Lowering a child’s high fever: শিশুর জ্বর ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট হলে অভিভাবকদের উদ্বিগ্ন হওয়া স্বাভাবিক। তবে জ্বর নিজে কোনো ক্ষতি করে না, বরং এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার একটি স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া। তবুও শিশুর স্বাস্থ্যের জন্য কিছু সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
প্রাথমিক লক্ষণ ও করণীয়
জ্বরে আক্রান্ত শিশু সাধারণত অস্বস্তিবোধ করে, গরম অনুভব করে, বিরক্ত থাকে এবং ঘেমে যায়। এই অবস্থায় নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নিতে হবে:
- পর্যাপ্ত তরল পান করানো
- হালকা পোশাক পরানো
- পাতলা চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা
- বিশ্রাম নিতে দেওয়া
ওষুধ প্রয়োগ
- ৬ মাসের বেশি বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে acetaminophen বা ibuprofen দেওয়া যেতে পারে
- ২ বছরের কম বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ওষুধের মাত্রা নির্ধারণ করতে হবে
- কখনোই aspirin দেবেন না, এতে Reye syndrome হতে পারে
জ্বরে প্যারাসিটামল: দিনে কতগুলো খাওয়া নিরাপদ ? বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন
স্নান করানোর নিয়ম
- হালকা গরম পানিতে স্নান করাতে পারেন
- পানিতে কখনোই রাবিং অ্যালকোহল মিশাবেন না
- খুব ঠাণ্ডা পানিতে স্নান করাবেন না
ডাক্তার দেখানো প্রয়োজন যখন:
১. জ্বরের সাথে নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা যায়:
- তীব্র মাথাব্যথা
- ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া
- আলোতে চোখে কষ্ট
- শরীরে র্যাশ বা বেগুনি দাগ
- শ্বাসকষ্ট
- পেটব্যথা
- ঘুম থেকে জাগাতে অসুবিধা
২. নিম্নলিখিত পরিস্থিতিতে:
- ৩ মাসের কম বয়সী শিশুর জ্বর ১০০.৪°F বা তার বেশি
- ২ বছরের কম বয়সী শিশুর জ্বর ২৪ ঘণ্টার বেশি থাকলে
- ২ বছরের বেশি বয়সী শিশুর জ্বর ৭২ ঘণ্টার বেশি থাকলে
ডিহাইড্রেশনের লক্ষণ
নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি দেখা গেলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
- কান্নার সময় চোখে পানি না আসা
- স্বাভাবিকের তুলনায় কম প্রস্রাব
- মুখ ও ঠোঁট শুকনো
- চোখ ঢুকে যাওয়া
- অস্বাভাবিক অসুস্থ দেখানো
স্কুলে/ডে কেয়ারে পাঠানোর নিয়ম
শিশুর জ্বর সম্পূর্ণ সেরে যাওয়ার কমপক্ষে ২৪ ঘণ্টা পর স্কুলে পাঠানো উচিত। এর আগে পাঠালে অন্য শিশুদের মধ্যে সংক্রমণের ঝুঁকি থাকে।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
সংক্রমণ এড়াতে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নিতে হবে:
- নিয়মিত হাত ধোয়া
- ব্যক্তিগত জিনিসপত্র শেয়ার না করা
- ঘর-বাড়ি পরিষ্কার রাখা
- পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করা
পুষ্টি ও খাদ্যাভ্যাস
জ্বরের সময় শিশুর খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন হতে পারে। এই সময়ে:
- হালকা খাবার দিন
- ঘন ঘন তরল খাবার দিন
- ফলের রস বা স্যুপ দিতে পারেন
- ORS খাওয়ানো যেতে পারে
- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার দিন
গর্ভাবস্থায় বাচ্চার অবস্থান: কোন পাশে থাকলে সবচেয়ে ভালো?
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপায়
দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতার জন্য:
- নিয়মিত ব্যায়াম করানো
- পর্যাপ্ত ঘুমের ব্যবস্থা করা
- সুষম খাবার খাওয়ানো
- টিকাদান সময়মত সম্পন্ন করা
- স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন অভ্যাস গড়ে তোলা
ভুল ধারণা ও সতর্কতা
কিছু সাধারণ ভুল ধারণা এড়িয়ে চলুন:
- জ্বর কমাতে অতিরিক্ত কাপড় পরানো
- ঠাণ্ডা পানিতে স্নান করানো
- অতিরিক্ত ওষুধ দেওয়া
- বিনা পরামর্শে অ্যান্টিবায়োটিক দেওয়া
মানসিক যত্ন
জ্বরের সময় শিশুর মানসিক যত্নও গুরুত্বপূর্ণ:
- আদর-যত্ন করুন
- গল্প শোনান
- হালকা খেলাধুলা করান
- সঙ্গ দিন
- ধৈর্য ধরুন
দীর্ঘমেয়াদী পর্যবেক্ষণ
জ্বর সেরে যাওয়ার পরও কিছুদিন লক্ষ্য রাখুন:
- খাওয়া-দাওয়ার প্যাটার্ন
- ঘুমের মান
- মেজাজ ও আচরণ
- শারীরিক সক্রিয়তা
- পুনরায় জ্বর আসার লক্ষণ
ইমিউনিটি বুস্টিং খাবার
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে:
- হলুদ দুধ
- আদা চা
- তুলসি পাতার রস
- লেবুর রস
- মধু (১ বছরের বেশি বয়সী শিশুদের জন্য)
এই সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া এবং শিশুর অবস্থার উপর নজর রাখা অত্যন্ত জরুরি। কোনো জটিলতা দেখা দিলে বা সন্দেহ হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন।