UPI transactions India: ভারতের ডিজিটাল পেমেন্ট বিপ্লবে UPI (Unified Payments Interface) এর ভূমিকা অনস্বীকার্য। আজকের দিনে প্রতিদিন কোটি কোটি মানুষ তাদের দৈনন্দিন লেনদেনের জন্য UPI ব্যবহার করছেন। কিন্তু আপনি কি জানেন ভারতের কোন রাজ্যগুলোতে সবচেয়ে বেশি UPI লেনদেন হচ্ছে? ২০২৫ সালের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ভারতের কিছু নির্দিষ্ট রাজ্য ডিজিটাল পেমেন্টের ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছে। আজকের এই বিস্তারিত আলোচনায় আমরা জানব কোন রাজ্যগুলো UPI লেনদেনে এগিয়ে আছে এবং কেন তারা এই অবস্থানে পৌঁছেছে।
মহারাষ্ট্র: ভারতের UPI লেনদেনের রাজা
ভারতে UPI লেনদেনের ক্ষেত্রে মহারাষ্ট্র একচ্ছত্র আধিপত্য বজায় রেখেছে। ২০২৫ সালের মে মাসের তথ্য অনুযায়ী, সমগ্র ভারতের UPI লেনদেনের ১৩.১৯% এই একটি রাজ্যেই হয়ে থাকে। এটি অবাক করার মতো কিছু নয় কারণ মহারাষ্ট্র ভারতের অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত।
২০২৫ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে (এপ্রিল-জুন) মহারাষ্ট্রে ৬.৫৮ বিলিয়ন UPI লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। মুম্বই ও পুনের মতো বড় শহরগুলোর উপস্থিতি, শক্তিশালী ব্যাংকিং অবকাঠামো এবং উচ্চ স্মার্টফোন ব্যবহারের কারণে এই রাজ্য এগিয়ে রয়েছে।
মহারাষ্ট্রের সফলতার কারণগুলো:
- ভারতের আর্থিক রাজধানী মুম্বইয়ের উপস্থিতি
- উন্নত ডিজিটাল অবকাঠামো
- ব্যাপক শিল্প ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম
- শিক্ষিত জনগোষ্ঠী এবং উচ্চ আয়
কর্ণাটক: প্রযুক্তির রাজ্যের ডিজিটাল শক্তি
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কর্ণাটক, যেখানে ভারতের মোট UPI লেনদেনের ৭.৭৩% সম্পন্ন হয়। ভারতের ‘সিলিকন ভ্যালি’ হিসেবে পরিচিত বেঙ্গালুরুর উপস্থিতি এই রাজ্যকে ডিজিটাল পেমেন্টে এগিয়ে রাখতে সাহায্য করেছে।
প্রথম ত্রৈমাসিকে কর্ণাটকে ৩.১০ বিলিয়ন UPI লেনদেন হয়েছে। প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর কর্মীরা এবং টেক-স্যাভি জনগোষ্ঠী এই রাজ্যে UPI-এর ব্যাপক ব্যবহার নিশ্চিত করেছে।
উত্তর প্রদেশ: জনসংখ্যার শক্তিতে এগিয়ে
ভারতের সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য উত্তর প্রদেশ তৃতীয় স্থান দখল করে আছে ৭.৫০% লেনদেনের ভাগ নিয়ে। ২৪ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার এই রাজ্যে ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রথম ত্রৈমাসিকে উত্তর প্রদেশে ৩.৫৮ বিলিয়ন UPI লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে। যদিও জনসংখ্যার তুলনায় শতকরা হার কম, তবুও গ্রামীণ এলাকায় স্মার্টফোনের বিস্তার এবং সরকারি উদ্যোগের কারণে এই সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তেলেঙ্গানা ও তামিলনাড়ু: দক্ষিণ ভারতের ডিজিটাল অগ্রগতি
চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে রয়েছে যথাক্রমে তেলেঙ্গানা (৫.৮৩%) এবং তামিলনাড়ু (৪.৬০%)। হায়দ্রাবাদের প্রযুক্তি কেন্দ্র এবং চেন্নাইয়ের শিল্প ভিত্তি এই দুই রাজ্যকে UPI লেনদেনে এগিয়ে রেখেছে।
প্রথম ত্রৈমাসিকে তেলেঙ্গানায় ২.৭৭ বিলিয়ন এবং তামিলনাড়ুতে ২.৩৩ বিলিয়ন UPI লেনদেন হয়েছে।
UPI লেনদেনের বর্তমান পরিস্থিতি: ২০২৫ সালের চিত্র
২০২৫ সালে ভারতে UPI লেনদেনের পরিমাণ রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে। জুলাই মাসে ১৯.৪৬ বিলিয়ন লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে, যা আগের সমস্ত রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে। মে মাসেও ১৮.৬৮ বিলিয়ন লেনদেন হয়েছিল।
লেনদেনের মূল্যের দিক থেকেও বৃদ্ধি চোখে পড়ার মতো। মে ২০২-এ ₹২৫.১৪ লাখ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৩% বৃদ্ধি।
কেন এই রাজ্যগুলো এগিয়ে? বিশ্লেষণ
অর্থনৈতিক কারণ
যে রাজ্যগুলোর GDP বেশি, সেখানে স্বাভাবিকভাবেই বেশি আর্থিক লেনদেন হয়। মহারাষ্ট্র ভারতের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির অধিকারী, তাই এখানে UPI লেনদেনও সবচেয়ে বেশি।
প্রযুক্তিগত অবকাঠামো
উন্নত ইন্টারনেট সংযোগ, স্মার্টফোনের ব্যাপক ব্যবহার এবং ডিজিটাল সাক্ষরতার হার এই রাজ্যগুলোতে বেশি। কর্ণাটকের মতো প্রযুক্তি কেন্দ্রগুলোতে এটি আরও স্পষ্ট।
শহুরে জনসংখ্যার প্রভাব
শহরাঞ্চলে ডিজিটাল পেমেন্টের ব্যবহার গ্রামাঞ্চলের তুলনায় বেশি। উচ্চ শহুরে জনসংখ্যার রাজ্যগুলো তাই এগিয়ে আছে।
ব্যাংকিং খাতে UPI-এর প্রভাব
UPI লেনদেনে স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ৪৯১.৭৩ কোটি লেনদেন নিয়ে। এরপরে রয়েছে HDFC Bank, Bank of Baroda এবং Union Bank of India।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ৬৩% লেনদেন হচ্ছে পার্সন টু মার্চেন্ট (P2M) ক্যাটাগরিতে, যা দেখায় যে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোতে UPI-এর ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
উদীয়মান রাজ্যসমূহ
বর্তমানে শীর্ষ ১০-এ নেই এমন রাজ্যগুলোতে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা, আসাম এবং অন্যান্য পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে UPI গ্রহণের হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
গ্রামীণ ডিজিটালাইজেশনের প্রভাব
গ্রামীণ এলাকায় চলমান ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া রাজ্যভিত্তিক বণ্টনের ধরণ পরিবর্তন করতে পারে। বিশাল গ্রামীণ জনসংখ্যার রাজ্যগুলো দ্রুত বৃদ্ধি দেখতে পারে।
অবকাঠামোগত উন্নয়ন
ডিজিটাল অবকাঠামোতে অব্যাহত বিনিয়োগ, বিশেষত টায়ার-২ ও টায়ার-৩ শহরগুলোতে, ভবিষ্যতের রাজ্যভিত্তিক UPI বণ্টনকে প্রভাবিত করবে।
সরকারি উদ্যোগ ও নীতিগত প্রভাব
ডিজিটাল ইন্ডিয়া প্রকল্পের প্রভাব রাজ্যভেদে ভিন্ন হয়েছে। যে রাজ্যগুলো ডিজিটাল গভর্নেন্স ও ডিজিটাল পেমেন্ট প্রচারে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে, সেখানে UPI গ্রহণের হার বেশি।
জন ধন যোজনা এবং সরাসরি সুবিধা হস্তান্তর (DBT) প্রোগ্রামগুলো রাজ্যভিত্তিক UPI গ্রহণের ধরণে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে।
BHIM অ্যাপের UPI সার্কেল: পরিবারের সাথে UPI ব্যবহার করুন নিরাপদে, সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে
ব্যবসায়িক সুযোগ ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা
আঞ্চলিক অর্থনৈতিক বৃদ্ধি
উচ্চ UPI লেনদেনের পরিমাণ প্রায়শই আঞ্চলিক অর্থনৈতিক বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কযুক্ত। যে রাজ্যগুলোতে বেশি ডিজিটাল পেমেন্ট গ্রহণ হয়, সেখানে সাধারণত ভালো অর্থনৈতিক সূচক দেখা যায়।
ব্যবসায়িক মডেল অভিযোজন
কোম্পানিগুলো আঞ্চলিক UPI গ্রহণের ধরণ অনুযায়ী তাদের ব্যবসায়িক মডেল তৈরি করে। বেশি গ্রহণের হার আছে এমন রাজ্যগুলোতে আরও ডিজিটাল-প্রথম ব্যবসায়িক মডেল দেখা যায়।
২০২৫ সালের রাজ্যভিত্তিক UPI লেনদেনের তথ্য একটি গতিশীল ও বিকশিত ডিজিটাল পেমেন্ট পরিস্থিতি প্রকাশ করে। মহারাষ্ট্রের অব্যাহত আধিপত্য, কর্ণাটকের প্রযুক্তি-চালিত কর্মক্ষমতা এবং উত্তর প্রদেশের জনতাত্ত্বিক সুবিধা ভারত জুড়ে ডিজিটাল পেমেন্ট গ্রহণ চালনাকারী বিভিন্ন কারণ তুলে ধরে।
শীর্ষ ১০ রাজ্যে UPI লেনদেনের ঘনত্ব, যা মোট আয়তনের প্রায় ৬৩% জুড়ে রয়েছে, উন্নত রাজ্যগুলোতে ডিজিটাল পেমেন্ট গ্রহণের সাফল্য এবং অনুন্নত অঞ্চলে বৃদ্ধির বিপুল সম্ভাবনা উভয়ই নির্দেশ করে।
ভারত যখন তার ডিজিটাল রূপান্তর যাত্রা অব্যাহত রাখে, আমরা আরও সুষম আঞ্চলিক বৃদ্ধি এবং সমস্ত রাজ্য জুড়ে বর্ধিত গ্রহণ দেখার প্রত্যাশা করতে পারি। বর্তমানে শীর্ষ ১০-এর বাইরে থাকা রাজ্যগুলো উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির সুযোগ উপস্থাপন করে, এবং অগ্রণী র্যাঙ্কে তাদের অন্তর্ভুক্তি ভারতের বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল পেমেন্ট নেতা হিসেবে অবস্থান আরও শক্তিশালী করবে।