Mahalaya Amavasya 2024 date and time: ২০২৪ সালের অক্টোবর ২ তারিখে পালিত হবে মহালয়া অমাবস্যা, যা পিতৃপক্ষের শেষ দিন হিসেবে পরিচিত। এই দিনটি হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এদিন পূর্বপুরুষদের স্মরণ ও সম্মান জানানো হয়।
মহালয়া অমাবস্যার তারিখ ও সময়
২০২৪ সালের মহালয়া অমাবস্যার বিস্তারিত সময়সূচি:
- অমাবস্যা তিথি শুরু: অক্টোবর ১, ২০২৪ রাত ৯:৩৯ মিনিটে
- অমাবস্যা তিথি শেষ: অক্টোবর ৩, ২০২৪ রাত ১২:১৮ মিনিটে
- কুতুপ মুহূর্ত: অক্টোবর ২, ২০২৪ সকাল ১১:১২ থেকে দুপুর ১২:০০ টা পর্যন্ত
- রৌহিন মুহূর্ত: অক্টোবর ২, ২০২৪ দুপুর ১২:০০ টা থেকে ১২:৪৭ মিনিট পর্যন্ত
- মধ্যাহ্ন কাল: অক্টোবর ২, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৭ থেকে বিকেল ৩:১১ মিনিট পর্যন্ত
মহালয়া অমাবস্যার তাৎপর্য
মহালয়া অমাবস্যা হিন্দু ধর্মে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিনটি পিতৃপক্ষের শেষ দিন হিসেবে পালিত হয়। হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী, এদিন মৃত পূর্বপুরুষরা পিতৃলোকে ফিরে যান।এই দিনটি সর্বপিতৃ অমাবস্যা নামেও পরিচিত। বিশ্বাস করা হয় যে, যারা এই দিনে ভক্তি ও শ্রদ্ধার সাথে পূর্বপুরুষদের পূজা করেন, তারা তাদের পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদ ও সুখ-সমৃদ্ধি লাভ করেন।মহালয়া অমাবস্যা শুধুমাত্র পূর্বপুরুষদের স্মরণের দিন নয়, এটি দুর্গা পূজার শুরুর ইঙ্গিতও বহন করে। পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে এদিন থেকে দুর্গা পূজার প্রস্তুতি শুরু হয়।
মহালয়ায় তর্পণ: গঙ্গায় নয়, যেকোনো জলাশয়েই করা যায়! জানুন বিস্তারিত
মহালয়া অমাবস্যার রীতি-নীতি
মহালয়া অমাবস্যায় বিভিন্ন ধরনের পূজা-অর্চনা ও রীতি-নীতি পালন করা হয়। এগুলির মধ্যে রয়েছে:
- প্রাতঃস্নান: সকাল সকাল উঠে স্নান করতে হয়।
- বাড়ি পরিষ্কার: বাড়ি ও পূজার ঘর পরিষ্কার করতে হয়।
- ব্রাহ্মণ আমন্ত্রণ: পরিবারের পুরুষ সদস্যরা ব্রাহ্মণদের বাড়িতে আমন্ত্রণ জানান।
- সাত্ত্বিক খাবার প্রস্তুত: মহিলারা ব্রাহ্মণ ভোজের জন্য বিভিন্ন সাত্ত্বিক খাবার তৈরি করেন।
- তর্পণ: ব্রাহ্মণ বা পুরোহিতের সহায়তায় পরিবারের পুরুষ সদস্যরা তর্পণ করেন।
- ব্রাহ্মণ ভোজন: মহিলারা ব্রাহ্মণদের খাবার ও মিষ্টি পরিবেশন করেন, যেন তারা তাদের পূর্বপুরুষদের খাওয়াচ্ছেন।
- দান: ব্রাহ্মণদের খাবার শেষ হলে, পরিবারের সদস্যরা তাদের কাপড়, জুতো ও দক্ষিণা দান করেন।
- আশীর্বাদ গ্রহণ: পরিবারের সকল সদস্য ব্রাহ্মণদের পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করে আশীর্বাদ নেন।
- পশু-পাখিদের খাওয়ানো: এরপর গরু, কুকুর, কাক ইত্যাদিকে খাবার দেওয়া হয়।
- দান-ধ্যান: এদিন দরিদ্র, শিশু ও বৃদ্ধদের খাবার, কাপড় ও দক্ষিণা দান করা শুভ বলে মনে করা হয়।
মহালয়া অমাবস্যার আধ্যাত্মিক তাৎপর্য
মহালয়া অমাবস্যার আধ্যাত্মিক গুরুত্ব রয়েছে পূর্বপুরুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের মধ্যে। সদগুরু জানিয়েছেন, “মানুষ ও তার পূর্বপুরুষরা এই গ্রহে ২০ মিলিয়ন বছর ধরে বসবাস করছে। এই লক্ষ লক্ষ প্রজন্ম আমাদের জীবনে কিছু না কিছু অবদান রেখেছে। আমাদের ভাষা, বসার ভঙ্গি, পোশাক, ভবন – প্রায় সবকিছুই আমরা পেয়েছি আমাদের পূর্বপুরুষদের কাছ থেকে।”মহালয়া অমাবস্যা হল সেই দিন যখন আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি এবং তাদের অবদানকে স্বীকৃতি দিই। এটি শুধুমাত্র মৃত পিতামাতার প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর দিন নয়, বরং সমস্ত পূর্বপুরুষদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিন।
মা আসছেন! জানেন দূর্গা পূজা আর কত দিন বাকি? জেনে নিন এখনই!
মহালয়া অমাবস্যা উদযাপন
ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে মহালয়া অমাবস্যা বিভিন্নভাবে উদযাপিত হয়:
- পশ্চিমবঙ্গ: এখানে মহালয়া অমাবস্যা দুর্গা পূজার আনুষ্ঠানিক কাউন্টডাউন শুরু করে। লোকেরা সকাল সকাল উঠে “মহিষাসুর মর্দিনী” মন্ত্র শোনেন এবং দুর্গা পূজার প্রস্তুতি শুরু করেন।
- উত্তর ভারত: এখানে পিণ্ডদান ও তর্পণের মাধ্যমে পূর্বপুরুষদের স্মরণ করা হয়। গয়া, বারাণসী ও হরিদ্বারের মতো পবিত্র শহরগুলিতে বিশেষ অনুষ্ঠান হয়।
- দক্ষিণ ভারত: তেলেঙ্গানায় এদিন বাথুকাম্মা উৎসবের সমাপ্তি ঘটে।
মহালয়া অমাবস্যা ২০২৪ হল একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন যা পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পাশাপাশি আগামী উৎসবগুলির জন্য প্রস্তুতির সূচনা করে। এই দিনটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে আমরা যা কিছু অর্জন করেছি তার পেছনে রয়েছে আমাদের পূর্বপুরুষদের অবদান। তাই এদিন আমরা তাদের স্মরণ করি, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি এবং তাদের আশীর্বাদ কামনা করি। একইসঙ্গে, এই দিনটি আমাদের নতুন শুরুর দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়, যেখানে আমরা দেবী দুর্গার আগমনের প্রস্তুতি নিই এবং জীবনে নতুন আশা ও আনন্দের সঞ্চার করি।