Meenakshi Mukherjee summon by CBI: কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই কলকাতার আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঘটে যাওয়া ট্রেনি ডাক্তারের ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নতুন মোড় দিয়েছে। সিপিআইএম-এর যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই-এর রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে।
মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় বৃহস্পতিবার সকালে সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই অফিসে হাজির হন। তাঁকে প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সূত্রের খবর, ঘটনার দিন মীনাক্ষী মৃত ডাক্তারের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। সেই বিষয়ে তাঁকে নানা প্রশ্ন করা হয়েছে।
মীনাক্ষী বলেন, “আমি সত্যি কথাই বলেছি। আমি ঘটনার দিন মৃত ডাক্তারের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেছিলাম। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। পরিবারের সদস্যরা আমাকে জানিয়েছিলেন যে পুলিশ তাঁদের বলেছে এটা আত্মহত্যার ঘটনা। কিন্তু পরিবার সেটা বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।”
ভারতে ডাক্তারদের আন্দোলন: চরম অবহেলা ও নিরাপত্তাহীনতার বিরুদ্ধে ফেটে পড়া ক্ষোভ
তিনি আরও বলেন, “আমি সিবিআই-কে সব তথ্য দিয়েছি। তাঁরা যা যা জানতে চেয়েছেন, সব বলেছি। আমি চাই এই ঘটনার সত্যি উদঘাটন হোক।”
উল্লেখ্য, গত ৯ আগস্ট আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেস্ট মেডিসিন বিভাগের সেমিনার হলে এক মহিলা ট্রেনি ডাক্তারের মৃতদেহ পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলে মনে করা হলেও পরে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে জানা যায় তাঁকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে।
এরপর থেকেই শুরু হয় বিক্ষোভ। ১৪ আগস্ট রাতে ‘রাত দখল’ কর্মসূচিতে অংশ নেন বহু মহিলা। সেই রাতেই হাসপাতালে ভাঙচুর চালানো হয়। পরের দিন কলকাতা হাইকোর্ট মামলাটি সিবিআই-কে দেয়।
সিবিআই সূত্রের খবর, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে কয়েকটি বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে:
• ঘটনার দিন তিনি কীভাবে মৃত ডাক্তারের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন?
• পরিবারের সঙ্গে কী কথা হয়েছিল?
• পরিবার তাঁকে কী জানিয়েছিলেন?
• ‘রাত দখল’ কর্মসূচির সময় কী ঘটেছিল?
• হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনা সম্পর্কে তিনি কী জানেন?
সিবিআই সূত্রের দাবি, মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের দেওয়া তথ্য থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সূত্র পাওয়া গেছে। তবে সেগুলি এখনও যাচাই করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দু শেখর রায় এই ঘটনায় কলকাতা পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে জিজ্ঞাসাবাদের দাবি তোলায় তাঁকেও পুলিশের তরফে তলব করা হয়েছে।
সুখেন্দু শেখর রায় সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন, “সিবিআই-কে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে হবে। প্রাক্তন প্রিন্সিপাল ও পুলিশ কমিশনারকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি। জানতে হবে কে এবং কেন আত্মহত্যার গল্প ছড়িয়েছিল।”
তিনি আরও প্রশ্ন তুলেছিলেন, “কেন সেমিনার হলের দেওয়াল ভাঙা হল? কে সঞ্জয় রায়কে এত ক্ষমতাশালী হতে সাহায্য করল? কেন ৩ দিন পর স্নিফার ডগ পাঠানো হল? এমন শত প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।”
এই পোস্টের জেরেই তাঁকে পুলিশের তরফে তলব করা হয়েছে। তবে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সুখেন্দু শেখর রায়ের দাবি নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “পুলিশ কমিশনার যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।”
এদিকে, বিজেপি নেতা লকেট চ্যাটার্জি, বিশিষ্ট চিকিৎসক ডাঃ কুণাল সরকার ও ডাঃ সুবর্ণা গোস্বামীকেও পুলিশের তরফে তলব করা হয়েছে। অভিযোগ, তাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় মৃত ডাক্তারের পরিচয় প্রকাশ করেছেন এবং তদন্ত নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছেন।
লকেট চ্যাটার্জি বলেছেন, “তদন্তের সময় যদি এতটা তৎপরতা দেখাতেন, তাহলে ভাল হত। সবাই চায় মেয়েটির ন্যায়বিচার হোক।”
চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাঁরা আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে সোমবার পুলিশ সদর দফতরে যাবেন।
এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে মূল অভিযুক্ত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়। তাকে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই।
আরজি কর কাণ্ডে মমতার পদত্যাগ দাবি: বিজেপির ‘এক দফা, এক দাবি’ আন্দোলন
হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকেও একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি প্রথমে এটাকে আত্মহত্যার ঘটনা বলে চালাতে চেয়েছিলেন।
সিবিআই সূত্রের খবর, তদন্তে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সেগুলি যাচাই করে শীঘ্রই আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হবে।
অন্যদিকে, এই ঘটনায় রাজ্যজুড়ে চলছে চিকিৎসকদের আন্দোলন। ইন্ডিয়ান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ) ডেকেছিল ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘট। তাতে সাড়া দিয়েছিলেন বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকরাও।
চিকিৎসকরা দাবি তুলেছেন:
• হাসপাতালে নিরাপত্তা বাড়াতে হবে
• মহিলা চিকিৎসকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
• অপরাধীদের দ্রুত শাস্তি দিতে হবে
• হাসপাতালে ভাঙচুরের ঘটনার তদন্ত করতে হবে
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, চিকিৎসকদের দাবিগুলি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শীঘ্রই কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
তবে এই ঘটনায় রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেছেন, বিজেপি ও সিপিএম এই ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। তাঁর দাবি, বিরোধীরা অশান্তি সৃষ্টি করে সরকারকে অস্থির করার চেষ্টা করছে।
অন্যদিকে, বিরোধীরা অভিযোগ করছেন, রাজ্য সরকার ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চেয়েছিল। তাই প্রথমে এটাকে আত্মহত্যার ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা করা হয়েছিল।
সামগ্রিকভাবে, এই ঘটনায় নতুন মোড় এসেছে সিপিএম নেত্রী মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়কে সিবিআই-এর জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে। আগামী দিনগুলিতে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তবে এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি – এটাই এখন সবার দাবি।