Mahalaya Chokhudan Significance: মহালয়া উপলক্ষে বাঙালি হিন্দুদের কাছে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রীতি হল দেবী দুর্গার চক্ষুদান (Chokkhu Daan)। এই দিনটি শারদীয় দুর্গাপূজার সূচনা হিসেবে পালিত হয় এবং দেবীর আগমনের প্রতীক হিসেবে তাঁর মূর্তির চোখে প্রাণ সঞ্চার করা হয়। আসুন জেনে নেওয়া যাক এই অনন্য রীতির পৌরাণিক ও ঐতিহাসিক তাৎপর্য সম্পর্কে।
চক্ষুদানের তাৎপর্য
মহালয়ার দিন দেবী দুর্গার মূর্তির চোখে রং দেওয়া হয় যাকে চক্ষুদান বলা হয়। এর মাধ্যমে মূর্তিতে প্রাণ সঞ্চার করা হয় বলে বিশ্বাস করা হয়। পুরাণ অনুযায়ী, এই দিন থেকেই দেবী দুর্গা কৈলাস থেকে মর্ত্যলোকে নেমে আসেন। তাই চক্ষুদানের মাধ্যমে দেবীকে জাগ্রত করা হয় যাতে তিনি ভক্তদের দর্শন দিতে পারেন।
পৌরাণিক কাহিনী
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, মহিষাসুর নামক এক অসুর দেবতাদের পরাজিত করে স্বর্গরাজ্য দখল করে নেয়। দেবতারা মিলিত হয়ে নিজেদের শক্তি একত্রিত করে দেবী দুর্গাকে সৃষ্টি করেন। দেবী দুর্গা ৯ দিন যুদ্ধ করে দশম দিনে মহিষাসুরকে বধ করেন। এই ঘটনাই শারদীয় দুর্গাপূজার মূল কাহিনী।
মহালয়ার দিন থেকেই দেবী দুর্গা কৈলাস থেকে মর্ত্যলোকে আসার যাত্রা শুরু করেন বলে মনে করা হয়। তাই এই দিন তাঁর মূর্তির চোখে প্রাণ সঞ্চার করা হয় যাতে তিনি ভক্তদের দেখতে পারেন।
ঐতিহাসিক পটভূমি
চক্ষুদানের রীতি কবে থেকে শুরু হয়েছিল তা নিয়ে নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া যায় না। তবে এটি বাংলার দুর্গাপূজার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে।
প্রাচীনকালে রাজবাড়ি বা জমিদার বাড়িতেই দুর্গাপূজা হত। সেই সময় রথের দিন কাঠামো পূজা হত এবং মহাসপ্তমীর দিন নবপত্রিকা প্রবেশের পর দেবীর চক্ষুদান পর্ব হত। পরবর্তীকালে মহালয়ার দিনই প্রতিমার চক্ষু আঁকার চল শুরু হয়।
চক্ষুদানের পদ্ধতি
চক্ষুদান একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও পবিত্র রীতি হিসেবে পালন করা হয়। এর জন্য নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন মেনে চলতে হয়:
– শুধুমাত্র অভিজ্ঞ ও দক্ষ শিল্পীরাই এই কাজ করতে পারেন।
– সকাল বেলায় স্নান করে পবিত্র হয়ে এই কাজ করতে হয়।
– প্রথমে দেবীর ডান চোখ, তারপর বাম চোখ এবং সবশেষে ললাটের তৃতীয় নেত্র আঁকা হয়।
– চোখ আঁকার সময় মন্ত্রোচ্চারণ করা হয়।
সাংস্কৃতিক গুরুত্ব
চক্ষুদান শুধু একটি ধর্মীয় রীতি নয়, এর সাংস্কৃতিক তাৎপর্যও অপরিসীম:
– এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে।
– শিল্পীদের দক্ষতা ও কারুকার্যের প্রতিফলন ঘটে এই রীতির মাধ্যমে।
– সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ একত্রিত হয় এই অনুষ্ঠানে।
– প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে এই ঐতিহ্য বহন করে চলেছে।
শব্দের জাদুকর: নবারুণ ভট্টাচার্যের কবিতায় বাঙালি জীবনের প্রতিচ্ছবি
বর্তমান সময়ে চক্ষুদান
আধুনিক সময়ে চক্ষুদানের রীতি কিছুটা পরিবর্তিত হয়েছে:
– অনেক পূজা কমিটি এখন মহালয়ার আগেই চক্ষুদান করে থাকেন।
– সোশ্যাল মিডিয়ায় চক্ষুদানের ছবি ও ভিডিও শেয়ার করা হয়।
– রাজনৈতিক নেতারাও এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
– কিন্তু এর মূল তাৎপর্য ও গুরুত্ব অপরিবর্তিত রয়েছে।
চক্ষুদান হিন্দু ধর্মের একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ রীতি যা বাঙালি সংস্কৃতির সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এর মাধ্যমে শুধু দেবীকে জাগ্রত করা হয় না, মানুষের মধ্যেও জাগে নতুন আশা ও উদ্দীপনা। মহালয়া থেকে শুরু হওয়া এই উৎসব মানুষকে একত্রিত করে এবং সমাজে সম্প্রীতির বার্তা ছড়িয়ে দেয়। তাই চক্ষুদান শুধু একটি ধর্মীয় রীতি নয়, এটি বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক অমূল্য সম্পদ।