Pandua travel guide: পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার উত্তরে অবস্থিত Pandua একটি ঐতিহাসিক শহর। বাংলার সুলতানি আমলের প্রথম রাজধানী হিসেবে এই শহর ১১৪ বছর (১৩৩৯-১৪৫৩) ধরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। শীতের মৌসুমে এই ঐতিহাসিক শহর ভ্রমণের জন্য আদর্শ সময়। প্রাচীন মসজিদ, সমাধি ও স্থাপত্যের নিদর্শন দেখতে প্রতি বছর হাজার হাজার পর্যটক এখানে ভিড় করেন।
Pandua-র ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময়। ১৩৫২ সালে বিদ্রোহী গভর্নর শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ বাংলার তিনটি মুসলিম রাজ্যকে একত্রিত করে একটি স্বাধীন সুলতানি প্রতিষ্ঠা করেন এবং ইলিয়াস শাহি বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। দিল্লি সুলতানি তখন মঙ্গোল আক্রমণে ব্যস্ত থাকায় বাংলার মুসলিম শাসকরা স্বাধীনতা ঘোষণার সুযোগ পান।১১৪ বছর ধরে নয়জন রাজা Pandua থেকে বাংলা শাসন করেন। তাদের মধ্যে রাজা গণেশ, তার পুত্র জালালুদ্দিন মুহাম্মদ শাহ ও পৌত্র শামসুদ্দিন আহমদ শাহ ব্যতীত সবাই ছিলেন ইলিয়াস শাহি বংশের। এই সময় Pandua-তে অনেক প্রাসাদ, দুর্গ, সেতু, মসজিদ ও সমাধিসৌধ নির্মিত হয়।
Pandua ভ্রমণের জন্য শীতকাল (নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি) সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। এই সময় আবহাওয়া থাকে শুষ্ক ও আরামদায়ক, যা দীর্ঘ সময় ধরে ঘুরে দেখার জন্য আদর্শ। তাপমাত্রা সাধারণত ১০-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে।
মাস | গড় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা (°C) | গড় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা (°C) |
---|---|---|
নভেম্বর | ২৮ | ১৭ |
ডিসেম্বর | ২৪ | ১২ |
জানুয়ারি | ২৩ | ১০ |
ফেব্রুয়ারি | ২৬ | ১৩ |
Pandua-র সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্থাপত্য হল আদিনা মসজিদ। ১৩৬৯ সালে সুলতান সিকান্দার শাহ এই মসজিদ নির্মাণ করেন। নির্মাণকালে এটি ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের বৃহত্তম মসজিদ। পাথর ও ইটের তৈরি এই মসজিদের মধ্যস্থলে রয়েছে একটি বিশাল আয়তাকার প্রাঙ্গণ। পশ্চিম দেয়ালে রয়েছে সুন্দর নকশা করা মেহরাব। প্রার্থনা কক্ষে রয়েছে পাঁচটি হল। অন্য তিন দিকে রয়েছে তিনটি করে হল। পশ্চিম অংশে রয়েছে একটি উঁচু রাজকীয় কক্ষ, যেখানে পৃথক প্রবেশপথ রয়েছে।
একলাখি সমাধিসৌধ একটি একক গম্বুজযুক্ত স্থাপত্য, যা ক্লাসিক টেরাকোটা ইটের শৈলীতে নির্মিত। এর নামকরণের পিছনে রয়েছে একটি কিংবদন্তি – তৎকালীন সময়ে এর নির্মাণে নাকি এক লক্ষ টাকা ব্যয় হয়েছিল। এই স্থাপত্যে তিনটি সমাধি রয়েছে – সুলতান জালালুদ্দিন (জাদু), তাঁর স্ত্রী এবং তাঁর পুত্র (আহমদ শাহ) এর। এটি ১৪১২-১৪১৫ সালের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়।
কুতুব শাহি মসজিদ একলাখি সমাধিসৌধের ঠিক পিছনেই অবস্থিত। এই মসজিদে পাঁচটি তোরণযুক্ত প্রবেশপথ রয়েছে পূর্বদিকে এবং কোণগুলিতে রয়েছে মিনার। একসময় মসজিদের ছাদে যে দশটি গম্বুজ ছিল, তা এখন আর নেই।
হাম্মাম অবস্থিত হরিণ পার্কের উত্তর-পশ্চিম কোণে। সিকান্দার শাহ এটি নির্মাণ করেছিলেন এবং এটি তাঁর রাজকীয় কমপ্লেক্সের অংশ ছিল। দুর্ভাগ্যবশত, এটি এখন ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে। ঘন উদ্ভিদ আচ্ছাদনের কারণে এর অভ্যন্তরীণ অংশে প্রবেশ করা কঠিন, যেখানে একসময় গরম ও ঠাণ্ডা স্নানের জন্য আলাদা কক্ষ ছিল।
হাম্মামের পাশেই অবস্থিত ওয়াচ টাওয়ার। এটি Pandua-র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার অংশ ছিল। একটি ছোট টিলার উপর দাঁড়িয়ে থাকা এই টাওয়ার থেকে আক্রমণকারী সেনাবাহিনীর গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করা হত। উদ্ভিদের আচ্ছাদনের কারণে টাওয়ারের ভিত্তিতে পৌঁছানো কঠিন। প্রতিরক্ষা প্রাচীরের একটি অংশ এবং সংলগ্ন পরিখা এখনও টিকে আছে।
১. যাতায়াত: Pandua মালদা শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত। সবচেয়ে সহজ উপায় হল মালদা থেকে গাড়ি ভাড়া করা। মালদা পৌঁছাতে ট্রেন বা বাস ব্যবহার করা যেতে পারে।
৫. খাবার: Pandua-তে খাবারের ব্যবস্থা সীমিত। পর্যটক মৌসুমে অস্থায়ী স্টল থেকে চা, স্ন্যাকস ও সফট ড্রিংকস পাওয়া যায়। দুপুরের খাবারের জন্য মালদা ও Pandua-র মধ্যবর্তী হাইওয়েতে কিছু ধাবা রয়েছে।
রাজপুত রাজকুমার যিনি গড়েছিলেন ৩০০ বছর আগে ভারতের সর্বোত্তম পরিকল্পিত শহর
Pandua বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের এক অমূল্য সম্পদ। এর প্রাচীন স্থাপত্য ও ধ্বংসাবশেষ মধ্যযুগীয় বাংলার সমৃদ্ধির সাক্ষ্য বহন করে। শীতকালে এই ঐতিহাসিক শহর ভ্রমণ করলে আপনি ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে যাওয়া এক সমৃদ্ধ সভ্যতার স্পর্শ পাবেন। Pandua-র স্থাপত্যগুলি শুধু দর্শনীয় নয়, এগুলি বাংলার সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক বিবর্তনের সাক্ষী। তাই, আপনার ভ্রমণ তালিকায় Pandua-কে অবশ্যই অন্তর্ভুক্ত করুন এবং বাংলার অতীত গৌরবের সাথে নিজেকে সংযুক্ত করুন।
মন্তব্য করুন