মহাকাশে আটকে থাকা সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোরকে ফিরিয়ে আনতে অবশেষে রওনা দিয়েছে ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের একটি মহাকাশযান। শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫-এ এই উদ্ধার মিশন শুরু হয়েছে। এই যানে আরও চারজন মহাকাশচারী রয়েছেন, যারা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) পৌঁছে সুনীতা ও বুচকে নিয়ে পৃথিবীতে ফিরবেন। নাসার তথ্য অনুযায়ী, তাদের প্রত্যাবর্তনের সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ১৯ মার্চ ২০২৫। এই ঘটনা মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
গত বছরের ৫ জুন ২০২৪-এ সুনীতা উইলিয়ামস এবং বুচ উইলমোর বোয়িংয়ের স্টারলাইনার মহাকাশযানে চড়ে আইএসএস-এর উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন। তাদের মিশন ছিল মাত্র ১০ দিনের। কিন্তু মহাকাশযানে যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়ায় তারা ফিরতে পারেননি। ফলে গত নয় মাস ধরে তারা মহাকাশ স্টেশনে আটকে আছেন। এই পরিস্থিতিতে তাদের উদ্ধারের জন্য নাসা এবং স্পেসএক্স যৌথভাবে ক্রিউ-১০ মিশন পরিকল্পনা করে। শুক্রবার রাতে ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ফ্যালকন ৯ রকেটের মাধ্যমে ক্রিউ ড্রাগন মহাকাশযানটি উৎক্ষেপণ করা হয়। এই মিশনে চারজন নতুন মহাকাশচারী—নাসার নিক হগ এবং রাশিয়ার রসকসমসের আলেকজান্ডার গরবুনভসহ আরও দুজন—মহাকাশ স্টেশনে যাচ্ছেন।
এই ঘটনার পেছনে রয়েছে একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া। স্টারলাইনারের ত্রুটির কারণে সুনীতা ও বুচকে ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা বারবার পিছিয়ে যায়। প্রথমে জানানো হয়েছিল যে ক্রিউ-১০ মিশন মার্চের শেষে উৎক্ষেপণ করা হবে। কিন্তু আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন। তিনি ইলন মাস্ককে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেন। ফলে নাসা মিশনের তারিখ এগিয়ে এনে ১২ মার্চ নির্ধারণ করে। তবে শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া এবং প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির কারণে এটি ১৪ মার্চে উৎক্ষেপিত হয়। মহাকাশযানটি আইএসএস-এ পৌঁছবে ১৬ মার্চের মধ্যে। এরপর এক সপ্তাহের হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষে সুনীতা ও বুচ ১৯ মার্চ পৃথিবীতে ফিরবেন।
মিশনটির গুরুত্ব শুধু উদ্ধারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আইএসএস-এ বর্তমানে সুনীতা স্টেশনের কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তারা ফিরে আসার আগে নতুন ক্রিউ সদস্যদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন। এই প্রক্রিয়ায় সাত দিন সময় লাগবে। বুচ উইলমোর জানিয়েছেন, “ক্রিউ-১০ মিশন মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছলে আমরা এক সপ্তাহ ধরে হস্তান্তর করব। তারপর ১৯ মার্চ ফিরে আসব।” এই মিশনের মাধ্যমে নাসা ও স্পেসএক্সের মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদার হয়েছে। এছাড়া, বোয়িংয়ের স্টারলাইনারের ব্যর্থতার পর স্পেসএক্সের ক্রিউ ড্রাগনই এখন মহাকাশচারীদের পরিবহনে নির্ভরযোগ্য মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
জানা গেছে, সুনীতা ও বুচ মহাকাশে থাকাকালীন বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অংশ নিয়েছেন। তাদের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশ মিশনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করবে। এই ঘটনা মহাকাশ গবেষণায় বেসরকারি সংস্থার ভূমিকাও তুলে ধরেছে। ইলন মাস্কের স্পেসএক্স বর্তমানে নাসার সঙ্গে মিলে মহাকাশে মানুষ পাঠানো ও ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। তবে এই মিশনের সাফল্য এখনও আবহাওয়া এবং প্রযুক্তিগত বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে।
সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫-এ সুনীতা ও বুচ পৃথিবীতে পা রাখবেন। তাদের ফিরে আসা শুধু একটি উদ্ধার মিশনের সাফল্যই নয়, মহাকাশে মানুষের দীর্ঘস্থায়ী উপস্থিতির সম্ভাবনাও প্রমাণ করবে। এই ঘটনা বিশ্বব্যাপী মহাকাশপ্রেমীদের কাছে আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।