Monkeypox symptoms & prevention: মাংকিপক্স বা এমপক্স একটি সংক্রামক ভাইরাসজনিত রোগ যা বর্তমানে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই রোগটি বাঁদরবসন্ত ভাইরাস (MPXV) দ্বারা সৃষ্ট হয় এবং মানুষ সহ কিছু প্রাণীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যদিও এর নাম মাংকিপক্স, তবে বানর এর প্রধান বাহক নয়। বরং আফ্রিকান ইঁদুর এবং অন্যান্য ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী এর প্রকৃত জলাধার হিসেবে কাজ করে বলে বিশ্বাস করা হয়।
লক্ষণসমূহ
মাংকিপক্সের লক্ষণগুলি সাধারণত সংক্রমণের ৫ থেকে ২১ দিন পরে দেখা যায়। প্রাথমিক লক্ষণগুলি হল:
- জ্বর
- মাথাব্যথা
- পেশীতে ব্যথা
- লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া
- ক্লান্তি
এই প্রাথমিক লক্ষণগুলির পরে, রোগীরা একটি বৈশিষ্ট্যপূর্ণ ফুসকুড়ি অনুভব করে। এই ফুসকুড়ি নিম্নলিখিত পর্যায়গুলি অতিক্রম করে:
- ফ্ল্যাট ঘা
- তরল পূর্ণ ফোস্কা
- শুকনো ক্রাস্ট
ফুসকুড়িগুলি শরীরের যেকোনো জায়গায় দেখা দিতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে:
- হাতের তালু ও পায়ের তলা
- মুখ ও গলা
- যৌনাঙ্গ ও মলদ্বার
কিছু রোগীর ক্ষেত্রে, ফুসকুড়ি হল প্রথম লক্ষণ, যেখানে অন্যরা প্রথমে অন্যান্য উপসর্গ অনুভব করতে পারে।
রোগ নির্ণয়
মাংকিপক্স নির্ণয় করা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে, কারণ এর লক্ষণগুলি অন্যান্য সংক্রামক রোগের সাথে মিলে যেতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে:
- চিকেনপক্স
- হাম
- ব্যাকটেরিয়াল ত্বক সংক্রমণ
- স্ক্যাবিস
- হারপিস
- সিফিলিস
সঠিক রোগ নির্ণয়ের জন্য, চিকিৎসকরা সাধারণত পলিমারেজ চেইন রিয়াকশন (PCR) পরীক্ষা ব্যবহার করেন। এই পরীক্ষার জন্য ফুসকুড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
Dengue: ৫টি অবাক করা ঘরোয়া কৌশলে ডেঙ্গু-ম্যালেরিয়াকে দিন
প্রতিকার ও চিকিৎসা
মাংকিপক্সের চিকিৎসার মূল লক্ষ্য হল উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ এবং জটিলতা প্রতিরোধ করা। চিকিৎসার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে:
১. স্ব-যত্ন
রোগীদের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্ব-যত্নের পরামর্শ:
- বাড়িতে থাকুন এবং সম্ভব হলে আলাদা ঘরে থাকুন
- ঘন ঘন সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুন
- অন্যদের কাছাকাছি থাকার সময় মাস্ক পরুন
- ফুসকুড়িগুলি শুকনো ও অনাবৃত রাখুন
- মুখের ঘা থাকলে লবণ পানি দিয়ে কুলকুচি করুন
- শরীরের ঘায়ের জন্য বেকিং সোডা বা এপসম সল্ট দিয়ে গরম স্নান করুন
- ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেন নিন
২. টিকা
মাংকিপক্স প্রতিরোধে টিকা একটি কার্যকর উপায়। টিকা দেওয়া উচিত:
- সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার ৪ দিনের মধ্যে (বা ১৪ দিন পর্যন্ত যদি কোনও লক্ষণ না থাকে)
- উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের, যেমন:
- স্বাস্থ্যকর্মী
- পুরুষদের সাথে যৌন সম্পর্ক রাখা পুরুষ
- একাধিক যৌন সঙ্গী থাকা ব্যক্তি
- যৌনকর্মী
৩. ঔষধ
মাংকিপক্সের চিকিৎসায় কিছু অ্যান্টিভাইরাল ঔষধ ব্যবহৃত হয়, যেমন টেকোভিরিমাট। এই ঔষধগুলি মূলত বসন্ত রোগের জন্য তৈরি করা হয়েছিল, কিন্তু মাংকিপক্সের ক্ষেত্রেও কার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে।
সংক্রমণ প্রতিরোধ
মাংকিপক্স সংক্রমণ প্রতিরোধে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ:
- সংক্রমিত ব্যক্তি বা প্রাণীর সংস্পর্শ এড়িয়ে চলুন
- নিয়মিত হাত ধোয়া অভ্যাস করুন
- ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন
- সংক্রমিত এলাকায় ভ্রমণ করলে সতর্কতা অবলম্বন করুন
- সন্দেহজনক লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
টাইফয়েড ও প্যারাটাইফয়েড: একই রোগের দুই রূপ
সম্ভাব্য প্রভাব
মাংকিপক্স সাধারণত একটি স্ব-সীমিত রোগ, যার মানে বেশিরভাগ রোগী ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে, কিছু ক্ষেত্রে এটি গুরুতর হতে পারে, বিশেষ করে দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে।সম্ভাব্য জটিলতার মধ্যে রয়েছে:
- সেকেন্ডারি ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ
- নিউমোনিয়া
- এনসেফালাইটিস (মস্তিষ্কের প্রদাহ)
- দৃষ্টিশক্তি হারানো
মাংকিপক্স একটি গুরুতর সংক্রামক রোগ হলেও, সঠিক সতর্কতা ও চিকিৎসার মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। রোগের লক্ষণ সম্পর্কে সচেতনতা, দ্রুত রোগ নির্ণয়, এবং যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, টিকা গ্রহণ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা মাংকিপক্স প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে। যদি আপনি কোনও সন্দেহজনক লক্ষণ অনুভব করেন, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সামগ্রিকভাবে, সমাজের সকল স্তরের মানুষের সচেতনতা ও সহযোগিতা এই রোগ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।