স্টাফ রিপোর্টার
১১ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ
অনলাইন সংস্করণ

চিকিৎসকদের গণ ইস্তফায় বিপর্যস্ত পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যব্যবস্থা – কী হবে রোগীদের?

Mass Resignation of Medical Professors Impact on Healthcare

পশ্চিমবঙ্গের সরকারি মেডিকেল কলেজগুলিতে একের পর এক বরিষ্ঠ চিকিৎসক ও অধ্যাপকদের গণ ইস্তফা দেওয়ার ঘটনায় রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থা চরম সংকটের মুখে পড়েছে। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের প্রতি সংহতি জানিয়ে এই গণ ইস্তফা দেওয়া হয়েছে।

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) কলকাতার আর জি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৫০ জনেরও বেশি বরিষ্ঠ চিকিৎসক গণ ইস্তফা দেন। এরপর বুধবার (৯ অক্টোবর) মেডিকেল কলেজ কলকাতা, ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বরিষ্ঠ চিকিৎসকরাও গণ ইস্তফা দিয়েছেন। মেডিকেল কলেজ কলকাতা থেকে ৭০ জনেরও বেশি, উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ থেকে ৫০ জন এবং ক্যালকাটা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ থেকে ৩৫ জন চিকিৎসক গণ ইস্তফা দিয়েছেন।

এই গণ ইস্তফার মূল কারণ হল জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানানো। গত ৫ অক্টোবর থেকে ৭ জন জুনিয়র ডাক্তার অনির্দিষ্টকালের জন্য অনশন শুরু করেছেন। তাদের ১০ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে প্রধান স্বাস্থ্য সচিবকে অপসারণ, পশ্চিমবঙ্গ মেডিকেল কাউন্সিল ও পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য নিয়োগ বোর্ডের মতো সংস্থাগুলিকে ভেঙে দেওয়া, মেডিকেল কলেজগুলিতে ছাত্র ইউনিয়ন নির্বাচন অনুমোদন দেওয়া ইত্যাদি।

“মাটি নয়, বিচার চাই”: সোনাগাছির যৌনকর্মীদের অভিনব প্রতিবাদ আরজি কর কাণ্ডে

বরিষ্ঠ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তাদের গণ ইস্তফা প্রতীকী। এর মাধ্যমে তারা রাজ্য সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চান যাতে সরকার জুনিয়র ডাক্তারদের দাবিগুলি নিয়ে আলোচনায় বসে। আর জি কর হাসপাতালের অর্থোপেডিক সার্জন ডাঃ সুনীত হাজরা বলেছেন, “আমাদের ইস্তফা প্রতীকী, যার উদ্দেশ্য সরকারকে আলোচনায় বসতে বাধ্য করা। আমরা চাই না রোগীরা কষ্ট পান।”

তবে রাজ্য সরকার এখনও পর্যন্ত এই গণ ইস্তফা নিয়ে কোনও সরকারি প্রতিক্রিয়া জানায়নি। একজন বরিষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক ইস্তফাপত্র পাওয়া যায়নি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, ইস্তফা দেওয়ার জন্য একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়।

এদিকে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই গণ ইস্তফার প্রভাব এখনও পর্যন্ত স্বাস্থ্য পরিষেবায় পড়েনি। দুর্গাপূজার ছুটির কারণে বহির্বিভাগে রোগীর সংখ্যা কম থাকায় পরিষেবা স্বাভাবিক রয়েছে। বরিষ্ঠ ও কনিষ্ঠ চিকিৎসক, আবাসিক চিকিৎসক ও সহকারী অধ্যাপকরা নিয়মিত কাজ করছেন।

তবে চিকিৎসকরা সতর্ক করে দিয়েছেন, রাজ্য সরকার যদি দ্রুত সমস্যার সমাধান না করে তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। ২০১৯ সালেও এনআরএস হাসপাতালে দুই জুনিয়র ডাক্তারের উপর হামলার ঘটনায় এরকম গণ ইস্তফার ঘটনা ঘটেছিল। তখন রাজ্য সরকার ইস্তফাগুলি গ্রহণ করেনি এবং পরে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করেছিল।

পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় এই সংকট নতুন নয়। রাজ্যে চিকিৎসকদের অভাব, পর্যাপ্ত পরিকাঠামোর অভাব, নিরাপত্তার অভাব ইত্যাদি সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে। ২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, রাজ্যের মোট স্বাস্থ্য বাজেট ছিল ১৬,৩৬৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে ১০,৯২২ কোটি টাকা সরকারি হাসপাতালগুলির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু সমালোচকরা মনে করেন, জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি অনুযায়ী এই বাজেট কমপক্ষে ৮% হওয়া উচিত, যা বর্তমানে মাত্র ৪.৫%।

রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর দিকে তাকালে দেখা যায়, মোট ১৩টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল রয়েছে যেখানে ১২,৬৪১টি শয্যা রয়েছে। এছাড়া ১৫টি জেলা হাসপাতাল, ৪৫টি মহকুমা হাসপাতাল, ৩৩টি রাজ্য সাধারণ হাসপাতাল, ২৬৯টি গ্রামীণ হাসপাতাল এবং ৭৯টি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। কিন্তু এই বিশাল পরিকাঠামো চালানোর জন্য পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর অভাব রয়েছে।

বর্তমান পরিস্থিতিতে রোগীদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হল পর্যাপ্ত চিকিৎসা পাওয়া। যদিও সরকার দাবি করছে যে পরিষেবা স্বাভাবিক রয়েছে, কিন্তু বাস্তবে অনেক রোগী হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে জটিল রোগের চিকিৎসা, জরুরি অপারেশন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে।

R.G Kar Doctor Rape-Murder: চিকিৎসক হত্যার প্রতিবাদে দেশজুড়ে আন্দোলন

এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য রাজ্য সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। চিকিৎসকদের দাবিগুলি খতিয়ে দেখে যেগুলি যুক্তিযুক্ত সেগুলি মেনে নেওয়া, চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পরিকাঠামো উন্নয়ন করা এবং নতুন চিকিৎসক নিয়োগ করা জরুরি। একইসঙ্গে চিকিৎসকদেরও মনে রাখতে হবে যে তাদের প্রথম দায়িত্ব হল রোগীদের সেবা করা। উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমেই এই জটিল পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ সম্ভব।

পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্য সূচকগুলি দেখলে দেখা যায়, জন্মহার, মৃত্যুহার, শিশু মৃত্যুহার ইত্যাদি ক্ষেত্রে রাজ্যটি জাতীয় গড়ের তুলনায় ভাল অবস্থানে রয়েছে। ২০১০ সালের হিসাব অনুযায়ী, রাজ্যের জন্মহার ছিল ১৬.৮ (জাতীয় গড় ২২.১), মৃত্যুহার ৬.০ (জাতীয় গড় ৭.২) এবং শিশু মৃত্যুহার ৩১ (জাতীয় গড় ৪৭)। কিন্তু বর্তমান সংকট যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তাহলে এই সূচকগুলি খারাপ হতে পারে।

সামগ্রিকভাবে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যব্যবস্থা এক গুরুতর সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসকদের গণ ইস্তফা এবং জুনিয়র ডাক্তারদের অনশন আন্দোলন রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য রাজ্য সরকার, চিকিৎসক সমাজ এবং সাধারণ মানুষ সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। রোগীদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সমস্ত পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে।

 

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ইলেকট্রিক গাড়ির চার্জ নিয়ে দুশ্চিন্তার দিন শেষ! ব্রিটিশ ফার্মের সঙ্গে হাত মেলাতে চলেছে CESC

রাজনীতির মাঠ থেকে ওটিটি পর্দায়: সিপিএম নেত্রী দীপ্সিতা ধর এখন ‘জিদ্দি গার্লস’-এর বিদ্রোহী চরিত্রে!

ভারতে খুচরা মুদ্রাস্ফীতি ৩.৬১ শতাংশে নেমেছে: সবজির দাম কমায় জনগণের স্বস্তি

রেশন কার্ডে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট যুক্ত করার প্রস্তাব: কেন্দ্রের পথে রাজ্যের সমর্থন!

আইপিএলের ছক্কার রাজা কে? টুর্নামেন্ট শুরুর আগে দেখে নিন শীর্ষ দশের তালিকা

মাহমুদউল্লাহর ক্রিকেট যাত্রার ইতি: আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিদায়ের ঘোষণা

অষ্টম বেতন কমিশন: সরকারি কর্মচারীদের জন্য সাত বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম ডিএ বৃদ্ধির সম্ভাবনা, হতাশার ছায়া!

ভারতের মাটিতে গোয়েন্দা বিশ্বের মহাজমায়েত: দোভালের নেতৃত্বে দিল্লিতে বৈঠক!

আলো কম? WhatsApp ভিডিও কলে যা করবেন, চমকে যাবেন!

রবিবার থেকে চার জেলায় তাপপ্রবাহের দাপট, কবে মিলবে স্বস্তি

১০

বিশ্ব মঞ্চে ভারতের শিক্ষার জয়যাত্রা: বাংলার প্রতিষ্ঠান কোথায় দাঁড়িয়ে?

১১

ফেসবুক পোস্ট লুকান: নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে রাখার কৌশল!

১২

চন্দননগরে ফরাসি শাসনমুক্তির ৭৫ বছর: হেরিটেজ রিসার্চ সেন্টারের যাত্রা শুরু

১৩

জিমেইলে ই-মেইল শিডিউল: গোপন ট্রিকটি জেনে নিন!

১৪

৫০ টি দোলের শুভেচ্ছা, প্রিয়জনের সাথে উৎসব আরো রঙিন হোক

১৫

স্মার্টফোন থেকে অপ্রয়োজনীয় অ্যাপ সরাবেন যেভাবে

১৬

ওভার থিংকিং ধরা পরে যে সাতটি আচরণে

১৭

ইউনুসের ‘নতুন’ বাংলাদেশে ধর্ষণের ঊর্ধ্বগতি: রাজপথে প্রতিবাদের ঝড় ছাত্রদের

১৮

ভারতে ইন্টারনেট বিপ্লবের নতুন দিগন্ত: স্টারলিঙ্কের সঙ্গে এয়ারটেলের ঐতিহাসিক চুক্তি

১৯

অস্ত্র আমদানির দৌড়ে শীর্ষে ইউক্রেন, ভারতের স্থান দ্বিতীয়: বিশ্বে কী বার্তা?

২০
close