ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ২০১৪ সালে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগ চালু করেছিলেন। এর লক্ষ্য ছিল ভারতকে একটি বৈশ্বিক উৎপাদন কেন্দ্রে পরিণত করা এবং দেশের অর্থনীতিতে উৎপাদন খাতের অবদান বাড়ানো। এই উদ্যোগের ১০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বলেছেন, উৎপাদন, বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
গত এক দশকে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের ফলে ভারতের উৎপাদন খাতে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। বিশেষ করে মোবাইল ফোন উৎপাদনে ভারত এখন বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম দেশ। ২০১৪ সালে দেশে মাত্র দুটি মোবাইল উৎপাদন কারখানা ছিল, যা এখন বেড়ে ২০০টি হয়েছে। মোবাইল রপ্তানি ১,৫৫৬ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ১.২ লক্ষ কোটি টাকায় পৌঁছেছে – যা ৭৫০০% বৃদ্ধি। বর্তমানে ভারতে ব্যবহৃত ৯৯% মোবাইল ফোনই দেশেই তৈরি হচ্ছে।
Apple Inc. এর মতো বহুজাতিক কোম্পানিগুলো এখন ভারতে বড় আকারে বিনিয়োগ করছে। আগামী iPhone 16 সিরিজের ফোনগুলো প্রথমবারের মতো ভারতে উৎপাদন করা হবে এবং বিশ্বব্যাপী বিক্রি শুরুর প্রথম কয়েকদিনের মধ্যেই সেগুলো পাওয়া যাবে। Foxconn ইতিমধ্যে তামিলনাড়ুতে iPhone 16 সিরিজের উৎপাদন শুরু করেছে। JPMorgan-এর একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, Apple ২০২৫ সালের মধ্যে তার iPhone উৎপাদনের ২৫% ভারতে স্থানান্তর করার পরিকল্পনা করছে।
সেমিকন্ডাক্টর শিল্পে বিনিয়োগ আকর্ষণের জন্য ভারত সরকার ২০২১ সালে ৭৬,০০০ কোটি টাকার ‘Semicon India’ প্রোগ্রাম চালু করেছে। এর ফলে ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। Micron Technology-এর ২২,৫১৬ কোটি টাকার প্রকল্প, Tata Group ও Taiwan-এর Powerchip Semiconductor Manufacturing Corporation (PSMC)-এর যৌথ উদ্যোগে ৯১,০০০ কোটি টাকার semiconductor fabrication plant প্রকল্প উল্লেখযোগ্য। মোট পাঁচটি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, যার মোট বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১.৫২ লক্ষ কোটি টাকা।
‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হল Production Linked Incentive (PLI) স্কিম। এর মাধ্যমে ১৪টি সেক্টরে বিনিয়োগ আকর্ষণ করা হচ্ছে। ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত ৭৫৫টি আবেদন অনুমোদিত হয়েছে, যার ফলে ১.২৩ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগ এবং ৮ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
ব্যবসা সহজীকরণের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। ডিজিটাইজেশন ও প্রক্রিয়াগত সরলীকরণের মাধ্যমে ব্যবসা পরিচালনা সহজ হয়েছে। দুর্নীতির প্রতি শূন্য সহনশীলতা নীতি এবং নির্দিষ্ট সেক্টরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের ফলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকর্ষিত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী কর্মসংস্থান সৃষ্টি প্রকল্প (PMEGP) ঋণ ২০২৪: একটি বিস্তৃত গাইড
তবে চ্যালেঞ্জও রয়েছে। GDP-তে উৎপাদন খাতের অবদান এখনও ১৭% এর কাছাকাছি রয়েছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে ২৫% এ উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেক দূরে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং ছোট ও মাঝারি শিল্প প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণের ক্ষেত্রেও আরও উন্নতি প্রয়োজন।
‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা নিয়ে সরকার আশাবাদী। বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বলেছেন, “আমরা উৎপাদন খাতে চমৎকার প্রবৃদ্ধি নিয়ে খুবই আশাবাদী। বিদেশী বিনিয়োগকারীদের প্রতিশ্রুতি ও আগ্রহ অসাধারণ।” তিনি আরও বলেন, “আমরা বড় বড় বিনিয়োগ পরিকল্পনা দেখছি যা লক্ষ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং অর্থনীতিতে উৎপাদন খাতের অবদান বাড়াবে।”
সামগ্রিকভাবে, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগ ভারতের উৎপাদন খাতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। আইফোন উৎপাদন থেকে শুরু করে সেমিকন্ডাক্টর শিল্প গড়ে তোলা – সব ক্ষেত্রেই উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। তবে GDP-তে উৎপাদন খাতের অবদান বাড়ানো এবং আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টির চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আগামী দিনগুলোতে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ভারত কীভাবে তার উৎপাদন খাতকে আরও শক্তিশালী করে তোলে তা দেখার বিষয়।