East Bengal foreign players released: ইস্টবেঙ্গল ফুটবল ক্লাবে বড়সড় পরিবর্তনের হাওয়া। সদ্যসমাপ্ত ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (আইএসএল) মৌসুমে হতাশাজনক পারফরম্যান্সের কারণে তিনজন বিদেশি ফুটবলারকে ছেঁটে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে লাল-হলুদ শিবির। কোচ অস্কার ব্রুজোনের নেতৃত্বে নতুন মৌসুমে শক্তিশালী দল গড়ার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে ক্লাব সূত্রে জানা গেছে।
এই মৌসুমে ইস্টবেঙ্গল বড় প্রত্যাশা নিয়ে মাঠে নামে। গ্রীষ্মের দলবদলে তারা বেশ কয়েকজন নামী বিদেশি ফুটবলারকে দলে টেনেছিল, যার মধ্যে ছিলেন আগের মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতা দিমিত্রিয়োস ডায়ামানতাকোস এবং সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টদাতা মাদিহ তালাল। কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্সে সেই প্রত্যাশার ছিটেফোঁটাও দেখা যায়নি। মৌসুমের শেষ দিকে এসে দলটি ১৯ ম্যাচে মাত্র ১৮ পয়েন্ট নিয়ে লিগ টেবিলের ১১ নম্বরে অবস্থান করছিল, যার ফলে প্লে-অফের স্বপ্ন কার্যত শেষ হয়ে যায়।
বিদেশি ফুটবলারদের পারফরম্যান্স নিয়ে ক্লাবের ভেতরে অসন্তোষ ছিল অনেক দিন ধরেই। ক্লাবের প্রাক্তন ফুটবলার ডগলাস সিলভা প্রকাশ্যে বলেছেন, “বিদেশিরা ভালো না খেললে গোটা দলই ভুগবে। এই মৌসুমে ভারতীয়রা ভালো খেললেও বিদেশিরা প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি”। দলের রক্ষণভাগে হিজাজি মাহেরের দুর্বলতা, মাঝমাঠে সাউল ক্রেসপোর অনিয়মিত ফর্ম এবং মাদিহ তালালের চোট—সব মিলিয়ে বিদেশি ব্রিগেড কার্যত ব্যর্থ।
নতুন কোচ অস্কার ব্রুজোন দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ক্লাবের বিদেশি ফুটবলারদের নিয়ে কঠোর সিদ্ধান্তের আভাস দিয়েছিলেন। ক্লাবের মালিকপক্ষ ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আগামী মৌসুমে সম্পূর্ণ নতুন বিদেশি দল চান তিনি। ব্রুজোনের চাওয়া অনুযায়ী, হিজাজি মাহের, মাদিহ তালাল এবং সাউল ক্রেসপো—এই তিনজনের সঙ্গে চুক্তি ছিন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে চুক্তি অনুযায়ী, তাদের আগাম বেতন পরিশোধ করতে হবে ক্লাবকে, যার ফলে আর্থিক দিক থেকেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে।
এদিকে, ক্লাব ইতিমধ্যে কিছু ভারতীয় তরুণ প্রতিভার সঙ্গে মৌখিক চুক্তি করেছে। তবে চূড়ান্ত চুক্তিপত্রে সই হবে কোচ ব্রুজোনের অনুমোদনের পরই। অর্থাৎ, আগামী মৌসুমের দল গঠনে কোচের মতামকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে ক্লাব।
মৌসুমের শুরুতেই ইস্টবেঙ্গল ছন্দ হারিয়ে ফেলে। টানা ছয় ম্যাচে পরাজয়ের পর কোচ কার্লেস কুয়াদ্রাতকে ছাঁটাই করা হয়। এরপর ব্রুজোন দায়িত্ব নেন, কিছুটা ঘুরে দাঁড়ালেও ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি দল। চোট-আঘাত, বিদেশিদের ব্যর্থতা এবং শৃঙ্খলার অভাব—সব মিলিয়ে মৌসুমটা হতাশায় মোড়া। ৫৯টি হলুদ কার্ড এবং একাধিক লাল কার্ডের কারণে দলকে ভুগতে হয়েছে।
ভারতীয় ফুটবলে বিদেশি ফুটবলারেরা সাধারণত পার্থক্য গড়ে দেওয়ার জন্যই আনা হয়। কিন্তু এবারের মৌসুমে ইস্টবেঙ্গলের বিদেশিরা সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ক্লাবের তরুণ ভারতীয় ফুটবলারদের পারফরম্যান্স ছিল চোখে পড়ার মতো—বিশেষ করে পি ভি বিষ্ণু ও ডেভিড লালহ্লানসাঙ্গা গোল ও অ্যাসিস্টে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। ফলে ভবিষ্যতে দেশীয় প্রতিভাদের ওপর আরও আস্থা রাখার কথা ভাবছে ক্লাব।
ক্লাবের ভক্ত-সমর্থকদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। বারবার বিদেশি ফুটবলারদের ব্যর্থতা, ক্লাব ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অনেকেই বলছেন, শুধুমাত্র বড় নাম বা অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর না করে, আরও পরিশ্রমী ও কার্যকর বিদেশি ফুটবলার বাছাই করা উচিত।
এই পরিস্থিতিতে ক্লাবের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ—একদিকে আর্থিক ক্ষতি সামলে চুক্তি ছিন্ন করা, অন্যদিকে নতুন ও কার্যকর বিদেশি ফুটবলার দলে টানা। কোচ ব্রুজোনের নেতৃত্বে এবার সম্পূর্ণ নতুন বিদেশি দল গঠনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের বসুন্ধরা কিংসের মিগুয়েলকে দলে টানার জন্য আলোচনা চলছে, যদিও চূড়ান্ত চুক্তি এখনও হয়নি।
সব মিলিয়ে, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের এই বড় পদক্ষেপ আগামী মৌসুমে তাদের সাফল্যের জন্য কতটা ফলপ্রসূ হয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়। বিদেশি ফুটবলারদের ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে ক্লাব নতুন উদ্যমে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে, যাতে বহুদিনের শিরোপা-খরা কাটিয়ে সমর্থকদের প্রত্যাশা পূরণ করা যায়।