয়। পার্বতী কঠোর তপস্যার মাধ্যমে শিবকে স্বামী হিসেবে পেতে সক্ষম হন। তাদের এই মিলন শিব-শক্তির সমন্বয়ের প্রতীক, যা সৃষ্টি, স্থিতি, ও লয়ের ভারসাম্য বোঝায়।
“মহা কুম্ভ ২০২৫: গোয়া থেকে প্রয়াগরাজ অবধি বিনামূল্যে ট্রেন পরিষেবা, জানুন কীভাবে পাবেন সুবিধা!”
দেবতা ও অসুরদের সমুদ্রমন্থনের সময় হালাহল নামক বিষ বের হলে, বিশ্ববিধ্বংসী এই বিষ পান করে শিব নিজের কণ্ঠে ধারণ করেন। এর ফলে তাঁর কণ্ঠ নীলবর্ণ ধারণ করে এবং তিনি “নীলকণ্ঠ” নামে পরিচিত হন।
এই রাতেই শিব আদি-অন্তবিহীন জ্যোতির্লিঙ্গ রূপে আবির্ভূত হন। ব্রহ্মা ও বিষ্ণু তাঁর শুরু ও শেষ খুঁজতে গিয়ে ব্যর্থ হন।
শিবরাত্রি শব্দের অর্থ “শিবের মহান রাত”। এই রাত্রি আধ্যাত্মিক অন্ধকার দূর করে আত্মজ্ঞানের আলো ছড়ায়।
বেদান্ত মতে, শিব হলেন ব্রহ্মের প্রতীক—সর্বব্যাপী চৈতন্য। এই দিনে ধ্যান ও উপবাসের মাধ্যমে মানুষ আত্মার সঙ্গে ব্রহ্মের ঐক্য অনুভব ।
রাত্রিজাগরণ ও উপবাস শরীরের টক্সিন দূর করে এবং মনের একাগ্রতা বৃদ্ধি করে।
দুধ, দুধ-জল মিশ্রণ, মধু, ঘি, ও বেলপাতা দিয়ে শিবলিঙ্গ স্নান করানো হয়। প্রতিটি উপাদানের রয়েছে আলাদা প্রতীকী অর্থ:
উপাদান | প্রতীকী অর্থ |
দুধ | পবিত্রতা |
মধু | মিষ্টি জীবনের কামনা |
বেলপাতা | শিবের প্রিয় উপাচার |
ভক্তরা “ওম নমঃ শিবায়” মন্ত্র জপ করে এবং শিবের নৃত্যের (তাণ্ডব) গল্প শুনে রাত কাটান।
অনেকে নিরামিষ আহার বা সম্পূর্ণ উপোস করে কাটান, যা শারীরিক শুদ্ধি ও মানসিক সংযমের প্রতীক।
মহা শিবরাত্রি কেবল ভারতেই নয়, নেপাল, মরিশাস, ইন্দোনেশিয়া, এবং পশ্চিমা দেশগুলিতেও উদযাপিত হয়। উদাহরণস্বরূপ:
নেপাল: পশুপতিনাথ মন্দিরে লক্ষাধিক ভক্তের সমাগম।
মরিশাস: ৫০% হিন্দু জনগোষ্ঠী এই উৎসব পালন করেন।
যুক্তরাষ্ট্র: যোগ-ধ্যানের সেশনের মাধ্যমে উদযাপন।
ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষে সূর্য কুম্ভ রাশিতে ও চন্দ্র মীন রাশিতে অবস্থান করলে, এই সময়কে আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জনের সর্বোত্তম মুহূর্ত বলে বিবেচনা করা হয়।
প্রাচীন কালে এই উৎসব তপস্যা ও ধ্যানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও, বর্তমানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নৃত্য (যেমন: ভারতনাট্যম), এবং সামাজিক উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
মহা শিবরাত্রি কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়—এটি আত্মশুদ্ধি, সমাজের ঐক্য, এবং সনাতন দর্শনের গভীর বার্তা বহন করে। শিবের মতো বিষ পান করেও বিশ্বের মঙ্গলকামনার এই শিক্ষা যুগ যুগ ধরে মানবজাতিকে প্রেরণা দিয়ে আসছে।