Maya Tata as Ratan Tata Successor: রতন টাটার মৃত্যুর পর টাটা গ্রুপের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে মায়া টাটার নাম সামনে এসেছে, যিনি রতন টাটার ভাইপো নোয়েল টাটার মেয়ে। মাত্র ৩৪ বছর বয়সী মায়া ইতিমধ্যেই টাটা গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করছেন এবং তার দক্ষতা ও নেতৃত্বের গুণাবলী প্রমাণ করেছেন।
মায়া টাটা বেয়েস বিজনেস স্কুল এবং ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষা লাভ করেছেন। তিনি তার ক্যারিয়ার শুরু করেন টাটা অপরচুনিটিজ ফান্ডে, যেখানে তিনি পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট এবং বিনিয়োগকারীদের সাথে সম্পর্ক তৈরিতে দক্ষতা অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি টাটা ডিজিটালে যোগ দেন এবং টাটা নিউ অ্যাপ লঞ্চে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
মায়া টাটা বর্তমানে টাটা মেডিক্যাল সেন্টার ট্রাস্টের বোর্ড সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এই ট্রাস্ট কলকাতায় একটি ক্যান্সার হাসপাতাল পরিচালনা করে, যা ২০১১ সালে রতন টাটা উদ্বোধন করেছিলেন। স্বাস্থ্যসেবা খাতে তার অবদান টাটা গ্রুপের সামাজিক দায়বদ্ধতার ঐতিহ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
Ratan Tata Death: শিল্পজগতে যুগাবসান! প্রয়াত রতন টাটা, তাঁর মৃত্যুতে দেশ জুড়ে
মায়া টাটার পাশাপাশি তার ভাই নেভিল টাটা এবং বোন লিয়া টাটাও টাটা গ্রুপের বিভিন্ন শাখায় গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। নেভিল টাটা বর্তমানে স্টার বাজার হাইপারমার্কেট চেইন পরিচালনা করছেন, যা ট্রেন্ট লিমিটেডের অধীনে পরিচালিত হয়। লিয়া টাটা টাজ হোটেলস রিসোর্টস অ্যান্ড প্যালেসেস এর অপারেশন ম্যানেজমেন্টে দায়িত্ব পালন করছেন।
টাটা পরিবারের এই তরুণ প্রজন্ম ইতিমধ্যেই টাটা গ্রুপের পাঁচটি প্রধান দাতব্য সংস্থার বোর্ডে স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্যার দোরাবজি টাটা ট্রাস্ট এবং স্যার রতন টাটা ট্রাস্ট, যা টাটা ট্রাস্টের প্রধান দাতব্য শাখা।
মায়া টাটার পারিবারিক পটভূমি এবং ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা তাকে টাটা গ্রুপের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য একজন শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তার মা আলু মিস্ত্রি প্রয়াত সাইরাস মিস্ত্রির বোন, যিনি টাটা গ্রুপের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ছিলেন। এছাড়া মায়ার খালা রোহিকা মিস্ত্রি (সাইরাস মিস্ত্রির স্ত্রী) ভারতের অন্যতম ধনী মহিলা, যার সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৫৬,০০০ কোটি টাকা।
টাটা গ্রুপের ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের জন্য মায়া টাটার পাশাপাশি তার বাবা নোয়েল টাটাও একজন শক্তিশালী দাবিদার হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। নোয়েল টাটা রতন টাটার সৎভাই এবং দীর্ঘদিন ধরে টাটা গ্রুপের বিভিন্ন শাখায় গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেছেন।
টাটা গ্রুপের বর্তমান চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন ২০১৭ সাল থেকে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি এই সংক্রান্তিকালীন সময়ে গ্রুপের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন।
টাটা গ্রুপের সাথে যৌথভাবে ভারতে C-130J Super Hercules বিমান তৈরি করবে লকহিড মার্টিন
রতন টাটার মৃত্যুর পর টাটা ট্রাস্টের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো তার উত্তরসূরি নির্বাচন করা। এই ব্যক্তি ১৬৫ বিলিয়ন ডলারের একটি ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করবেন, যা ১০০টিরও বেশি দেশে ছড়িয়ে আছে।
মায়া টাটা এবং তার ভাইবোনদের মধ্যে যে কেউ টাটা গ্রুপের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গ্রহণ করতে পারেন। তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, পেশাগত অভিজ্ঞতা এবং পারিবারিক মূল্যবোধ তাদেরকে এই দায়িত্ব পালনের জন্য উপযুক্ত করে তুলেছে। পরিবর্তনশীল বিশ্বে টাটা গ্রুপকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
টাটা গ্রুপের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব যে-ই গ্রহণ করুক না কেন, তাকে রতন টাটার উত্তরাধিকার বহন করতে হবে। রতন টাটা ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং ভারতের প্রথম বহুজাতিক কর্পোরেট সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। তিনি ২০১২ সালে ৭৪ বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করেন।
রতন টাটার মৃত্যুতে শুধু ভারত নয়, সারা বিশ্বের ব্যবসায়িক মহল শোকাহত। তিনি শুধু একজন সফল ব্যবসায়ী ছিলেন না, তার বিনয়ী ব্যক্তিত্ব এবং সমাজসেবার মনোভাব তাকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল। তার উত্তরসূরিকে এই ঐতিহ্য বজায় রাখার পাশাপাশি টাটা গ্রুপকে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।
মায়া টাটা এবং তার ভাইবোনরা ইতিমধ্যেই টাটা গ্রুপের বিভিন্ন শাখায় নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন। তাদের শিক্ষা, অভিজ্ঞতা এবং পারিবারিক ঐতিহ্য তাদেরকে এই বিশাল দায়িত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত করেছে। আগামী দিনগুলোতে টাটা গ্রুপের নেতৃত্ব কার হাতে যাবে তা নিয়ে সবার নজর থাকবে।