Mithun Chakraborty acting career recognition Dadasaheb Phalke Award: বলিউডের কিংবদন্তি অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীকে এবার দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে সম্মানিত করা হচ্ছে। ভারতীয় চলচ্চিত্রের সর্বোচ্চ এই সম্মান তাঁর ৪৮ বছরের দীর্ঘ অভিনয় জীবনের স্বীকৃতি হিসেবে দেওয়া হচ্ছে। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব সোমবার সকালে এই ঘোষণা করেন।
৭৪ বছর বয়সী এই অভিনেতা ১৯৭৬ সালে মৃণাল সেনের ‘মৃগয়া’ ছবির মাধ্যমে অভিনয় জগতে পা রাখেন। প্রথম ছবিতেই তিনি জাতীয় পুরস্কার জয় করেন। এরপর থেকে তিনি হিন্দি ও বাংলা সিনেমায় অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন। ‘ডিস্কো ডান্সার’, ‘কসম পায়দা করনে ওয়ালে কি’, ‘কমান্ডো’, ‘অগ্নিপথ’ সহ অনেক জনপ্রিয় ছবিতে তাঁর অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।
মিঠুন চক্রবর্তী এই সম্মান পাওয়ার পর বলেন, “আমি কোনও ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না কেমন অনুভব করছি। না আমি হাসতে পারছি, না খুশিতে কাঁদতে পারছি। কলকাতার একটা অন্ধ গলি থেকে আমি এসেছি, কখনও ভাবিনি ফুটপাথের একটা ছেলে এত বড় সম্মান পাবে।”
70th National Film Awards 2024: ‘আত্তাম’ সেরা চলচ্চিত্র, ঋষভ শেট্টি সেরা অভিনেতা
তিনি আরও বলেন, “আমি সত্যিই হতবাক, বিশ্বাস করুন। আমি হাসতে পারছি না, খুশিতে কাঁদতেও পারছি না কারণ একজন মানুষ যে সত্যিই কোথাও থেকে আসেনি, একজন নগণ্য ব্যক্তি, সে এটা করতে পেরেছে। এটাও প্রমাণ করে যে আমি সবসময় আমার ভক্তদের এবং যারা আর্থিকভাবে শক্তিশালী নয় তাদের যা বলি: আমি যদি এটা করতে পারি, তাহলে আপনিও পারবেন।”
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মিঠুন চক্রবর্তীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “শ্রী মিঠুন চক্রবর্তী জিকে মর্যাদাপূর্ণ দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে জেনে আনন্দিত, যা ভারতীয় সিনেমায় তাঁর অতুলনীয় অবদানকে স্বীকৃতি দেয়। তিনি একজন সাংস্কৃতিক প্রতীক, যাকে প্রজন্মের পর প্রজন্ম তাঁর বহুমুখী অভিনয়ের জন্য প্রশংসা করে। তাঁকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।”
মিঠুন চক্রবর্তী তাঁর কর্মজীবনে তিনটি জাতীয় পুরস্কার জয় করেছেন। ‘মৃগয়া’ (১৯৭৬) ছবির জন্য সেরা অভিনেতা, ‘তাহাদের কথা’ (১৯৯২) ছবির জন্য সেরা অভিনেতা এবং ‘স্বামী বিবেকানন্দ’ (১৯৯৮) ছবির জন্য সেরা সহ-অভিনেতার জাতীয় পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। এছাড়াও তিনি দুটি ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছেন।
লিম্কা বুক অফ রেকর্ডস অনুযায়ী, ১৯৮৯ সালে একই বছরে প্রধান ভূমিকায় অভিনয় করে ১৯টি সিনেমা মুক্তি পাওয়ার রেকর্ড মিঠুন চক্রবর্তীর নামে রয়েছে। এই রেকর্ড এখনও বলিউডে অটুট রয়েছে।
মিঠুন চক্রবর্তী শুধু অভিনেতা নন, তিনি একজন প্রযোজক, লেখক, সমাজসেবক, উদ্যোক্তা এবং টেলিভিশন উপস্থাপকও বটে। তিনি হিন্দি, বাংলা, ওড়িয়া, ভোজপুরি, তামিল, তেলুগু, কন্নড় ও পাঞ্জাবি ভাষার ৩৫০টিরও বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন। তিনি একসময় রাজ্যসভার সদস্যও ছিলেন।
২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে ভারত সরকার তাঁকে তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান পদ্মভূষণে ভূষিত করেছে। এবার দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পেয়ে তাঁর কর্মজীবন আরও একটি উচ্চতায় পৌঁছালো।
দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার ভারতীয় চলচ্চিত্রের জনক ধুন্দিরাজ গোবিন্দ ফালকের নামে প্রতিষ্ঠিত। ১৯৬৯ সাল থেকে এই পুরস্কার প্রদান করা হচ্ছে। প্রথম যে ব্যক্তি এই পুরস্কার পান তিনি হলেন অভিনেত্রী দেবিকা রানী। এরপর থেকে প্রতি বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে এই সম্মান প্রদান করা হয়।
মিঠুন চক্রবর্তী ৭০তম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অনুষ্ঠানে এই সম্মান গ্রহণ করবেন। অনুষ্ঠানটি আগামী ৮ অক্টোবর, ২০২৪ তারিখে নয়াদিল্লির বিজ্ঞান ভবনে অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন।
মিঠুন চক্রবর্তীর এই সম্মান পাওয়া শুধু তাঁর ব্যক্তিগত অর্জন নয়, এটি সমগ্র ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য গর্বের বিষয়। তাঁর জীবন যাত্রা অনেক তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে। কলকাতার রাস্তা থেকে উঠে আসা একজন সাধারণ ছেলে কীভাবে নিজের প্রতিভা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান অর্জন করতে পারে, মিঠুন চক্রবর্তীর জীবন তার জ্বলন্ত উদাহরণ।
এমন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক যাতে অপরাধ করার আগেই ভয়ের সঞ্চার হয়’- অভিনেতা অর্ণব ভদ্র!
মিঠুন চক্রবর্তীর অভিনয় জীবন শুধু বলিউডেই সীমাবদ্ধ ছিল না। তিনি বাংলা সিনেমাতেও সমান দক্ষতার সাথে অভিনয় করেছেন। ‘তিতলি’, ‘এমএলএ ফাটাকেস্তো’, ‘মিনিস্টার ফাটাকেস্তো’, ‘কালপুরুষ’, ‘শুকনো লঙ্কা’, ‘টার্গেট: দ্য ফাইনাল মিশন’, ‘নোবেল চোর’ ইত্যাদি বাংলা ছবিগুলিতে তাঁর অভিনয় দর্শকদের মুগ্ধ করেছে।
তাঁর বহুমুখী প্রতিভার আরেকটি দিক হল নৃত্য। ‘ডিস্কো ডান্সার’ ছবির মাধ্যমে তিনি শুধু ভারতেই নয়, সোভিয়েত ইউনিয়নেও বিপুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ‘আই অ্যাম এ ডিস্কো ডান্সার’, ‘জিম্মি জিম্মি’, ‘সুপার ডান্সার’ ইত্যাদি গান এখনও দর্শকদের মনে নস্টালজিয়া জাগায়।
মিঠুন চক্রবর্তী শুধু অভিনয়েই নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। তিনি একজন সফল ব্যবসায়ী এবং সমাজসেবকও। তাঁর মালিকানাধীন হোটেল ব্যবসা রয়েছে। এছাড়াও তিনি বিভিন্ন সামাজিক কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন।
‘নিজেদের ইমেজ বজায় রাখতে সবটা ধামাচাপা দিতে চাইছেন মুখ্যমন্ত্রী’- অভিনেতা সুমন কুন্ডু
রাজনীতিতেও তিনি সক্রিয় ছিলেন। ২০১৪ সালে তৃণমূল কংগ্রেস দল থেকে রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। পরে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন।
সর্বশেষ তিনি বিবেক অগ্নিহোত্রীর বহুল আলোচিত ছবি ‘দ্য কাশ্মীর ফাইলস’-এ অভিনয় করেছেন। এই ছবিটি বক্স অফিসে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে।
মিঠুন চক্রবর্তীর এই সম্মান পাওয়া ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। এটি প্রমাণ করে যে প্রতিভা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে কীভাবে একজন মানুষ জীবনের সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছাতে পারে। তাঁর জীবন যাত্রা অনেক তরুণ প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে, যারা চলচ