Think Bengal Logo
  • হোম
  • পশ্চিমবঙ্গ
  • ভারত
  • বাংলাদেশ
  • প্রযুক্তি
  • স্বাস্থ্য টিপস
  • অটোমোবাইল
  • বিবিধ
  • হোম
  • পশ্চিমবঙ্গ
  • ভারত
  • বাংলাদেশ
  • প্রযুক্তি
  • স্বাস্থ্য টিপস
  • অটোমোবাইল
  • বিবিধ
⌂ / বিবিধ / মঙ্গল শোভাযাত্রা: বাংলা নববর্ষের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উজ্জ্বল প্রতীক

মঙ্গল শোভাযাত্রা: বাংলা নববর্ষের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উজ্জ্বল প্রতীক

  • বাংলাদেশ প্রতিনিধি
  • - ৮:০০ পূর্বাহ্ণ
  • মার্চ ২৫, ২০২৫

Boishakhi festival in Bangladesh: পহেলা বৈশাখ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় উৎসবগুলির মধ্যে একটি, যেখানে মঙ্গল শোভাযাত্রা এই উৎসবের অন্যতম আকর্ষণ হিসাবে বিবেচিত হয়। মঙ্গল শোভাযাত্রা হলো বাংলাদেশে বাংলা নববর্ষের প্রথম দিনে (পহেলা বৈশাখ, ১৪ এপ্রিল) আয়োজিত একটি বর্ণাঢ্য মিছিল, যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দ্বারা আয়োজিত হয়। ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ শব্দটির অর্থ “কল্যাণের মিছিল” – যা সুখ, সমৃদ্ধি এবং আশার প্রতীক হিসেবে পরিচিত। ২০১৬ সালে UNESCO এই সাংস্কৃতিক উৎসবকে “অস্পৃশ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য” হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে, যা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।

মঙ্গল শোভাযাত্রার ইতিহাস

মঙ্গল শোভাযাত্রার উৎপত্তি ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে। এর সূচনা সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। কিছু সূত্র অনুসারে, এই ঐতিহ্য প্রথম ১৯৮৫ সালে যশোরে সামরিক শাসনের সময় শুরু হয়, যার নেতৃত্বে ছিলেন চারুকলা শিল্পী মাহবুব জামাল শামীম, যিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউটের একজন প্রাক্তন ছাত্র ছিলেন এবং যশোরে চারুপীঠ নামক একটি প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেছিলেন। তিনি লোক সংস্কৃতির উপস্থাপনার মাধ্যমে ঐক্য বজায় রাখার উদ্দেশ্যে এবং মঙ্গলকর শক্তির জন্য প্রার্থনা ও অমঙ্গলকর শক্তি দূর করার প্রতীক হিসেবে এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন।

প্রাচীন বনভূমির সাক্ষী থাকতে ঘুরে আসুন বিশ্বের দশটি প্রাচীনতম অরণ্য

১৯৮৯ সালে এই ঐতিহ্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে প্রসারিত হয়, যা প্রথমে ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ (আনন্দ মিছিল) নামে পরিচিত ছিল। তখন বাংলাদেশে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের স্বৈরাচারী শাসন চলছিল। দেশ তখন সামরিক স্বৈরাচারের অধীনে ছিল এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ঢাকায় গণঅভ্যুত্থান হয়েছিল, যেখানে নূর হোসেনসহ অনেকে প্রাণ হারিয়েছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীরা পহেলা বৈশাখে মঙ্গল শোভাযাত্রা আয়োজন করে স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

১৯৯৬ সালের মধ্যে, বিভিন্ন মিডিয়া সূত্র অনুসারে, অনুষ্ঠানটি ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নাম গ্রহণ করে, যা এখন পর্যন্ত বজায় রেখেছ। উল্লেখ্য যে, ২০২৫ সালের মার্চে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইকনিক ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র নাম পরিবর্তন করে ‘বৈশাখ শোভাযাত্রা’ করা হয়েছে।

যে সময়ে এই উৎসবটি শুরু হয়েছিল সে সময়ের পরিস্থিতি ছিল নিম্নরূপ:

১. ১৯৮০ এর দশকে বাংলাদেশ একটি সামরিক শাসনের অধীনে ছিল।
২. দেশ বন্যা ও রাজনৈতিক অস্থিরতায় ভুগছিল।
৩. ঢাকায় গণবিক্ষোভ চলছিল, যেখানে অনেক মানুষ মারা গিয়েছিল।

মঙ্গল শোভাযাত্রার তাৎপর্য

মঙ্গল শোভাযাত্রা শুধু একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নয়, এটি বাংলাদেশের জনগণের জীবনে গভীর তাৎপর্য বহন করে। এই শোভাযাত্রা বিভিন্ন দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ:

১. সাংস্কৃতিক পরিচয় ও ঐক্য

মঙ্গল শোভাযাত্রা বাংলাদেশের সকল ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ ও বয়সের মানুষকে একত্রিত করে। এটি ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশি পরিচয়ের প্রকাশ হিসেবে বিবেচিত হয়। শোভাযাত্রা দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, লোকশিল্প এবং ইতিহাসকে উদযাপন করে এবং দেশের ঐক্য ও সংহতিকে শক্তিশালী করে।

বাংলাদেশি লোকজ ঐতিহ্যের প্রতি গর্বকে প্রতিফলিত করে মঙ্গল শোভাযাত্রা উৎসব। এটি শুধু একটি মজার অনুষ্ঠান নয়, বরং বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও পরিচয়ের প্রকাশের একটি মাধ্যম।

২. ভালো-মন্দের প্রতীকী সংগ্রাম

মঙ্গল শোভাযাত্রা ভালো ও মন্দের মধ্যে সংগ্রামের প্রতীক। এতে সাধারণত তিনটি থিম থাকে:

১. নিপীড়ন ও অমঙ্গলের প্রতিনিধিত্ব – যা সমাজের নেতিবাচক দিকগুলিকে চিত্রিত করে।
২. সাহস ও শক্তির প্রদর্শন – যা বাংলাদেশি জনগণের সাহস এবং অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তিকে প্রকাশ করে।
৩. শান্তি ও ঐক্যের প্রতীক – যা সমাজের সহাবস্থান ও সম্প্রীতিকে উৎসাহিত করে।

এই শোভাযাত্রা বাংলাদেশের মানুষের দুর্দশা, অন্যায় ও অভাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের প্রতীক হিসেবে কাজ করে, এবং এটি আশা, সাহস ও সামাজিক পরিবর্তনের বার্তা বহন করে।

৩. UNESCO স্বীকৃতি

২০১৬ সালে ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় অনুষ্ঠিত ইন্টার-গভর্নমেন্টাল কমিটি অন সেফগার্ডিং ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজের ১১তম সেশনে UNESCO মঙ্গল শোভাযাত্রাকে “অস্পৃশ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য”-এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে। এই স্বীকৃতি বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক কূটনীতির একটি সাফল্য এবং এটি বাংলাদেশকে ধর্মনিরপেক্ষ ও সমন্বিত সমাজ হিসেবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে সাহায্য করে।

UNESCO-এর এই স্বীকৃতি মঙ্গল শোভাযাত্রাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উন্নীত করেছে এবং বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের মূল্য ও গুরুত্বকে বাড়িয়ে তুলেছে।

মঙ্গল শোভাযাত্রার বৈশিষ্ট্য

মঙ্গল শোভাযাত্রা তার বৈচিত্র্যময় বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত, যা এটিকে একটি অনন্য সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে:

১. বর্ণাঢ্য শিল্পকর্ম ও প্রতীক

শোভাযাত্রায় বিশাল আকৃতির বর্ণাঢ্য মুখোশ, মাছ, পাখি, জীবজন্তু, লোককাহিনী ও অন্যান্য প্রতীকের রেপ্লিকা ব্যবহার করা হয়। এই শিল্পকর্মগুলির প্রত্যেকটির একটি বিশেষ অর্থ রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ:

  • সূর্য: আলোর দিকে অগ্রসর হওয়ার আহ্বান, অন্ধকার দূর করার প্রতীক। সূর্যের দুটি আভা – একটি উজ্জ্বল এবং অন্যটি অন্ধকার – মানব প্রকৃতির দুটি দিককে প্রতিনিধিত্ব করে।
  • মাছ ও পাখি: দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে তুলে ধরে।
  • হাতি: সমৃদ্ধির প্রতীক।

চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা উৎসবের এক মাস আগে থেকে একসাথে কাজ করে মুখোশ ও ফ্লোট তৈরি করেন, যেগুলি অমঙ্গল শক্তি দূর করতে এবং অগ্রগতি সম্ভব করতে বলা হয়।

২. সংগীত, নৃত্য ও সাংস্কৃতিক উপস্থাপনা

মিছিলটিকে আরও প্রাণবন্ত করে তোলে সংগীত, নৃত্য, নাটকীয় উপস্থাপনা এবং সাংস্কৃতিক প্রদর্শনী। ঢোল, বাঁশি এবং করতাল সহ ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্র প্রায়শই একটি উত্সাহব্যঞ্জক পরিবেশ সৃষ্টি করতে বাজানো হয়। অংশগ্রহণকারীরা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে এবং ব্যানার, মুখোশ, বিভিন্ন থিমের প্রতিনিধিত্বকারী প্রপস বহন করে।

৩. জনসম্পৃক্ততা ও সহযোগিতা

মঙ্গল শোভাযাত্রা হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে সমৃদ্ধ হয়। বিভিন্ন বয়স ও পেশার মানুষ এই উৎসবে যোগ দেন, যা এটিকে একটি সত্যিকারের জনসম্পৃক্ত সাংস্কৃতিক অনუষ্ঠান করে তোলে। শোভাযাত্রার পরে, মুখোশগুলি প্রায়শই দান করা হয় বা দাতব্য তহবিল সংগ্রহের অংশ হিসেবে বিক্রি করা হয়।

মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন প্রক্রিয়া

মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন একটি বিস্তৃত প্রক্রিয়া, যা সাধারণত উৎসবের এক মাস আগে থেকে শুরু হয়:

১. প্রস্তুতি ও শিল্পকর্ম তৈরি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা একসাথে কাজ করে থিম নির্বাচন করেন এবং মুখোশ, ফ্লোট ও অন্যান্য শিল্পকর্ম তৈরি করেন। প্রতি বছর দেশের রাজনীতি ও সংস্কৃতির সাথে প্রাসঙ্গিক নতুন থিম বেছে নেওয়া হয়।

চারুকলা অনুষদ (FFA) বড় প্রতিষ্ঠানগুলিকে মঙ্গল শোভাযাত্রার সময় বাণিজ্যিক সাইনেজ স্থাপন করা থেকে বিরত রাখে। পরিবর্তে, প্রাক্তন ছাত্র, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা তাদের তৈরি শিল্পকর্ম, সোরা, মুখোশ এবং হস্তশিল্প বিক্রি করে অর্থ সংগ্রহ করেন।

২. মিছিল রুট ও সুরক্ষা ব্যবস্থা

মিছিলটি সাধারণত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা অনুষদ থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ, রমনা টেনিস কমপ্লেক্স, শিশু পার্ক হয়ে টিএসসি গোলচত্বর হয়ে আবার শুরুর স্থানে ফিরে আসে।

নিরাপত্তা বাহিনী মিছিলের পুরো রুট জুড়ে সতর্ক থাকে। র‍্যাবের মোটরসাইকেল পেট্রোল টিম, পুলিশের স্পেশাল ওয়েপন্স অ্যান্ড ট্যাকটিকস (SWAT) টিম, অন্যান্য পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মীরা মিছিলে উপস্থিত থাকেন। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য কিছু ড্রোন থাকে, এছাড়াও ওয়াচটাওয়ার থাকে।

মঙ্গল শোভাযাত্রার অনুষ্ঠান

প্রতি বছর ১৪ এপ্রিল, পহেলা বৈশাখে, হাজার হাজার মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে সকালে জমায়েত হন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে একটি বড় অংশ ঐতিহ্যবাহী বাংলা পোশাক পরিধান করে, যেমন পুরুষদের জন্য পাঞ্জাবি এবং মহিলাদের জন্য শাড়ি।

শোভাযাত্রাটি সকাল ৯টা থেকে শুরু হয় এবং এতে অংশগ্রহণকারীরা ঢোলের তালে তালে নাচতে নাচতে এগিয়ে যান। কিছু অংশগ্রহণকারী ‘পহেলা বৈশাখ’ লেখা হেডব্যান্ড পরে, আবার কেউ ফুলের মালা পরে। বড় সংখ্যক অংশগ্রহণকারী ছোট ঢোল বহন করে, অন্যরা মাছ, পাখি, পেঁচা, হাতি এবং ফুলের আকৃতির বর্ণাঢ্য মুখোশ পরে। তাদের পাশে হাতি, পাখি এবং বনরুই (Pangolin) এর বিশাল প্রতীক চলে।

এই উৎসবে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক উপদেষ্টা, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সহ বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকেন।

বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে মঙ্গল শোভাযাত্রা

মঙ্গল শোভাযাত্রা বাংলাদেশের সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে:

১. UNESCO স্বীকৃতির প্রক্রিয়া

২০১৪ সালে বাংলা একাডেমি একটি মনোনয়ন ফাইল প্রস্তুত করে, যা বাংলাদেশের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় দ্বারা অনুমোদিত হয় এবং UNESCO-তে জমা দেওয়া হয়। ৩০ নভেম্বর ২০১৬-এ ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবায় অনুষ্ঠিত ইন্টার-গভর্নমেন্টাল কমিটি অন সেফগার্ডিং ইনট্যাঞ্জিবল কালচারাল হেরিটেজের ১১তম সেশনে UNESCO মঙ্গল শোভাযাত্রা উৎসবকে অস্পৃশ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে নির্বাচিত করে।

২. আন্তর্জাতিক প্রভাব

UNESCO-এর স্বীকৃতি মঙ্গল শোভাযাত্রার দৃশ্যমানতা বাড়িয়েছে এবং বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ ও সমন্বিত সমাজ হিসেবে ইমেজ শক্তিশালী করতে সাহায্য করেছে। এই স্বীকৃতি উৎসবের লোকপ্রিয়তা ও গুরুত্ব আরও বাড়িয়েছে এবং ২০১৭ সাল থেকে বাংলাদেশ সরকার সারা দেশে এই মিছিল আয়োজন করছে।

বর্তমান সময়ে মঙ্গল শোভাযাত্রার গুরুত্ব

আজকের সমাজে মঙ্গল শোভাযাত্রার গুরুত্ব আরও বেড়েছে:

১. সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ

একটি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য শুধু স্মারক ও জাদুঘর নয়, বরং পূর্বপুরুষদের থেকে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া জীবন্ত অস্পৃশ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য (ICH) ও সংস্কৃতির প্রকাশও। মঙ্গল শোভাযাত্রা এই ধরনের একটি জীবন্ত ঐতিহ্য, যা বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক বিবিধতা ও ঐতিহ্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২. সামাজিক ঐক্য ও সম্প্রীতি

বর্তমান সময়ে সামাজিক বিভাজন ও অসহিষ্ণুতা বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে, মঙ্গল শোভাযাত্রার মতো উৎসবগুলি সকল ধর্ম, জাতি, লিঙ্গ ও বয়সের মানুষকে একত্রিত করে সামাজিক ঐক্য ও সম্প্রীতি বাড়াতে সাহায্য করে। এটি গণতন্ত্রের জন্য সংহতি এবং একটি সাধারণ মূল্যবোধকেও প্রতিনিধিত্ব করে, যা জাতি, বিশ্বাস, ধর্ম, লিঙ্গ বা বয়স নির্বিশেষে মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে।

৩. অর্থনৈতিক ও সামাজিক মূল্য

অস্পৃশ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের গুরুত্ব শুধু সাংস্কৃতিক প্রকাশের মধ্যেই নয়, বরং যে জ্ঞান ও কৌশল হস্তান্তরিত হয় তার মধ্যেও রয়েছে, যা মানুষ ও দেশের জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক মূল্য প্রকাশ করে।

চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

মঙ্গল শোভাযাত্রা কিছু চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে, কিন্তু এর সাথে উজ্জ্বল সম্ভাবনাও রয়েছে:

১. ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ

মঙ্গল শোভাযাত্রার ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার সাথে সম্পর্কিত একটি ঝুঁকি হল এর অত্যধিক বাণিজ্যিকীকরণ। যদিও শোভাযাত্রাটি স্থানীয় সীমানা ছাড়িয়ে তার বার্তা ছড়িয়ে দিতে এবং অনেক মানুষকে – বিশেষ করে শিশুদের – অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে এবং শান্তির পক্ষে দাঁড়াতে অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতায় বিশেষভাবে আকর্ষণীয়, ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ সংশ্লিষ্ট অস্পৃশ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

এছাড়া, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এই দেশে মৌলবাদীরা উৎসবটি বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছে, এই বলে যে এটি অ-ইসলামিক মূল্যবোধকে উৎসাহিত করে। এই ধরনের অবস্থান মঙ্গল শোভাযাত্রা দ্বারা হাইলাইট করা অ-ধর্মীয়, ট্রান্স-সাম্প্রদায়িক বাঙালি পরিচয়ের উদযাপনের জন্য একটি সম্ভাব্য ঝুঁকি তৈরি করে।

মুম্বাইয়ের রাজপথে বিশ্বজয়ীদের উন্মাদনা: রোহিত-কোহলির নাচে মেতে উঠলো লক্ষ লক্ষ ভক্ত!

২. সম্ভাবনা ও উন্নয়ন

মঙ্গল শোভাযাত্রার জনপ্রিয়তা ও UNESCO স্বীকৃতি এটিকে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক টুরিজম প্রচারের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার করে তুলেছে। এটি দেশের সাংস্কৃতিক বিবিধতা ও ঐতিহ্যের প্রতি পর্যটকদের আকর্ষণ করতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

এছাড়া, এই উৎসব সারা বিশ্বে বাংলাদেশের ইমেজ উন্নীত করতে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান বাড়াতে ব্যবহার করা যেতে পারে।

মঙ্গল শোভাযাত্রা বাংলাদেশের একটি অমূল্য সাংস্কৃতিক সম্পদ, যা শুধুমাত্র একটি বর্ণাঢ্য উৎসব নয়, বরং দেশের ইতিহাস, সংস্কৃতি এবং জনগণের সামাজিক-রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। ১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে একটি স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে শুরু হয়ে, এটি এখন UNESCO স্বীকৃত বিশ্ব ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে।

মঙ্গল শোভাযাত্রা বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয়, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং ঐক্যের প্রতীক হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এটি ভালো-মন্দের সংগ্রাম, আশা-হতাশা এবং জীবনের নবায়নের বার্তা বহন করে। UNESCO কর্তৃক “অস্পৃশ্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য” হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার পর, এটি আরও বেশি জনপ্রিয়তা ও গুরুত্ব অর্জন করেছে।সামগ্রিকভাবে, মঙ্গল শোভাযাত্রা শুধু একটি বার্ষিক উৎসব নয়, বরং বাংলাদেশের মানুষের সাহস, সৃজনশীলতা এবং সাংস্কৃতিক গর্বের একটি জীবন্ত প্রমাণ। এটি আগামী প্রজন্মের জন্য বাংলাদেশের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও প্রচারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং বাংলাদেশকে বিশ্ব সাংস্কৃতিক মানচিত্রে একটি বিশেষ স্থান দিয়েছে।

সাম্প্রতিক খবর:

অ্যাকিউট প্যানক্রিয়াটাইটিস: হঠাৎ অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহের ভয়াবহতা ও করণীয়

এক্স-ফ্যাক্টর SUV: Mahindra XUV700 – আধুনিক প্রযুক্তি, স্টাইল ও পারফরম্যান্সে অনন্য

আধুনিক স্পিড, স্টাইল আর বাজেটের মেলবন্ধন – ভারতের বাজারে আসছে ৫টি সেরা Sub 500 cc বাইক!

ইরান-ইসরায়েল: বোমা, ফাইটার জেট আর গোয়েন্দা প্রযুক্তি—কার হাতে কত শক্তি?

SIF (Specialized Investment Fund) কী? বিনিয়োগকারীদের জন্য নতুন দিগন্ত

বন্ধু ছিল একসময়, এখন রক্তশত্রু! ইরান-ইসরায়েল সম্পর্কের বিস্ফোরক ইতিহাস

বদলে গেল টিকিট বুকিংয়ের নিয়ম, কি বলছে IRCTC! জানুন বিস্তারিত

‘মাত্র তিন ঘণ্টায় বৈষ্ণোদেবী থেকে শ্রীনগর: চালু হল বিশ্বের সর্বোচ্চ রেলসেতু পেরিয়ে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস’

Confirm টিকিটেও যাত্রীর নাম বদলাবেন কিভাবে? সহজ নিয়মেই সমাধান!

অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস বন্ধের দিন : সাপ্তাহিক বন্ধের বিস্তারিত তথ্য জানুন

শিয়ালদা-বনগাঁ লাইনে AC লোকাল ট্রেন চলাচল শুরু হচ্ছে, জেনে নিন স্টপেজ ও ভাড়ার বিস্তারিত তথ্য

বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের সময়সূচী: উত্তরবঙ্গের সাথে রাজধানীর সুবর্ণ সেতু

দীঘার নতুন জগন্নাথ মন্দির: পুরীর অনুরূপ দর্শন এবার বাঙালির দোরগোড়ায়

Skyscanner vs. Google Flights: ২০২৫ সালে সস্তায় বিমান টিকেট খুঁজে পাওয়ার সেরা উপায়

হিমাচল প্রদেশের শীর্ষ ১০ বিলাসবহুল হোটেল ও রিসোর্ট: স্বর্গীয় অভিজ্ঞতার নির্দেশিকা

বিমান টেকঅফের সময় এসি বন্ধ থাকে কেন? জানুন অজানা বিমান প্রযুক্তির রহস্য

আরো খবর

নিউজ বাংলা

  • আন্তর্জাতিক
  • বিবিধ
  • বাংলাদেশ
  • বাংলাদেশ রাজনীতি

খেলাধুলা

  • অলিম্পিক
  • ক্রিকেট
  • ফুটবল
  • সংস্কৃতি

টেকনোলজি

  • গেজেট
  • এআই
  • আইওএস
  • প্রযুক্তি

© 2025 Think Bengal All Rights Reserved
  • আমাদের সম্পর্কে
  • যোগাযোগ
  • ফ্যাক্ট চেকিং পলিসি
  • প্রাইভেসি পলিসি
  • কারেকশন পলিসি

Type above and press Enter to search. Press Esc to cancel.