Magic of Manikbabu’s MEGH film: অভিনন্দন বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত ‘মানিকবাবুর মেঘ’ ছবিটি শনিবার শহরের প্রেক্ষাগৃহে ১০০ দিন সম্পূর্ণ করেছে। স্বল্প বাজেটের এই ছবিটি তথাকথিত তারকা ছাড়াই দীর্ঘ সময় ধরে দর্শক আকর্ষণ করে চলেছে, যা বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করছে।
‘মানিকবাবুর মেঘ’ হলো একটি বাংলা ভাষায় নির্মিত ভারতীয় নাট্য চলচ্চিত্র, যা অভিনন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথম পরিচালিত ছবি। ছবিটি প্রযোজনা করেছেন বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায় ও মোনালিসা মুখোপাধ্যায়। এতে একজন ভীতু, কুঁকড়ে থাকা, একাকী, নিম্নমধ্যবিত্ত বাঙালির গল্প বলা হয়েছে।ছবিটি ২০২৪ সালের ১২ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। মুক্তির পর থেকেই ছবিটি দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে। পুজোর আগে জানা গিয়েছিল, চন্দন সেন অভিনীত ছবিটি নন্দন থেকে সরে যাবে। কিন্তু তার পরেও কর্তৃপক্ষ ছবিটিকে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।ছবির অন্যতম প্রযোজক বৌদ্ধায়ন মুখোপাধ্যায় বলেছেন, “এটা অনেকটা মানিকবাবুর মেঘ না চাইতেই জল পাওয়ার মতো পরিস্থিতি। নন্দন কেন ছবিটা এখনও দেখাচ্ছে, তা আমার জানা নেই। কিন্তু, তাঁরা জায়গা দেওয়ায় আমরা কৃতজ্ঞ। ছবিটা যে দর্শক এখনও দেখতে আসছেন, সেটা আমরা প্রত্যেকেই তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করছি।”
চঞ্চলের অভিনয়ে মুগ্ধ দর্শক, ‘পদাতিক’-এ জীবন্ত হয়ে উঠলেন মৃণাল সেন
পরিচালক অভিনন্দন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “আশা করিনি। কিন্তু, আজকে খুবই ভাল লাগছে।” তিনি বিশ্বাস করেন, ছবি যদি ভাল হয়, তা হলে দর্শক সেই ছবি সময়-সুযোগ করে দেখে নেন। তিনি আরও বলেন, “অনেকেই ছবিটা দেখে কবিতা লিখেছেন, ছবি এঁকেছেন। সমাজমাধ্যমে পোস্ট করেছেন, আমাকে পাঠিয়েছেন। অনেক দিন পর কোনও বাংলা ছবিকে ঘিরে এই উৎসাহ ছবিকে আরও বেশি দর্শকের কাছে পৌঁছে দিয়েছে।”
‘মানিকবাবুর মেঘ’-এর কাহিনী একজন নিঃসঙ্গ মধ্যবয়সী ভাড়াটে মানিক (চন্দন সেন) কে কেন্দ্র করে আবর্তিত। মানিক তার অসুস্থ বাবার সাথে থাকেন। তার জীবন একঘেয়ে ও অপ্রীতিকর, যা তার গাছপালা, একটি মাকড়সা, পিঁপড়া এবং ঘরের টিকটিকিকে ঘিরে আবর্তিত। মানিকের বাবা একদিন মারা যান এবং মানিককে ভাড়া বাড়ি খালি করার জন্য এক মাসের নোটিশ দেওয়া হয়। ঠিক যখন তার চারপাশের জগত ভেঙে পড়তে শুরু করে, মানিক একটি মেঘের সাথে দেখা করে। প্রাথমিকভাবে মেঘকে স্টকার বলে ভুল করে মানিক শীঘ্রই তার মূর্খতা আবিষ্কার করে। মেঘ এবং একজন মানুষের মধ্যে সবচেয়ে অনন্য প্রেমের গল্প যা প্রকাশ পায়।
ছবিটি শুধু বাংলাদেশেই নয়, আন্তর্জাতিক মহলেও সমাদৃত হয়েছে। এটি ২০২১ সালের ১৭ নভেম্বর এস্তোনিয়ায়, ২০২২ সালের ৮ মার্চ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, ১৩ আগস্ট যুক্তরাজ্যে, ২৩ আগস্ট হংকং সহ বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে মুক্তি পেয়েছে। ছবিটি ৩২টি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে এবং বেশ কয়েকটি পুরস্কার জিতেছে।চলচিত্রটিতে অভিনয়ের জন্য চন্দন সেন রাশিয়ায় প্যাসিফিক মেরিডিয়ান চলচ্চিত্র উৎসবে সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন।
সমালোচকদের প্রশংসাও কুড়িয়েছে ‘মানিকবাবুর মেঘ’। আনন্দবাজার পত্রিকার সুদীপ ঘোষ ১০ এর মধ্যে ৯ রেটিং প্রদান করেছেন। সংবাদ প্রতিদিনের শম্পালী মৌলিক বলেছেন, “নিঃসঙ্গ, অন্তর্মুখী মানুষের চরিত্রে চন্দন সেন অনবদ্য। বাড়িওলার চরিত্রে অরুণ গুহঠাকুরতা বেশ ভালো। স্বল্প পরিসরে দেবেশ রায়চৌধুরিও চমৎকার। ক্যামিও চরিত্রে ব্রাত্য বসু যথাযথ।
টাইমস অফ ইন্ডিয়া ছবিটিকে ৪ তারা দিয়েছে। তাদের সমালোচনায় বলা হয়েছে, “চন্দন সেনের মানিকের চরিত্রায়ণ প্রায় নিখুঁত – তার অপরিচ্ছন্ন চুল ও দাড়ি থেকে শুরু করে তার দীর্ঘ নীরবতা যা অনেক কিছু বলে। ছবিটি ধীরে ধীরে একটি সংবেদনশীল আত্মার চরিত্রচিত্র আঁকে যা ক্লান্তি ও নিরর্থকতার ধ্বংসস্তূপের নীচে গভীরভাবে সমাহিত।”
জিও সিনেমায় ভয়ের সিনেমা: ৫টি রোমাঞ্চকর ছবি যা আপনার রক্ত জমিয়ে দেবে!
চলচ্চিত্রবিদ্যার গবেষক ও অধ্যাপক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় মনে করেন, গান বা তারকা ছাড়াও যে ছবি সফল হতে পারে, এই ছবিটি তার অন্যতম নিদর্শন। তিনি বলেন, “মানবিক গল্প বলতে পারলে সেটা কিন্তু দর্শকের মন জয় করে নেয়।” ‘মানিকবাবুর মেঘ’-এর সাফল্যের পিছনে রয়েছে এর মানবিক গল্প, অসাধারণ অভিনয়, এবং পরিচালকের দক্ষতা। ছবিটি একটি নিঃসঙ্গ মানুষের জীবনে আশার আলো দেখায়, যা দর্শকদের মন ছুঁয়ে যায়। এর সাথে যুক্ত হয়েছে চমৎকার চিত্রগ্রহণ ও সঙ্গীত, যা ছবিটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।মুম্বই চলচ্চিত্র উৎসবে ‘চলচ্চিত্র উৎসব থেকে বক্স অফিস’ শীর্ষক আলোচনচক্রে ‘মানিকবাবুর মেঘ’ অন্যতম ছবি হিসেবে স্থান পেয়েছে।
এটি ছবিটির জন্য আরেকটি বড় সাফল্য।’মানিকবাবুর মেঘ’-এর এই অভূতপূর্ব সাফল্য প্রমাণ করে যে, বাংলা চলচ্চিত্রে এখনও ভাল গল্প ও উচ্চমানের শিল্পকর্মের চাহিদা রয়েছে। এটি নতুন পরিচালক ও শিল্পীদের জন্য একটি অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করবে, যারা নিজস্ব স্টাইলে গুণমানসম্পন্ন ছবি তৈরি করতে চান।
মন্তব্য করুন