বোতলজলে বিপদ: প্রতি ঢোকে গিলছেন হাজার হাজার প্লাস্টিক কণা!”

Microplastics in Bottled Water: ভারতে বোতলজলের ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এই সুবিধাজনক পানীয় জলের সাথে আমরা অজান্তেই গ্রহণ করছি অসংখ্য ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি লিটার বোতলজলে…

Ishita Ganguly

 

Microplastics in Bottled Water: ভারতে বোতলজলের ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু এই সুবিধাজনক পানীয় জলের সাথে আমরা অজান্তেই গ্রহণ করছি অসংখ্য ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি লিটার বোতলজলে প্রায় আড়াই লক্ষ মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা বিদ্যমান। এই চাঞ্চল্যকর তথ্য আমাদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য গভীর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ভারতের বোতলজল শিল্প দ্রুত বিকাশ লাভ করছে। টেকসাই রিসার্চ অ্যান্ড কনসাল্টেন্সির প্রতিবেদন অনুযায়ী, 2021 সালে এই শিল্পের মূল্য ছিল প্রায় 160 বিলিয়ন রুপি, যা 2026 সাল নাগাদ 403.06 বিলিয়ন রুপি ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই প্রবৃদ্ধির হার বার্ষিক 20.75%। কিন্তু এই বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে পরিবেশ দূষণের ঝুঁকিও।

ভারতে প্লাস্টিক দূষণের পরিমাণ ভয়াবহ। সেন্ট্রাল পলিউশন কন্ট্রোল বোর্ডের (CPCB) তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতিদিন প্রায় 26,000 টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়, যার মাত্র 60% সংগ্রহ ও পুনর্ব্যবহার করা হয়। বাকি 40% পরিবেশে ছড়িয়ে পড়ে, যার একটি বড় অংশ জলাশয়ে গিয়ে পড়ে।

বোতলজলে প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন গবেষণা হয়েছে। 2018 সালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের 93% বোতলজলে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ভারতের নমুনাগুলিতেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া গেছে।

এই মাইক্রোপ্লাস্টিক কণাগুলি মানব দেহে প্রবেশ করে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। গবেষকরা বলছেন, এগুলি হরমোন ব্যবস্থা ব্যাহত করতে পারে, ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে, এবং শিশুদের বৃদ্ধি ব্যাহত করতে পারে।

ভারত সরকার এই সমস্যা মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। 2022 সালের 1 জুলাই থেকে একক-ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এছাড়া, প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়মাবলী, 2016 (সংশোধিত 2021) চালু করা হয়েছে যা প্লাস্টিক পণ্য নির্মাতাদের Extended Producer Responsibility (EPR) বাধ্যতামূলক করেছে।

পশ্চিমবঙ্গে প্লাস্টিক দূষণের চিত্র উদ্বেগজনক। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে প্রতিদিন প্রায় 1,700 টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে কলকাতা একাই প্রায় 426 টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন করে। রাজ্য সরকার 2019 সালে 50 মাইক্রনের কম ঘনত্বের প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে।

বোতলজলের বিকল্প হিসেবে ভারতে জল শোধন ব্যবস্থার উন্নতি করা হচ্ছে। জল জীবন মিশনের অধীনে 2024 সালের মধ্যে প্রতিটি গ্রামীণ পরিবারে কলের জল সরবরাহের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। 2024 সালের এপ্রিল পর্যন্ত, প্রায় 74% গ্রামীণ পরিবারে কলের জল সংযোগ দেওয়া হয়েছে।

পুনর্ব্যবহারযোগ্য বোতল ব্যবহারের প্রচলন বাড়ছে। বিভিন্ন কর্পোরেট অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি দপ্তরে একক-ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর পরিবর্তে স্টিল বা কাঁচের বোতল ব্যবহার করা হচ্ছে।

জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন প্রচারাভিযান চালানো হচ্ছে। স্বচ্ছ ভারত মিশনের অংশ হিসেবে প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। স্কুল-কলেজে পরিবেশ শিক্ষার অংশ হিসেবে প্লাস্টিক দূষণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

উপসংহারে বলা যায়, বোতলজলে প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি একটি গুরুতর সমস্যা যা আমাদের স্বাস্থ্য ও পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলছে। এই সমস্যা সমাধানে সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি ব্যক্তিগত সচেতনতা ও দায়িত্বশীল আচরণ জরুরি। আমাদের প্রত্যেকের উচিত পুনর্ব্যবহারযোগ্য বোতল ব্যবহার করা, প্লাস্টিক বর্জ্য যথাযথভাবে নিষ্পত্তি করা, এবং সম্ভব হলে শোধিত কলের জল পান করা। এভাবেই আমরা আমাদের ও আগামী প্রজন্মের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারি।

About Author
Ishita Ganguly

ঈশিতা গাঙ্গুলী ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি (IGNOU) থেকে স্নাতক। তিনি একজন উদ্যমী লেখক এবং সাংবাদিক, যিনি সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ ও অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে থাকেন। ঈশিতার লেখার ধরন স্পষ্ট, বস্তুনিষ্ঠ এবং তথ্যবহুল, যা পাঠকদের মুগ্ধ করে। তার নিবন্ধ ও প্রতিবেদনের মাধ্যমে তিনি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সামনে আনেন এবং পাঠকদের চিন্তা-চেতনার পরিসরকে বিস্তৃত করতে সহায়তা করেন। সাংবাদিকতার জগতে তার অটুট আগ্রহ ও নিষ্ঠা তাকে একটি স্বতন্ত্র পরিচিতি দিয়েছে, যা তাকে ভবিষ্যতে আরও সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে।