দুর্গাপুজোর মরসুমে বাংলা সিনেমার বক্স অফিসে ঝড় তুলেছে শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায় পরিচালিত ‘বহুরূপী’ ছবিটি। প্রতি ঘণ্টায় ২০০০-এর বেশি টিকিট বিক্রি হচ্ছে এই ছবির, যা একটি নতুন রেকর্ড স্থাপন করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় মোট সাড়ে ২৪ হাজার টিকিট বিক্রি হয়েছে ‘বহুরূপী’র, যা অন্যান্য পুজো রিলিজের তুলনায় অনেক বেশি।
‘বহুরূপী’ ছবিটি উইন্ডোজ প্রোডাকশনের ব্যানারে নির্মিত হয়েছে এবং এটি তাদের এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ বাজেটের ছবি। ছবিটির মূল চরিত্রে রয়েছেন শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, কৌশানী মুখোপাধ্যায়, আবির চট্টোপাধ্যায় এবং ঋতাভরী চক্রবর্তী। গল্পটি মূলত চোর-পুলিশের খেলার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে, যেখানে শিবপ্রসাদ একজন ব্যাংক ডাকাত এবং আবির একজন সুপার কপের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন।
বহুরূপী: শিবপ্রসাদ-নন্দিতার নতুন ছবি যা দর্শকদের মুগ্ধ করেছে – জানুন সব খুঁটিনাটি
ছবিটির সাফল্যে আপ্লুত পরিচালক দ্বয় শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও নন্দিতা রায়। তাঁরা এই সাফল্যকে শুধু ‘বহুরূপী’র নয়, সমগ্র বাংলা সিনেমার জয় হিসেবে দেখছেন। শিবপ্রসাদ জানিয়েছেন যে এই ছবিতে তাঁরা অনেক নতুন প্রয়োগ করেছেন এবং দর্শকদের কাছে এর গ্রহণযোগ্যতা তাঁদের আপ্লুত করেছে।
‘বহুরূপী’র সাফল্য শুধু টিকিট বিক্রিতেই সীমাবদ্ধ নয়। ছবিটি দর্শক ও সমালোচকদের কাছ থেকেও ভালো সাড়া পেয়েছে। IMDb-তে ছবিটির রেটিং ৮.৬, যা বেশ উচ্চ। এই পুজো মরসুমে একশোর উপরে শো হাউসফুল হয়েছে, যা ছবিটির জনপ্রিয়তার আরেকটি প্রমাণ।
‘বহুরূপী’র এই সাফল্য বাংলা সিনেমা শিল্পের জন্য একটি বড় প্রাপ্তি বলে মনে করছেন পরিচালকদ্বয়। তাঁদের মতে, এই সাফল্য ভবিষ্যতে আরও ভিন্ন ধরনের বিষয় নিয়ে সিনেমা তৈরির সাহস যোগাবে।
উল্লেখযোগ্য যে, ‘বহুরূপী’ ছবিটি মাত্র ৪ দিনের মধ্যেই উইন্ডোজ প্রোডাকশনের সর্বাধিক ব্যবসা করা ছবি হয়ে উঠেছে। এটি প্রমাণ করে যে দর্শকরা এখনও ভালো মানের বাংলা ছবি দেখতে আগ্রহী।
ছবিটির প্রেক্ষাপট ১৯৯৮ থেকে ২০০৩-২০০৫ সালের মধ্যে। পশ্চিমবঙ্গের বুকে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই ছবির গল্প তৈরি করা হয়েছে। ছবিতে দুটি প্রেমের গল্প একসঙ্গে দেখানো হয়েছে – একদিকে শিবপ্রসাদ ও কৌশানীর জুটি, অন্যদিকে আবির ও ঋতাভরীর জুটি।
Indoor Plant: এই পাঁচ প্রকার গাছ বাড়িকে রাখবে ঝকঝকে, অক্সিজেনে ভরপুর
‘বহুরূপী’র সাফল্য আরও তাৎপর্যপূর্ণ কারণ এই বছর পুজোয় মাত্র তিনটি বাংলা ছবি মুক্তি পেয়েছে। এর মধ্যে ‘বহুরূপী’ ছাড়াও রয়েছে দেব-সৃজিতের ‘টেক্কা’ এবং মিঠুন-সোহমের ‘শাস্ত্রী’। তিনটি ছবিরই নিজস্ব দর্শক গোষ্ঠী রয়েছে, কিন্তু ‘বহুরূপী’ যেভাবে দর্শক টানছে তা অভূতপূর্ব।
‘বহুরূপী’র সাফল্যের পিছনে রয়েছে একটি সুচিন্তিত মার্কেটিং কৌশল। ছবি মুক্তির আগে থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার চালানো হয়েছিল। এছাড়া, শিবপ্রসাদ-নন্দিতা জুটির পূর্ববর্তী সাফল্যগুলিও এই ছবির প্রতি দর্শকদের আগ্রহ বাড়িয়েছে।
তবে শুধু মার্কেটিং নয়, ছবির গল্প ও উপস্থাপনাও দর্শকদের মন জয় করেছে। চোর-পুলিশের গল্পের সঙ্গে দুটি প্রেমের গল্প মিশিয়ে একটি সুসংহত কাহিনী তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া, শিবপ্রসাদ ও আবিরের দ্বৈরথ দর্শকদের উৎসাহিত করেছে।
‘বহুরূপী’র সাফল্য শুধু বাংলা সিনেমার জন্য নয়, সমগ্র ভারতীয় আঞ্চলিক সিনেমার জন্যও একটি ইতিবাচক সংকেত। এটি প্রমাণ করে যে ভালো গল্প ও উপস্থাপনা থাকলে আঞ্চলিক ভাষার ছবিও বড় সাফল্য পেতে পারে।
পরিশেষে বলা যায়, ‘বহুরূপী’র এই অভূতপূর্ব সাফল্য বাংলা সিনেমা শিল্পকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এটি অন্যান্য নির্মাতাদের উৎসাহিত করবে আরও ভালো ও নতুন ধরনের ছবি তৈরি করতে। আশা করা যায়, এই ধারা অব্যাহত থাকবে এবং বাংলা সিনেমা আবারও তার হারানো গৌরব ফিরে পাবে।
মন্তব্য করুন