One Nation One Vote constitutional amendment: কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা বুধবার ‘এক দেশ এক ভোট’ প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বাধীন কমিটির রিপোর্ট গ্রহণ করেছে মন্ত্রিসভা। এর ফলে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন একসঙ্গে করার পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেল মোদী সরকার।’এক দেশ এক ভোট’ প্রস্তাবের মূল লক্ষ্য হল দেশের সমস্ত নির্বাচন একসঙ্গে করা। এর অন্তর্গত রয়েছে লোকসভা, বিধানসভা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচন। প্রস্তাবটি বাস্তবায়িত হলে প্রতি পাঁচ বছরে একবার দেশের সমস্ত নির্বাচন একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে।
Modi 3.0 এর প্রথম বাজেট, ভারতের অর্থনীতির নতুন দিগন্ত!
গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এই কমিটি ‘এক দেশ এক ভোট’ প্রস্তাব নিয়ে বিস্তারিত অধ্যয়ন করে একটি রিপোর্ট তৈরি করে। সেই রিপোর্টই এখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা গ্রহণ করেছে।কোবিন্দ কমিটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, প্রথম পর্যায়ে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন একসঙ্গে করা হবে। পরবর্তী পর্যায়ে পৌরসভা ও পঞ্চায়েত নির্বাচনও এর সঙ্গে যুক্ত হবে। একটি সাধারণ ভোটার তালিকা ও একক ভোটার পরিচয়পত্র তৈরি করার প্রস্তাবও রয়েছে রিপোর্টে।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ মঙ্গলবার বলেছিলেন, “আমরা এই সরকারের মেয়াদেই ‘এক দেশ এক ভোট’ বাস্তবায়ন করার পরিকল্পনা করছি।” এর আগে স্বাধীনতা দিবসের ভাষণে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও এই প্রস্তাবের পক্ষে সওয়াল করেছিলেন।’
এক দেশ এক ভোট’ প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি হল, এতে সরকারি অর্থ সাশ্রয় হবে, উন্নয়নমূলক কাজে বাধা কমবে এবং নির্বাচনী ক্লান্তি হ্রাস পাবে। কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের মতে, প্রতিটি নির্বাচনে প্রায় ৪,৫০০ কোটি টাকা খরচ হয়। একসঙ্গে নির্বাচন হলে এই খরচ অনেকটাই কমবে।তবে বিরোধী দলগুলি এই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা করছে। তাদের মতে, এতে যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং ক্ষুদ্র দলগুলির অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। কংগ্রেস, তৃণমূল কংগ্রেস, আম আদমি পার্টি সহ বিভিন্ন বিরোধী দল ইতিমধ্যেই এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে।’এক দেশ এক ভোট’ প্রস্তাব বাস্তবায়নের জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হবে। এজন্য সংসদের উভয় কক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এবং অর্ধেক রাজ্যের অনুমোদন প্রয়োজন। বর্তমানে এনডিএ জোটের কাছে এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই।
আইন কমিশন এই প্রস্তাব নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ২০২৯ সালের মধ্যে লোকসভা, বিধানসভা ও স্থানীয় সরকার নির্বাচন একসঙ্গে করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা যেতে পারে।এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থায় একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। স্বাধীনতার পর প্রথম দিকে ভারতে লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচন একসঙ্গেই হত। কিন্তু ১৯৬৭ সাল থেকে তা আলাদা হয়ে যায়।’এক দেশ এক ভোট’ প্রস্তাবের সমর্থকরা বলছেন, এতে দেশের অর্থ ও সময় বাঁচবে। বারবার নির্বাচনের জন্য যে আচরণবিধি জারি করা হয়, তাতে উন্নয়নমূলক কাজে বাধা আসে। একসঙ্গে নির্বাচন হলে সেই সমস্যা থাকবে না।
Bangladesh Movement News: বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন তীব্র, রোববার থেকে সর্বাত্মক
অন্যদিকে বিরোধীরা বলছেন, এতে ক্ষুদ্র দলগুলির অস্তিত্ব বিপন্ন হবে। কারণ তারা একসঙ্গে জাতীয় ও রাজ্য স্তরে প্রচার চালাতে পারবে না। এছাড়া স্থানীয় ইস্যুগুলি চাপা পড়ে যাবে জাতীয় ইস্যুর তলায়।রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই প্রস্তাব বাস্তবায়নে অনেক বাধা রয়েছে। সবচেয়ে বড় বাধা হল সংবিধান সংশোধন। এছাড়া বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলি এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করবে। তাই এটি বাস্তবায়ন করা সহজ হবে না।তবে মোদী সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ যে তারা এই প্রস্তাব বাস্তবায়ন করবেই।
সরকারি সূত্রে জানা গেছে, আগামী শীতকালীন অধিবেশনে এই বিষয়ে একটি বিল আনা হতে পারে।’এক দেশ এক ভোট’ প্রস্তাব নিয়ে দেশজুড়ে তীব্র বিতর্ক চলছে। অনেকে এটিকে গণতন্ত্রের পক্ষে ক্ষতিকর বলে মনে করছেন। আবার অনেকে মনে করছেন এটি দেশের জন্য কল্যাণকর হবে। যাই হোক, এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে ভারতের নির্বাচন ব্যবস্থায় একটি ঐতিহাসিক পরিবর্তন আসবে।
মন্তব্য করুন