Moto G96 review: স্মার্টফোনের দুনিয়ায় মটোরোলা বরাবরই একটি বিশ্বস্ত নাম। তাদের G-সিরিজ বছরের পর বছর ধরে ব্যবহারকারীদের মন জয় করে আসছে। সেই ধারাবাহিকতায়, মিড-রেঞ্জ সেগমেন্টে প্রতিযোগিতা আরও বাড়িয়ে তুলতে মটোরোলা নিয়ে আসছে তাদের নতুন স্মার্টফোন, Moto G96 5G। আকর্ষণীয় ডিজাইন, শক্তিশালী পারফরম্যান্স এবং অত্যাধুনিক ক্যামেরার সংমিশ্রণে এই ফোনটি যে কারও নজর কাড়তে বাধ্য। ভারতে এটি জুলাই মাসের ৯ তারিখে লঞ্চ হবে বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। যারা একটি নতুন ফোন কেনার কথা ভাবছেন, তাদের জন্য Moto G96 5G একটি দারুণ বিকল্প হতে পারে। চলুন, এই ফোনটির খুঁটিনাটি বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে জেনে নেওয়া যাক।
ডিজাইন ও ডিসপ্লে: চোখ ধাঁধানো সৌন্দর্য
একটি ফোনের প্রথম আকর্ষণ হলো তার ডিজাইন এবং ডিসপ্লে। মটোরোলা এই দুটি দিকেই বিশেষ নজর দিয়েছে।
নজরকাড়া pOLED ডিসপ্লে
Moto G96 5G ফোনটিতে রয়েছে একটি ৬.৬৭ ইঞ্চির 3D কার্ভড pOLED ডিসপ্লে। এই ডিসপ্লের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এর ১৪৪Hz রিফ্রেশ রেট, যা গেমিং এবং ভিডিও দেখার অভিজ্ঞতাকে করে তুলবে মসৃণ ও প্রাণবন্ত। Full HD+ রেজোলিউশনের সাথে ১৬০০ নিটস পর্যন্ত পিক ব্রাইটনেস থাকায় সরাসরি সূর্যের আলোতেও স্ক্রিনের কনটেন্ট দেখতে কোনো অসুবিধা হবে না। ডিসপ্লের সুরক্ষার জন্য রয়েছে কর্নিং গরিলা গ্লাস ৫ এর সুরক্ষা। এর কালার প্রোডাকশনও চমৎকার, যা সিনেমা বা যেকোনো ভিডিও দেখার সময় একটি অসাধারণ অভিজ্ঞতা দেবে।
প্রিমিয়াম বিল্ড এবং রঙের বাহার
ডিজাইনের দিক থেকে Moto G96 5G এক কথায় প্রিমিয়াম। এর পেছনে ব্যবহার করা হয়েছে ভেগান লেদার ফিনিশ, যা ফোনটিকে একটি ক্লাসি লুক দেওয়ার পাশাপাশি হাতে ধরতেও আরামদায়ক। ফোনটি বেশ পাতলা, মাত্র ৭.৯৩ মিমি এবং ওজন প্রায় ১৭৯ গ্রাম। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ফোনটি IP68 রেটিং প্রাপ্ত, অর্থাৎ এটি সম্পূর্ণভাবে ধুলাবালি এবং জলরোধী। প্রায় ১.৫ মিটার জলের নিচে ৩০ মিনিট পর্যন্ত থাকলেও ফোনটির কোনো ক্ষতি হবে না।
ব্যবহারকারীদের পছন্দের কথা মাথায় রেখে মটোরোলা চারটি প্যানটোন-প্রত্যয়িত রঙে ফোনটি বাজারে আনছে: ড্রেসডেন ব্লু, অ্যাশলে ব্লু, ক্যাটলিয়া অর্কিড এবং গ্রীনার পাসচার। এই আকর্ষণীয় রঙগুলো নিঃসন্দেহে ফোনটির সৌন্দর্যকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
পারফরম্যান্স এবং সফটওয়্যার: শক্তির এক নতুন নাম
যেকোনো স্মার্টফোনের প্রাণ হলো তার প্রসেসর এবং সফটওয়্যার। Moto G96 5G এই ক্ষেত্রেও পিছিয়ে নেই।
শক্তিশালী Snapdragon প্রসেসর
এই ফোনটিতে শক্তি জোগানোর জন্য রয়েছে কোয়ালকমের Snapdragon 7s Gen 2 চিপসেট। ৪ ন্যানোমিটার আর্কিটেকচারে তৈরি এই অক্টা-কোর প্রসেসরটি দৈনন্দিন কাজের পাশাপাশি মাল্টিটাস্কিং এবং গেমিংয়ের জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী। যদিও কিছু প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ মনে করছেন যে ২০২৫ সালের বাজারের তুলনায় এই চিপসেটটি কিছুটা পুরোনো, তবে সাধারণ ব্যবহার এবং মাঝারি মানের গেমিংয়ের জন্য এটি নির্ভরযোগ্য পারফরম্যান্স দেবে।
Moto G85: মাত্র ২০,০০০ টাকায় ফ্ল্যাগশিপ ফোনের সব ফিচার? জেনে নিন এই চমক
র্যাম এবং স্টোরেজ
ফোনটি বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টে পাওয়া যাবে। এর মধ্যে রয়েছে ৮ জিবি র্যামের সাথে ১২৮ জিবি বা ২৫৬ জিবি স্টোরেজ। এছাড়া ১২ জিবি র্যাম এবং ২৫৬ জিবি স্টোরেজের একটি উচ্চতর ভ্যারিয়েন্টও থাকার কথা শোনা যাচ্ছে। এতে LPDDR4x র্যাম এবং UFS 2.2 স্টোরেজ প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রয়োজনে ভার্চুয়াল র্যাম বাড়ানোর সুবিধাও রয়েছে। এছাড়া, একটি হাইব্রিড স্লটের মাধ্যমে স্টোরেজ ১ টিবি পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।
লেটেস্ট অ্যান্ড্রয়েড অভিজ্ঞতা
সফটওয়্যারের দিক থেকে Moto G96 5G ব্যবহারকারীদের হতাশ করবে না। এটি অ্যান্ড্রয়েড ১৫ অপারেটিং সিস্টেমের সাথে বাজারে আসছে। মটোরোলার নিজস্ব My UX স্কিন থাকার কারণে ব্যবহারকারীরা একটি ক্লিন এবং স্টক অ্যান্ড্রয়েডের কাছাকাছি অভিজ্ঞতা পাবেন। কোম্পানি একটি বড় অ্যান্ড্রয়েড ওএস আপডেট এবং তিন বছরের সিকিউরিটি প্যাচ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
Moto G96 5G ক্যামেরা: সেরা ছবি তোলার অভিজ্ঞতা
আজকের দিনে ফোনের ক্যামেরা একটি অপরিহার্য অংশ। মটোরোলা তাদের এই নতুন ফোনে ক্যামেরার উপর বিশেষ জোর দিয়েছে।
ডুয়াল রিয়ার ক্যামেরা সেটআপ
ফোনটির পিছনে রয়েছে একটি ডুয়াল ক্যামেরা সিস্টেম। এর প্রধান ক্যামেরাটি হলো অপটিক্যাল ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন (OIS) সহ একটি ৫০ মেগাপিক্সেলের Sony LYT-700C সেন্সর। OIS থাকার ফলে কম আলোতে বা চলার সময়ও স্থিতিশীল এবং ঝকঝকে ছবি তোলা সম্ভব হবে। দ্বিতীয় ক্যামেরাটি একটি ৮ মেগাপিক্সেলের আল্ট্রাওয়াইড লেন্স, যা ম্যাক্রো ক্যামেরার কাজও করতে সক্ষম। ফলে গ্রুপ ছবি বা ল্যান্ডস্কেপের পাশাপাশি খুব কাছ থেকে কোনো বস্তুর ডিটেইল ছবিও তোলা যাবে।
আকর্ষণীয় সেলফি ক্যামেরা
সেলফি এবং ভিডিও কলের জন্য সামনে একটি ৩২ মেগাপিক্সেলের ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে। এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় বৈশিষ্ট্য হলো এটি দিয়ে 4K রেজোলিউশনে ভিডিও রেকর্ড করা যায়, যা এই দামের ফোনে একটি অসাধারণ সংযোজন।
Moto AI ক্যামেরা ফিচার
ক্যামেরার অভিজ্ঞতাকে আরও উন্নত করতে মটোরোলা এতে Moto AI ফিচার যুক্ত করেছে। এর মধ্যে রয়েছে AI ফটো এনহ্যান্সমেন্ট এবং গুগলের ম্যাজিক এডিটরের মতো টুলস, যা ছবি তোলার পরেও এডিটিংয়ের জন্য দারুণ কার্যকর।
ব্যাটারি এবং চার্জিং: সারাদিনের সঙ্গী
Moto G96 5G ফোনটিতে একটি বিশাল ৫৫০০mAh ব্যাটারি রয়েছে, যা একবার সম্পূর্ণ চার্জে সারাদিন সহজেই চলে যাবে। ভারী ব্যবহারেও এই ব্যাটারি আপনাকে হতাশ করবে না। দ্রুত চার্জ করার জন্য এতে ৬৮ ওয়াটের টার্বোপাওয়ার ফাস্ট চার্জিং সাপোর্ট রয়েছে, যার ফলে খুব কম সময়েই ফোনটি সম্পূর্ণ চার্জ করা যাবে। তবে এতে ওয়্যারলেস চার্জিংয়ের সুবিধা থাকছে না।
কানেক্টিভিটি এবং অন্যান্য ফিচার
কানেক্টিভিটির জন্য এই ফোনে 5G, Wi-Fi 6, ব্লুটুথ ৫.২ এবং একটি ইউএসবি টাইপ-সি পোর্ট রয়েছে। বিনোদনের জন্য এতে ডলবি অ্যাটমস সাপোর্টসহ ডুয়াল স্টেরিও স্পিকার দেওয়া হয়েছে, যা অডিওর মানকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে। সুরক্ষার জন্য রয়েছে একটি ইন-ডিসপ্লে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর এবং ফেস আনলক ফিচার। এর ডিসপ্লেতে “ওয়াটার টাচ” প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলে ভেজা হাতেও স্ক্রিনটি ঠিকভাবে কাজ করে।
Moto G96 5G এর দাম এবং উপলব্ধতা
মটোরোলা নিশ্চিত করেছে যে Moto G96 5G ফোনটি ভারতে ৯ জুলাই, ২০২৫-এ লঞ্চ হবে। ফোনটির বেস ভ্যারিয়েন্টের প্রত্যাশিত দাম প্রায় ১৯,৯৯০ টাকা হতে পারে। বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী, এর দাম ১৬,৯৯৯ টাকা থেকে শুরু করে ২২,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। লঞ্চের পর ফোনটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ফ্লিপকার্ট থেকে কেনা যাবে।
সবকিছু বিবেচনা করে, Moto G96 5G ফোনটিকে মিড-রেঞ্জ সেগমেন্টের একটি শক্তিশালী প্রতিযোগী বলা যেতে পারে। এর প্রিমিয়াম ডিজাইন, অসাধারণ ডিসপ্লে, শক্তিশালী ক্যামেরা এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যাটারি নিঃসন্দেহে ব্যবহারকারীদের মন জয় করবে। যদিও এর চিপসেটটি লেটেস্ট নয় এবং মাত্র একটি অ্যান্ড্রয়েড আপডেটের প্রতিশ্রুতি কিছুটা হতাশাজনক, তবে এর সামগ্রিক ফিচারগুলো এই দামের মধ্যে এটিকে একটি আকর্ষণীয় প্যাকেজ করে তুলেছে। যারা একটি নির্ভরযোগ্য এবং অলরাউন্ডার স্মার্টফোন খুঁজছেন, তাদের জন্য Moto G96 5G অবশ্যই একটি ভালো পছন্দ হতে পারে।