২৮৬ দিন মহাকাশে কাটিয়ে অবশেষে পৃথিবীতে ফিরেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামস। এই অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, বুধবার বিধানসভায় দাঁড়িয়ে তিনি সুনীতার জন্য ভারতরত্ন পুরস্কারের দাবি তুলেছেন। এই ঘোষণার পাশাপাশি মমতা একটি চমকপ্রদ তথ্যও প্রকাশ করেছেন—তিনি নিজেও বর্তমানে স্পেস সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করছেন। এই ঘটনা সুনীতার প্রত্যাবর্তনকে আরও আলোচনার কেন্দ্রে এনেছে।
গত ১৯ মার্চ, ২০২৫ সকাল সাড়ে তিনটায় ফ্লোরিডার সমুদ্রে স্পেসএক্সের মহাকাশযানে করে সুনীতা এবং তাঁর সঙ্গী বুচ উইলমোর পৃথিবীতে ফিরে আসেন। মূলত ৮ দিনের একটি মিশনের জন্য গিয়েছিলেন তাঁরা, কিন্তু বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশযানে প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে প্রায় ৯ মাস আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে আটকে থাকতে হয়। এই দীর্ঘ সময় মহাকাশে কাটানোর পর তাঁদের ফিরে আসা বিজ্ঞান জগতের জন্য একটি বড় সাফল্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই ঘটনার পরপরই এক্স হ্যান্ডেলে সুনীতাকে শুভেচ্ছা জানান এবং পরে বিধানসভায় তাঁর প্রশংসায় বলেন, “সুনীতা উইলিয়ামসের মতো দেশের কন্যা আমাদের গর্ব। তিনি ভারতরত্ন পাওয়ার যোগ্য।”
এই প্রসঙ্গে মমতা আরও জানান যে তিনি স্পেস সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি বলেন, “আমি মহাকাশ বিজ্ঞান নিয়ে কিছুটা পড়াশোনা করেছি। জেনেছি, মহাকাশযান যখন পৃথিবীতে ফেরে, তখন অনেক সময় সমস্যা হতে পারে। কল্পনা চাওলার ক্ষেত্রে তেমনটাই হয়েছিল, তিনি ফিরতে পারেননি। সুনীতাদের ক্ষেত্রেও প্রথমে সমস্যা হয়েছিল, তাই এতদিন আটকে থাকতে হয়।” মমতার এই মন্তব্যে তাঁর বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ এবং সুনীতার প্রতি শ্রদ্ধা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। তিনি উদ্ধারকারী দলকেও ধন্যবাদ জানান, যারা এই কঠিন পরিস্থিতিতে সুনীতাদের ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছে।
সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর গত বছরের জুন মাসে নাসার একটি মিশনে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে যান। তাদের পরিকল্পনা ছিল মাত্র ৮ দিনের। কিন্তু বোয়িংয়ের স্টারলাইনারে হিলিয়াম লিক এবং থ্রাস্টারের সমস্যা দেখা দেয়। এই ত্রুটির কারণে তাদের পৃথিবীতে ফেরা সম্ভব হয়নি। পরে নাসা এবং স্পেসএক্স একত্রে কাজ করে তাদের উদ্ধারের ব্যবস্থা করে। ২৮৬ দিন পর ফ্লোরিডায় অবতরণের পরও সুনীতাদের এখনই বাড়ি ফেরা হচ্ছে না। মহাকাশে দীর্ঘ সময় থাকার কারণে শারীরিক জটিলতা দেখা দিয়েছে, তাই কয়েক সপ্তাহ কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে তাঁদের।
বিজ্ঞানের দিক থেকে এই ঘটনা গুরুত্বপূর্ণ। মহাকাশে এত দীর্ঘ সময় থাকার পরও সুনীতা এবং বুচ সুস্থভাবে ফিরে এসেছেন। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে তাঁরা বিভিন্ন গবেষণায় অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে খাবারের জন্য তাজা শাকসবজি না থাকলেও প্যাকেটজাত খাবার, শুকনো ফল, এমনকি পিৎজা পর্যন্ত খেয়েছেন তাঁরা। প্রতি তিন মাসে একবার স্পেস স্টেশনে খাবার পাঠানো হয়। এছাড়া ৫৩০ গ্যালন জলের ট্যাঙ্ক থেকে পানি ব্যবহার করে খাবার তৈরি করতেন তাঁরা। এই অভিজ্ঞতা মানুষের মহাকাশে দীর্ঘমেয়াদি বসবাসের সম্ভাবনাকে আরও জোরদার করেছে।
মমতার ভারতরত্নের দাবি অনেকের মনে প্রশ্ন তুলেছে। সুনীতা আমেরিকান নাগরিক হলেও তাঁর বাবা ভারতীয় বংশোদ্ভূত। তিনি এর আগেও মহাকাশে গিয়ে রেকর্ড গড়েছেন। ২০০৬-০৭ সালে ১৯৫ দিন মহাকাশে কাটিয়েছিলেন তিনি, যা একজন মহিলা মহাকাশচারীর জন্য তখন রেকর্ড ছিল। এবারের ২৮৬ দিনের যাত্রা তাঁর দৃঢ়তা ও সাহসের আরেকটি প্রমাণ। মমতা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও সুনীতাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। তিনি এক্স-এ লিখেছেন, “সুনীতা ও তাঁর দল অধ্যবসায়ের এক অনন্য উদাহরণ দিয়েছেন। এটি লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনুপ্রাণিত করবে।”
এই ঘটনায় মমতার স্পেস সায়েন্সে আগ্রহও আলোচনায় এসেছে। তিনি যে শুধু রাজনীতিবিদ নন, বিজ্ঞানের প্রতিও তাঁর কৌতূহল রয়েছে, তা এই মন্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে। সুনীতার প্রত্যাবর্তন ভারতীয়দের কাছে গর্বের মুহূর্ত। তাঁর এই কৃতিত্ব ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। মমতার দাবি কতটা বাস্তবায়িত হবে, তা সময় বলবে, তবে এই ঘটনা বিজ্ঞান ও সাহসের এক অসাধারণ গল্প হয়ে থাকবে।