পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভায় ‘অপরাজিতা নারী ও শিশু বিল (পশ্চিমবঙ্গ ফৌজদারি আইন সংশোধন) বিল, ২০২৪’ পেশ করেছেন। এই বিলের মাধ্যমে ধর্ষণের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। এছাড়াও ধর্ষণের ঘটনার তদন্ত ২১ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিলটি পেশ করার সময় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। এই বিলের মাধ্যমে আমরা ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছি। যদি কোনো ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগী মারা যান বা উদ্ভিদ অবস্থায় চলে যান, তাহলে অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড হবে।”
২১ শে জুলাই: রক্তাক্ত ইতিহাসের পটভূমিতে মমতা ব্যানার্জির অগ্নিকন্যা হয়ে ওঠার কাহিনী
তিনি আরও বলেন, “ধর্ষণের ঘটনার তদন্ত ২১ দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে। প্রয়োজনে আরও ১৫ দিন সময় বাড়ানো যাবে। কিন্তু তার জন্য পুলিশ সুপারের লিখিত অনুমতি লাগবে।”
এই বিলে বলা হয়েছে, ধর্ষণ ও গণধর্ষণের অপরাধীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হবে। অর্থাৎ তাদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত জেলে থাকতে হবে, প্যারোলের সুযোগ থাকবে না।
বিলের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি:
– প্রতিটি জেলায় একটি করে ‘অপরাজিতা টাস্ক ফোর্স’ গঠন করা হবে, যার নেতৃত্বে থাকবেন একজন ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ (DSP) র্যাঙ্কের অফিসার।
– ধর্ষণের ঘটনার বিচার দ্রুত শেষ করার জন্য বিশেষ আদালত গঠন করা হবে।
– ভুক্তভোগীর পরিচয় প্রকাশ করলে ৩-৫ বছরের জেল ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
– আদালতের অনুমতি ছাড়া বিচার প্রক্রিয়া সংক্রান্ত কোনো তথ্য প্রকাশ করলে ৩-৫ বছরের জেল ও জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটক বলেন, “এই বিল পাস হলে রাজ্যপাল ও রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লাগবে। আমরা আশা করছি দ্রুত অনুমোদন মিলবে।”
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “আমরা ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোর আইনের পক্ষে। কিন্তু এই বিল নিয়ে আলোচনার জন্য আমাদের মাত্র ১ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছে, যা খুবই কম।”
বিলটি পেশ করার পিছনে মূল কারণ হল গত ৯ আগস্ট কলকাতার আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে একজন ৩১ বছর বয়সী মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা। এই ঘটনার পর রাজ্যজুড়ে ব্যাপক প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ শুরু হয়।
বিলটি পাস হলে এর প্রভাব:
– ধর্ষণের ঘটনা কমতে পারে
– দ্রুত বিচার নিশ্চিত হবে
– ভুক্তভোগীরা আরও সাহস পাবেন অভিযোগ করতে
– পুলিশ ও প্রশাসনের দায়িত্ব বাড়বে
তবে আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু কঠোর আইন নয়, এর সঠিক প্রয়োগ ও সামাজিক সচেতনতা বাড়ানো জরুরি।
বিলের মূল বিষয়গুলি:
বিষয় | বিবরণ |
---|---|
মৃত্যুদণ্ড | ধর্ষণের ফলে মৃত্যু বা উদ্ভিদ অবস্থা হলে |
যাবজ্জীবন কারাদণ্ড | ধর্ষণ ও গণধর্ষণের ক্ষেত্রে, প্যারোল নেই |
তদন্তের সময়সীমা | ২১ দিন, ১৫ দিন বাড়ানো যাবে |
বিশেষ আদালত | দ্রুত বিচারের জন্য |
জরিমানা | ভুক্তভোগীর পরিচয় প্রকাশ বা বিচার প্রক্রিয়ার তথ্য ফাঁস করলে |
এই বিল পাস হলে পশ্চিমবঙ্গে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে এর সফল বাস্তবায়ন ও সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।