মধ্যাহ্ন ভোজন যোজনা: ভারতের সবচেয়ে বড় স্কুল খাদ্য কর্মসূচি

School Nutrition Program India: মধ্যাহ্ন ভোজন যোজনা হল ভারত সরকারের একটি প্রমুখ কর্মসূচি, যা দেশের স্কুলগামী শিশুদের পুষ্টি ও শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি ও…

Debolina Roy

 

School Nutrition Program India: মধ্যাহ্ন ভোজন যোজনা হল ভারত সরকারের একটি প্রমুখ কর্মসূচি, যা দেশের স্কুলগামী শিশুদের পুষ্টি ও শিক্ষার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারি ও সরকার অনুমোদিত প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে গরম রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হয়। বর্তমানে এই প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১২ কোটি শিশু প্রতিদিন পুষ্টিকর খাবার পাচ্ছে, যা এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম স্কুল খাদ্য কর্মসূচি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে

মধ্যাহ্ন ভোজন যোজনার ইতিহাস

মধ্যাহ্ন ভোজন যোজনার শুরু হয়েছিল ১৯২৫ সালে মাদ্রাজ মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের উদ্যোগে। স্বাধীন ভারতে এই প্রকল্পটি প্রথম চালু করেছিল তামিলনাড়ু রাজ্য ১৯৬০-এর দশকের শুরুতে। ১৯৯৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে এটি জাতীয় স্তরে প্রাথমিক শিক্ষায় পুষ্টি সহায়তার জাতীয় কর্মসূচি (NP-NSPE) হিসেবে শুরু হয়।প্রকল্পটির ক্রমবিকাশ:

মধ্যাহ্ন ভোজন যোজনার উদ্দেশ্য

মধ্যাহ্ন ভোজন যোজনার প্রধান লক্ষ্যগুলি হল:

  1. শিশুদের পুষ্টির মান উন্নয়ন
  2. বিদ্যালয়ে ভর্তি ও উপস্থিতির হার বৃদ্ধি
  3. সামাজিক ও লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠা
  4. শিক্ষার মান উন্নয়ন

এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার শুধু শিক্ষার প্রসারই নয়, দারিদ্র্য ও অপুষ্টির বিরুদ্ধে লড়াই করতে চায়।

মধ্যাহ্ন ভোজনের পুষ্টিমান

সরকার নির্ধারিত পুষ্টিমান অনুযায়ী প্রতিটি শিশুকে নিম্নলিখিত পরিমাণে খাদ্য সরবরাহ করা হয়:

শ্রেণি ক্যালোরি প্রোটিন (গ্রাম) চাল/গম (গ্রাম) ডাল (গ্রাম) সবজি (গ্রাম) তেল (গ্রাম)
I-V 450 12 100 20 50 5
VI-VIII 700 20 150 30 75 7.5

এছাড়াও ভিটামিন A, আয়রন, ফোলিক অ্যাসিড ট্যাবলেট ও কৃমিনাশক ওষুধও দেওয়া হয়।

প্রকল্প বাস্তবায়ন মডেল

মধ্যাহ্ন ভোজন যোজনা দুটি প্রধান মডেলে বাস্তবায়িত হয়:

  1. বিকেন্দ্রীকৃত মডেল: এটি সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি। এখানে স্থানীয় রাঁধুনি ও সহায়করা বিদ্যালয়েই খাবার রান্না করেন। এর সুবিধা হল স্থানীয় খাবার পরিবেশন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অপচয় হ্রাস।
  2. কেন্দ্রীকৃত মডেল: শহরাঞ্চলে বেশি দেখা যায়। এখানে বাইরের সংস্থা খাবার রান্না করে বিদ্যালয়ে সরবরাহ করে। এটি স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।

অর্থায়ন ও বাজেট

মধ্যাহ্ন ভোজন যোজনার খরচ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার যৌথভাবে বহন করে:

  • কেন্দ্রের অংশ: 60%
  • রাজ্যের অংশ: 40%

কেন্দ্রীয় সরকার খাদ্যশস্য ও অন্যান্য খাদ্যের জন্য অর্থ সরবরাহ করে। সুবিধা, পরিবহন ও শ্রমের খরচ কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার ভাগাভাগি করে নেয়।২০২০-২১ সালে মধ্যাহ্ন ভোজন যোজনার বাজেট ছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মোট বাজেটের ১১%।

প্রকল্পের প্রভাব

মধ্যাহ্ন ভোজন যোজনা শিক্ষা ও পুষ্টির ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে:

  1. নামভর্তি ও উপস্থিতি বৃদ্ধি: বিশেষ করে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া শিশুদের ক্ষেত্রে স্কুলে যাওয়ার হার বেড়েছে।
  2. শিক্ষার মান উন্নয়ন: পুষ্টিকর খাবার পাওয়ায় শিশুদের একাগ্রতা ও শেখার ক্ষমতা বেড়েছে।
  3. সামাজিক সমতা: বিভিন্ন সামাজিক পটভূমির শিশুরা একসাথে খাবার খাওয়ায় সামাজিক সংহতি বৃদ্ধি পেয়েছে।
  4. পুষ্টির মান উন্নয়ন: নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার পাওয়ায় অপুষ্টিজনিত রোগের প্রকোপ কমেছে।
  5. অর্থনৈতিক সহায়তা: পরিবারগুলির খাদ্য খরচ কমায় অন্যান্য প্রয়োজনে অর্থ ব্যয় করতে পারছে।

চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা

মধ্যাহ্ন ভোজন যোজনা বাস্তবায়নে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে:

  1. অপর্যাপ্ত পরিকাঠামো: অনেক বিদ্যালয়ে রান্নাঘর ও সংরক্ষণাগারের অভাব রয়েছে
  2. স্বাস্থ্যবিধি: কখনও কখনও খাবারের মান ও পরিচ্ছন্নতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
  3. দুর্নীতি: খাদ্যশস্য ও অর্থের অপব্যবহারের অভিযোগ পাওয়া যায়।
  4. জাতিভেদ: কোথাও কোথাও জাতিভেদের ভিত্তিতে বৈষম্য দেখা যায়।
  5. অপর্যাপ্ত তদারকি: প্রকল্প বাস্তবায়নের যথাযথ পর্যবেক্ষণের অভাব রয়েছে।

সাম্প্রতিক উদ্যোগ

মধ্যাহ্ন ভোজন যোজনাকে আরও কার্যকর করতে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে:

  1. PM POSHAN: ২০২১ সালে প্রকল্পটির নাম পরিবর্তন করে PM POSHAN (Pradhan Mantri Poshan Shakti Nirman) করা হয়েছে।
  2. তিথি ভোজন: গুজরাটে শুরু হওয়া এই উদ্যোগে স্থানীয় মানুষ বিশেষ দিনে নিজেদের খরচে শিশুদের খাবার দেন।
  3. স্কুল স্বাস্থ্য কর্মসূচি: মধ্যাহ্ন ভোজনের সাথে স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও টিকাদান কার্যক্রম যুক্ত করা হয়েছে।
  4. পুষ্টি শিক্ষা: খাবারের সময় শিশুদের পুষ্টি ও স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে শেখানো হয়।
  5. স্থানীয় খাবার: স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ফল ও সবজি ব্যবহারের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

    The Mystery of AM-PM: এর রহস্য উন্মোচন, কিভাবে ঠিক হলো, সাথে আরও কিছু অজানা তথ্য

মধ্যাহ্ন ভোজন যোজনা ভারতের শিক্ষা ও পুষ্টি ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি কোটি কোটি শিশুর জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। তবে এর সফল বাস্তবায়নে এখনও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। সরকার, শিক্ষক, অভিভাবক ও সমাজের সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই প্রকল্পটি আরও কার্যকর হতে পারে।

About Author
Debolina Roy

দেবলীনা রায় একজন চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক লেখক, যিনি স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান সম্পর্কে পাঠকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য নিবেদিত। ডাক্তারি নিয়ে পড়াশোনা করা দেবলীনা তার লেখায় চিকিৎসা বিষয়ক জটিল তথ্যগুলি সহজ ভাষায় উপস্থাপন করেন, যা সাধারণ পাঠকদের জন্য সহজবোধ্য এবং উপকারী। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, এবং রোগ প্রতিরোধের বিষয়ে তার গভীর জ্ঞান এবং প্রাঞ্জল লেখনী পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। দেবলীনা রায়ের লক্ষ্য হল সঠিক ও তথ্যনির্ভর স্বাস্থ্যবিধি প্রচার করা এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত করা।