Makar Sankranti celebration guide: মকর সংক্রান্তি হিন্দু ক্যালেন্ডারের অন্যতম প্রধান উৎসব, যা সূর্যের মকর রাশিতে প্রবেশের সাথে সাথে উদযাপিত হয়। ২০২৫ সালে এই উৎসবটি ১৪ জানুয়ারি মঙ্গলবার পালিত হবে। এই দিনটি শীতের অবসান এবং দীর্ঘতর দিনের শুরুর প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হয়। এটি একটি ফসল কাটার উৎসব হিসেবেও পরিচিত, যা ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন নামে পালিত হয়।
মকর সংক্রান্তি ২০২৫ সালে নিম্নলিখিত সময়সূচি অনুযায়ী পালিত হবে:
বিবরণ | তারিখ ও সময় |
---|---|
মকর সংক্রান্তির তারিখ | ১৪ জানুয়ারি, ২০২৫ (মঙ্গলবার) |
মকর সংক্রান্তির মুহূর্ত | সকাল ৯:০৩ |
পুণ্যকাল | সকাল ৯:০৩ থেকে বিকাল ৫:৪৬ |
মহাপুণ্যকাল | সকাল ৯:০৩ থেকে সকাল ১০:৪৮ |
এই সময়গুলি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী এই সময়ে পূজা, দান এবং স্নান করা অত্যন্ত শুভ বলে বিবেচিত হয়।
মকর রাশির ছেলেরা কেমন মেয়ে পছন্দ করে: জ্যোতিষশাস্ত্রের আলোকে বিশ্লেষণ
মকর সংক্রান্তি শুধুমাত্র একটি জ্যোতিষশাস্ত্রীয় ঘটনা নয়, এর গভীর সামাজিক ও আধ্যাত্মিক তাৎপর্য রয়েছে:
১. নতুন শুরু: এই দিনটি নতুন শুরুর প্রতীক। সূর্যের উত্তরায়ণ শুরু হয়, যা দীর্ঘতর দিন ও ঋতু পরিবর্তনের সূচনা করে।
২. কৃষি উৎসব: এটি একটি ফসল কাটার উৎসব, যেখানে কৃষকরা তাদের প্রথম ফসলের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে।
৩. আধ্যাত্মিক শুদ্ধি: বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে পবিত্র নদীতে স্নান করলে পাপমুক্তি ঘটে।
৪. সামাজিক সংহতি: এই উৎসব মানুষকে একত্রিত করে, যা সামাজিক বন্ধন মজবুত করে।
৫. প্রকৃতির প্রতি কৃতজ্ঞতা: এই দিনে প্রকৃতি ও সূর্যদেবের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়।
মকর সংক্রান্তি উদযাপনের রীতিনীতি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন রকম। তবে কিছু সাধারণ রীতিনীতি রয়েছে যা প্রায় সব জায়গায় পালন করা হয়:১. পবিত্র স্নান: অনেকে এই দিনে পবিত্র নদীতে স্নান করেন, বিশেষ করে গঙ্গা, যমুনা বা গোদাবরী নদীতে। যারা নদীতে যেতে পারেন না, তারা বাড়িতে গঙ্গাজল মিশিয়ে স্নান করেন।২. সূর্য পূজা: সূর্যদেবকে জল অর্পণ করা হয় এবং তার আশীর্বাদ প্রার্থনা করা হয়।৩. দান: এই দিনে দান করা খুব পুণ্যের কাজ বলে মনে করা হয়। লোকেরা গরিব ও প্রয়োজনীয়দের খাবার, কাপড় বা অর্থ দান করেন।৪. মিষ্টি বিনিময়: তিল ও গুড় দিয়ে তৈরি মিষ্টি বিনিময় করা হয়, যা মিষ্টি সম্পর্কের প্রতীক।৫. ঘুড়ি ওড়ানো: বিশেষ করে গুজরাট ও উত্তর ভারতের অনেক অংশে ঘুড়ি ওড়ানো একটি জনপ্রিয় কার্যক্রম।
মকর সংক্রান্তি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্নভাবে উদযাপিত হয়। এখানে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ দেওয়া হল:
গুজরাটে মকর সংক্রান্তিকে ‘উত্তরায়ণ’ বলা হয়। এখানে এই উৎসবের মূল আকর্ষণ হল আন্তর্জাতিক ঘুড়ি উৎসব। আকাশ রঙিন ঘুড়িতে ভরে যায় এবং “কাই পো চে!” ধ্বনি শোনা যায়। আহমেদাবাদের জামালপুর এলাকায় সেরা ঘুড়ি কেনার জন্য মানুষ ভিড় করে। এছাড়া উন্ধিয়ু, চিক্কি, জিলেবি ইত্যাদি ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরি ও খাওয়া হয়।
তামিল নাড়ুতে মকর সংক্রান্তিকে ‘পোঙ্গল’ বলা হয়। এটি চার দিনব্যাপী উৎসব:
পাঞ্জাবে মকর সংক্রান্তির আগের রাতে ‘লোহড়ি’ উৎসব পালিত হয়। এই দিনে আগুনের চারপাশে নাচগান করা হয় এবং মুড়ি, চিড়ে, কুড়মুড়ে ইত্যাদি আগুনে নিক্ষেপ করা হয়। পরের দিন ‘মাঘি’ হিসেবে মকর সংক্রান্তি পালিত হয়।
পশ্চিমবঙ্গে এই উৎসবকে ‘পৌষ পার্বণ’ বলা হয়। এখানে পিঠে-পুলি তৈরি করা হয় এবং গঙ্গাসাগরে স্নান করতে যাওয়া একটি বড় আকর্ষণ। তুসু পরব নামে একটি উপজাতীয় উৎসবও এই সময় পালিত হয়।
অসমে মকর সংক্রান্তিকে ‘মাঘ বিহু’ বা ‘ভোগালি বিহু’ বলা হয়। এখানে মেজি ও ভেলাঘর নামে অস্থায়ী ঘর তৈরি করে পরে তা পোড়ানো হয়। বিভিন্ন ধরনের পিঠা তৈরি করা হয় এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মকর সংক্রান্তি উদযাপনের জন্য ভারতের কিছু বিখ্যাত স্থান:
১. প্রয়াগরাজ (উত্তর প্রদেশ): এখানে কুম্ভমেলা অনুষ্ঠিত হয়, যা বিশ্বের বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ।
২. আহমেদাবাদ (গুজরাট): আন্তর্জাতিক ঘুড়ি উৎসবের জন্য বিখ্যাত।
৩. গঙ্গাসাগর (পশ্চিমবঙ্গ): লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রী এখানে পবিত্র স্নান করতে আসেন।
৪. হরিদ্বার (উত্তরাখণ্ড): গঙ্গা নদীতে স্নান ও আরতি দর্শনের জন্য বিখ্যাত।
৫. মাদুরাই (তামিল নাড়ু): এখানকার মীনাক্ষী মন্দিরে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মকর রাশির মেয়েদের বিবাহিত জীবন: সফলতা ও চ্যালেঞ্জের সমন্বয়
মকর সংক্রান্তির ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন। এই উৎসবের সাথে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনী জড়িত:
১. ভীষ্ম পিতামহের মৃত্যু: মহাভারতে উল্লেখ আছে যে ভীষ্ম পিতামহ উত্তরায়ণের সময় স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
২. গঙ্গার অবতরণ: বিশ্বাস করা হয় যে এই দিনে গঙ্গা নদী পৃথিবীতে অবতরণ করেছিল।
৩. সূর্য ও শনির মিলন: জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী, এই দিনে সূর্যদেব তার পুত্র শনিকে দর্শন দেন।