প্রাক্তন ফুটবলার মেহতাব হোসেন এবং তাঁর স্ত্রী মৌমিতা এবার প্রথমবারের মতো নিজেদের নিউটাউনের বাড়িতে দুর্গাপুজোর আয়োজন করছেন। এই অভিনব উদ্যোগ নিয়ে বেশ আলোচনা শুরু হয়েছে সমাজে। মেহতাব ও মৌমিতার এই পদক্ষেপ ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সহাবস্থানের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
মেহতাব হোসেন একজন বিখ্যাত ভারতীয় ফুটবলার, যিনি দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় দলে এবং আইএসএল-এ জামশেদপুর ও কেরালা ব্লাস্টার্সের হয়ে খেলেছেন। তিনি মুসলিম ধর্মাবলম্বী, অন্যদিকে তাঁর স্ত্রী মৌমিতা হিন্দু। তাঁদের এই মিশ্র বিবাহ এবং এখন একসাথে দুর্গাপুজো করার সিদ্ধান্ত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছে।
মেহতাব জানিয়েছেন, “বাড়িতে দুর্গাপুজো করার ইচ্ছে ছিল মৌমিতার। ও আমাকে পুজোর কথা বলতেই আমি রাজি হয়ে যাই। পুজো সবার। আমি কোনও জাতি, ধর্ম মানি না। ঈদের উৎসবে মৌমিতা আমাদের সঙ্গে সামিল হয়। আমরাও দুর্গাপুজোয় আনন্দ করি। বেশ কয়েক বছর ধরে ওর দুর্গাপুজো করার ইচ্ছা ছিল। শেষপর্যন্ত এবছর বাড়িতে পুজো আয়োজন করা সম্ভব হচ্ছে। সমস্ত রীতি মেনেই পুজো হবে।”
দুর্গাপুজো ২০২৪: সন্ধিপূজা মাত্র ৪৮ মিনিট, জেনে নিন মহালয়া থেকে দশমী পর্যন্ত পুজো নির্ঘণ্ট
এই পুজোর আয়োজনে মেহতাবের শ্যালক দেবাশিস রায়ও সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছেন। প্রথমে বড় আকারে পুজো করার পরিকল্পনা থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতির কারণে সেই পরিকল্পনায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। তবে যথেষ্ট ধুমধাম করেই হবে পুজো।
পুজোর প্রস্তুতি পুরোদমে চলছে। ইতিমধ্যে প্রতিমা এসে গিয়েছে। ষষ্ঠীতে বোধন দিয়ে পুজো শুরু হবে। অষ্টমীতে মেহতাব তাঁর প্রাক্তন সতীর্থদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। পুজোর দিনগুলিতে মেহতাব এবং তাঁর পরিবারকে বাঙালি সাজেই দেখা যাবে। উভয় পরিবারের সদস্যরা এই উৎসবে অংশ নেবেন, যার মধ্যে অনেকেই ইতিমধ্যে এসে পৌঁছেছেন।
বাঙালি খাবারের ব্যবস্থাও থাকছে এই পুজোয়। এটি শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং দুই পরিবারের মিলনের একটি অনুষ্ঠান হিসেবেও দেখা হচ্ছে। মেহতাব ও মৌমিতার এই উদ্যোগ প্রমাণ করে যে, ধর্মীয় পার্থক্য কখনোই মানুষের মধ্যে ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বাধা হতে পারে না।
মেহতাব হোসেন শুধু মাঠেই নয়, মাঠের বাইরেও একজন আদর্শ ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। তিনি বলেন, “ঈদে যেমন পরিবারের সঙ্গে আনন্দে মাতি, ঠিক তেমনই সন্তানদের নিয়ে বিভিন্ন পুজো প্যান্ডেলে ঘুরি।” এই মনোভাব প্রমাণ করে যে, তিনি ধর্মীয় সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে উঠে মানবতাকে প্রাধান্য দেন।
দুর্গাপুজোর সপ্তমীতে কলকাতায় বৃষ্টির আশঙ্কা, আবহাওয়া দপ্তরের সতর্কতা জারি!
বর্তমান সময়ে যখন ধর্মীয় বিভেদ ও সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে নানা সমস্যা দেখা যাচ্ছে, তখন মেহতাব-মৌমিতার এই উদ্যোগ একটি ইতিবাচক বার্তা বহন করে। এটি প্রমাণ করে যে, ভালোবাসা ও সম্মান পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে সব বাধা অতিক্রম করতে পারে।
এই ধরনের উদাহরণ সমাজে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি প্রমাণ করে যে, ধর্ম ব্যক্তিগত বিষয় এবং এটি কখনোই মানুষের মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করা উচিত নয়।
মেহতাব হোসেনের মতো একজন বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের এই পদক্ষেপ অন্যদের জন্যও অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে। এটি প্রমাণ করে যে, সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যদি এই ধরনের উদ্যোগ নেন, তাহলে তা সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে।
বাংলার সংস্কৃতিতে দুর্গাপুজো শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মিলনের একটি প্ল্যাটফর্ম। মেহতাব ও মৌমিতার এই উদ্যোগ সেই ঐতিহ্যকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। এটি প্রমাণ করে যে, উৎসব মানুষকে একত্রিত করতে পারে, ধর্মীয় পরিচয় নিরপেক্ষে।
সামগ্রিকভাবে, মেহতাব হোসেন ও মৌমিতার এই উদ্যোগ একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বার্তা বহন করে। এটি প্রমাণ করে যে, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও পারস্পরিক বোঝাপড়া দিয়ে সব ধরনের বিভেদ দূর করা সম্ভব। তাঁদের এই পদক্ষেপ আশা করা যায় অন্যদের জন্যও অনুপ্রেরণার উৎস হবে এবং সমাজে আরও বেশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও সহাবস্থান গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
মন্তব্য করুন