মার্করামের দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ইতিহাসের দোরগোড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকা: লর্ডসে একগুচ্ছ বিশ্বরেকর্ড

Aiden Markram century: আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লর্ডসের ঐতিহাসিক মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার এইডেন মার্করাম গড়েছেন একাধিক নজিরবিহীন রেকর্ড। তৃতীয় দিনের খেলা শেষে তিনি ১৫৯ বলে…

Ani Roy

 

Aiden Markram century: আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫ ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লর্ডসের ঐতিহাসিক মাঠে দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার এইডেন মার্করাম গড়েছেন একাধিক নজিরবিহীন রেকর্ড। তৃতীয় দিনের খেলা শেষে তিনি ১৫৯ বলে ১০২ রানে অপরাজিত থেকে দলকে জয়ের থেকে মাত্র ৬৯ রানের দূরত্বে নিয়ে এসেছেন, যা দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।

প্রথম ইনিংসে শূন্যতে আউট হলেও, দ্বিতীয় ইনিংসে মার্করামের ব্যাটে দেখা যায় দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন। তার এই সেঞ্চুরি শুধু ম্যাচ পরিস্থিতিকেই বদলে দেয়নি, বরং বিশ্ব ক্রিকেটের রেকর্ডবইয়ে একাধিক নতুন পাতাও যোগ করেছে। তৃতীয় উইকেটে টেম্বা বাভুমার (৬৫*) সঙ্গে ১৪৩ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে প্রথম আইসিসি ট্রফির স্বপ্নের একেবারে কাছাকাছি নিয়ে গেছেন মার্করাম।

লর্ডসে মার্করামের এই সেঞ্চুরি কতটা ঐতিহাসিক? প্রথমত, তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার ইতিহাসে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে সেঞ্চুরি করার কৃতিত্ব অর্জন করেছেন। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো ব্যাটার বিশ্বকাপ, চ্যাম্পিয়নস ট্রফি বা টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে শতরান করতে পারেননি। ফলে, এই ইনিংসটি দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।

দ্বিতীয়ত, লর্ডসের মাঠে চতুর্থ ইনিংসে সেঞ্চুরি করা অত্যন্ত দুর্লভ ঘটনা। ৪১ বছর পর কোনো বিদেশি ব্যাটার হিসেবে চতুর্থ ইনিংসে লর্ডসে শতরান করলেন মার্করাম। তার আগে এই কৃতিত্ব ছিল গর্ডন গ্রিনিজ (২১৪*, ১৯৮৪), রয় ফ্রেডরিক্স (১৩৮, ১৯৭৬), মাইকেল ক্লার্ক (১৩৬, ২০০৯), অজিত আগারকার (১০৯*, ২০০২), এবং ডন ব্র্যাডম্যান (১০২*, ১৯৩৮)-এর মতো কিংবদন্তিদের দখলে। এই তালিকায় এবার যুক্ত হলেন এইডেন মার্করাম।

তৃতীয়ত, আইসিসি ফাইনালে লর্ডসে সেঞ্চুরি করার দিক থেকেও তিনি বিরল ক্লাবে প্রবেশ করলেন। তার আগে কেবল ক্লাইভ লয়েড (১৯৭৫) ও ভিভ রিচার্ডস (১৯৭৯) আইসিসি ফাইনালে লর্ডসে শতরান করেছিলেন। এছাড়া, ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনালে সেঞ্চুরি করা মাত্র তৃতীয় ব্যাটার তিনি—এর আগে স্টিভ স্মিথ ও ট্রাভিস হেড এই কৃতিত্ব দেখিয়েছেন।

এছাড়া, চতুর্থ ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দলের বিপক্ষে লর্ডসে শতরান করা মানেই চাপের মুখে অসাধারণ মানসিক দৃঢ়তার পরিচয়। ম্যাচের পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত টানটান—দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৮২ রানের বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে হচ্ছিল, যেখানে অস্ট্রেলিয়ান পেসাররা বারবার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছিলেন। সেই চাপ সামলে, শুরুতে উইকেট হারানোর পরও মার্করাম একদিকে ক্রিজ আঁকড়ে রেখে দলকে এগিয়ে নিয়ে যান।

মার্করামের এই ইনিংস তার ক্যারিয়ারের অষ্টম টেস্ট সেঞ্চুরি এবং অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তৃতীয়। ১৫৬ বলে এই শতরানটি এসেছে নিখুঁত টেম্পারামেন্ট, টেকনিক ও ধৈর্যের মিশেলে—যা দক্ষিণ আফ্রিকার ড্রেসিংরুমে তার গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

প্রসঙ্গত, এই ম্যাচের প্রথম ইনিংসে তিনি শূন্যতে আউট হন, যা ইংল্যান্ডের ১৪৫ বছরের টেস্ট ইতিহাসে বিরল ঘটনা—দুই দলের ওপেনারই প্রথম ইনিংসে শূন্যতে ফেরেন। সেই হতাশা কাটিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে এমন দুর্দান্ত শতরান নিঃসন্দেহে মানসিক দৃঢ়তার অনন্য নজির।

মার্করামের এই সেঞ্চুরির ফলে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন ২৮ বছর পর আইসিসি ট্রফি জয়ের দ্বারপ্রান্তে। শেষ দিনের খেলায় জয়ের জন্য তাদের দরকার মাত্র ৬৯ রান, হাতে রয়েছে ৮ উইকেট। বাভুমার সঙ্গে তার পার্টনারশিপ দলের জন্য আশার আলো জ্বালিয়েছে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার ‘চোকার্স’ তকমা মাথায় থাকলেও, এবার ইতিহাস গড়ার জন্য তারা প্রস্তুত বলেই মনে হচ্ছে।

সবশেষে, এইডেন মার্করামের লর্ডসের শতরান শুধু ব্যক্তিগত কৃতিত্ব নয়, বরং দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন যুগের সূচনা। চাপের মুখে, বিশ্বমঞ্চে, ঐতিহাসিক ভেন্যুতে এই ইনিংস তাকে কিংবদন্তিদের কাতারে তুলে দিয়েছে—যা বহুদিন মনে রাখবে ক্রিকেট বিশ্ব।

About Author
Ani Roy

অনি বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এডুকেশনে স্নাতক ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। শিক্ষার প্রতি গভীর অনুরাগ এবং আজীবন শেখার প্রতি প্রতিশ্রুতি নিয়ে অনি নতুন শিক্ষামূলক পদ্ধতি ও প্র্যাকটিসগুলি অন্বেষণ করতে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তার একাডেমিক যাত্রা তাকে শিক্ষার তত্ত্ব এবং ব্যবহারিক শিক্ষণ কৌশলগুলিতে দৃঢ় ভিত্তি প্রদান করেছে। অনি অন্তর্দৃষ্টি এবং দক্ষতা তার চিন্তাশীল লেখাগুলিতে প্রতিফলিত হয়, যা শিক্ষাবিদ এবং শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত ও তথ্যপূর্ণ করার উদ্দেশ্যে লেখা। তিনি তার আকর্ষণীয় এবং প্রভাবশালী কাজের মাধ্যমে শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদান রাখতে থাকেন।