Measures to stay safe in extreme heat: অত্যধিক গরমের কারণে প্রতিবছর হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। তাই গরমের হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ২০০০-২০১৯ সালের মধ্যে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৪.৮৯ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয়েছে তাপ সম্পর্কিত কারণে।
এর মধ্যে ২০০৩ সালে ইউরোপে একটি তীব্র হিটওয়েভের সময় ৭০,০০০ এরও বেশি মানুষ মারা গিয়েছিলেন।গরমের প্রকোপ থেকে বাঁচতে কিছু সহজ কিন্তু কার্যকর উপায় অবলম্বন করা যেতে পারে। এগুলো মেনে চললে নিজেকে এবং পরিবারকে গরমের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
- প্রথমত, দিনের সবচেয়ে গরম সময়গুলোতে বাইরে যাওয়া এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টার মধ্যে যতটা সম্ভব ঘরের ভিতরে থাকার চেষ্টা করুন। এই সময়টাতে সূর্যের তাপ সবচেয়ে বেশি থাকে।
- দ্বিতীয়ত, প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল খাবার গ্রহণ করুন। তৃষ্ণা না পেলেও নিয়মিত পানি পান করুন। বাইরে বের হলে সঙ্গে পানির বোতল রাখুন। লবণ ও খনিজ পদার্থ সমৃদ্ধ পানীয় যেমন ORS, লবণ মিশ্রিত লেবুর সরবত ইত্যাদি খেতে পারেন।
অতিরিক্ত ঠান্ডা জল খেলে হতে পারে মারাত্মক – বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন - তৃতীয়ত, হালকা, আলগা ও আরামদায়ক পোশাক পরুন। সাদা বা হালকা রঙের কাপড় পরলে তাপ কম শোষণ হয়। সূতির কাপড় বেশি আরামদায়ক হয়। মাথায় টুপি বা ছাতা ব্যবহার করুন।
- ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখুন। এসি বা ফ্যান ব্যবহার করুন। জানালা-দরজা বন্ধ রেখে বাইরের গরম বাতাস ঢুকতে বাধা দিন। পর্দা টেনে দিয়ে সূর্যের আলো আটকান।
- ঠান্ডা পানিতে গোসল করুন বা শরীরে ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দিন। এতে শরীরের তাপমাত্রা কমবে। মাথায় ভেজা তোয়ালে রাখতে পারেন।
- কঠোর শারীরিক পরিশ্রম এড়িয়ে চলুন। বিশেষ করে দুপুরের দিকে বাইরে কাজ করা বা ব্যায়াম করা থেকে বিরত থাকুন। অপরিহার্য হলে মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিন।
- মদ্যপান ও ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন। এগুলো শরীর থেকে পানি শোষণ করে নেয় যা ডিহাইড্রেশনের ঝুঁকি বাড়ায়।
- বয়স্ক, শিশু ও অসুস্থ ব্যক্তিদের বিশেষ যত্ন নিন। তাদের ঘন ঘন পানি খাওয়ান ও ঠান্ডা রাখুন। একা থাকা এড়িয়ে চলুন।
- পশুপাখি ও পোষা প্রাণীদের যত্ন নিন। তাদের জন্য পর্যাপ্ত পানি ও ছায়ার ব্যবস্থা করুন। গরম বেলায় হাঁটাচলা কমিয়ে দিন।
- আবহাওয়া পূর্বাভাস নিয়মিত দেখুন। হিট ওয়েভ সতর্কতা জারি হলে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করুন। জরুরি প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
অতিরিক্ত গরমের কারণে হিট স্ট্রোক, হিট এক্সজশন, ডিহাইড্রেশন সহ নানা স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। এগুলো প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক ও দীর্ঘমেয়াদী রোগে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে।গরমের প্রভাব শুধু স্বাস্থ্যের উপর সীমাবদ্ধ নয়। এর ফলে কৃষি উৎপাদন কমে যেতে পারে, বিদ্যুৎ সরবরাহে সমস্যা দেখা দিতে পারে, দাবানল ও বনাগ্নির ঝুঁকি বাড়তে পারে।
Kidney: গরমকালে কিভাবে সুস্থ রাখবেন কিডনি? [বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ]
তবে সঠিক পরিকল্পনা ও সচেতনতার মাধ্যমে এর নেতিবাচক প্রভাব অনেকটাই কমানো সম্ভব।তবে গরমের কিছু ইতিবাচক দিকও রয়েছে। গরমকালে পর্যটন শিল্প সমৃদ্ধ হয়, মানুষ বেশি বাইরে বের হয় যা অর্থনীতিকে চাঙ্গা করে। কৃষিতেও কিছু ফসলের উৎপাদন বাড়ে। তবে অতিরিক্ত গরমের ক্ষতিকর প্রভাবই বেশি।বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ভবিষ্যতে গরমের প্রকোপ আরও বাড়বে।
তাই এখন থেকেই সতর্কতা ও প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি। ব্যক্তিগত সতর্কতার পাশাপাশি সরকারি ও সামাজিক উদ্যোগও প্রয়োজন। শহরে সবুজায়ন বাড়ানো, কুলিং সেন্টার স্থাপন, দরিদ্রদের জন্য বিশেষ সহায়তা ইত্যাদি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে।সারকথা, গরমের প্রকোপ থেকে বাঁচতে সচেতনতা ও সতর্কতাই মূল চাবিকাঠি। নিজের ও পরিবারের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি প্রতিবেশী ও সমাজের দুর্বল মানুষদের সহায়তা করা উচিত। তাহলেই আমরা সবাই মিলে গরমের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হতে পারব।