Mysterious sadhus at Kumbh Mela: ২০২৫ সালের মহাকুম্ভ মেলা শুরু হতে আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। ইতিমধ্যেই প্রয়াগরাজের সঙ্গমস্থলে শুরু হয়েছে সাধু-সন্ন্যাসীদের আগমন। এবারের মহাকুম্ভে বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠেছেন কয়েকজন অভিনব সাধু, যাঁদের অদ্ভুত সাধনা ও বেশভূষা দেখে বিস্মিত হচ্ছেন ভক্তরা।
মহাকুম্ভ মেলা ২০২৫: তারিখ ও স্থান
২০২৫ সালের মহাকুম্ভ মেলা শুরু হবে ১৩ জানুয়ারি থেকে এবং চলবে ২৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এই ৪৫ দিনব্যাপী মেলা অনুষ্ঠিত হবে উত্তর প্রদেশের প্রয়াগরাজে, গঙ্গা-যমুনা-সরস্বতী নদীর সঙ্গমস্থলে।
Kumbh Mela 2025: আধ্যাত্মিক উৎসব যা কোটি মানুষের জীবন বদলে দেবে
শাহী স্নানের তারিখ
মহাকুম্ভ মেলায় ৬টি শাহী স্নানের দিন রয়েছে:
তারিখ | তিথি |
---|---|
১৩ জানুয়ারি | পৌষ পূর্ণিমা |
১৪ জানুয়ারি | মকর সংক্রান্তি |
২৯ জানুয়ারি | মৌনী অমাবস্যা |
৩ ফেব্রুয়ারি | বসন্ত পঞ্চমী |
১২ ফেব্রুয়ারি | মাঘী পূর্ণিমা |
২৬ ফেব্রুয়ারি | মহাশিবরাত্রি |
মহাকুম্ভের ঐতিহাসিক তাৎপর্য
মহাকুম্ভ মেলার ইতিহাস অত্যন্ত প্রাচীন। মৌর্য ও গুপ্ত যুগ থেকেই এর প্রচলন ছিল বলে মনে করা হয়। চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাঙের লেখায় এই মেলার উল্লেখ পাওয়া যায়। মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে কুম্ভ মেলা আরও জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।ব্রিটিশ শাসনামলে কুম্ভ মেলার আয়োজন আরও সুসংগঠিত হয়। রেল যোগাযোগ, নাগা সাধুদের স্নান মিছিলের নির্ঘণ্ট ইত্যাদি ব্রিটিশদের দেওয়া অবদান।স্বাধীনতার পর থেকে কুম্ভ মেলা জাতীয় ঐক্য ও সংহতির প্রতীক হিসেবে গুরুত্ব পেয়েছে। ২০১৭ সালে UNESCO এই মেলাকে World Heritage তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
মহাকুম্ভের আধ্যাত্মিক তাৎপর্য
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী, দেবাসুর যুদ্ধের সময় অমৃত কলসের ১২ ফোঁটা পৃথিবীর ৪টি স্থানে পড়েছিল – প্রয়াগরাজ, হরিদ্বার, নাসিক ও উজ্জয়িনী। সেই কারণে এই ৪টি স্থানে পর্যায়ক্রমে কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।বিশ্বাস করা হয়, মহাকুম্ভের সময় এই পবিত্র নদীতে স্নান করলে সমস্ত পাপ ধুয়ে যায় এবং মোক্ষলাভ হয়।
২০২৫ মহাকুম্ভের বিশেষত্ব
২০২৫ সালের মহাকুম্ভ মেলা বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ:
- ১২ বছর পর প্রয়াগরাজে আয়োজিত হচ্ছে
- ৪০ কোটি তীর্থযাত্রীর সমাগম হওয়ার আশা করা হচ্ছে
- ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশ হিসেবে বিবেচিত হবে
- মহাকাশ থেকেও দৃশ্যমান হবে এই বিশাল জনসমাগম
সাতক্ষীরায় ‘খোটা শাকের মেলা’: প্রকৃতির অমূল্য সম্পদ সংরক্ষণের অভিনব উদ্যোগ
অভিনব সাধুদের অদ্ভুত সাধনা
এবারের মহাকুম্ভে যে ১০ জন অভিনব সাধু বিশেষভাবে নজর কেড়েছেন:
- শস্যখেত সাধু: এই সাধুর মাথায় রয়েছে একটি ছোট শস্যখেত। দীর্ঘদিন ধরে মাথায় মাটি ও বীজ বহন করে তিনি এই অদ্ভুত সাধনা করছেন।
- চাবি সাধু: এই সাধুর কোমরে ঝুলছে শত শত চাবির গোছা। প্রতিটি চাবি নাকি কোনো না কোনো আধ্যাত্মিক রহস্যের সমাধান করে।
- জটাধারী সাধু: ৯০ বছর বয়সী এই সাধুর জটা এতই লম্বা যে তা মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তিনি বলেন, “আমি মানুষকে আশীর্বাদ দিতে এসেছি।”
- অস্নাত সাধু: ৩২ বছর ধরে স্নান না করা এক সাধু এবারের মহাকুম্ভে এসেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এটি তাঁর বিশেষ সাধনার অঙ্গ।
- খর্বকায় সাধু: মাত্র ৩ ফুট ৮ ইঞ্চি লম্বা এক সাধু বিশেষ আকর্ষণ হয়ে উঠেছেন। তাঁর বয়স ৩২ বছর।
- অগ্নি সাধু: সারা শরীরে আগুন জ্বালিয়ে ধ্যানমগ্ন থাকেন এই সাধু।
- জল সাধু: দিনের বেশিরভাগ সময় জলে ডুবে থাকেন এই সাধু।
- উর্ধ্বমুখী সাধু: বছরের পর বছর আকাশের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকেন।
- একপদ সাধু: একটি পায়ে দাঁড়িয়ে থেকে কঠোর তপস্যা করেন।
- মৌনী সাধু: দীর্ঘকাল ধরে মৌন ব্রত পালন করে চলেছেন।
মহাকুম্ভের প্রস্তুতি
প্রয়াগরাজের সঙ্গম এলাকায় মহাকুম্ভের প্রস্তুতি চলছে পুরোদমে:
- একটি বিশাল অস্থায়ী শহর নির্মাণ করা হচ্ছে
- লক্ষ লক্ষ তীর্থযাত্রীর থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে
- নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হচ্ছে
- যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত করা হচ্ছে
- স্বাস্থ্য পরিষেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে
মহাকুম্ভ মেলা শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি ভারতীয় সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের এক অনন্য প্রকাশ। লক্ষ লক্ষ মানুষের মিলনমেলায় এখানে ঘটে আধ্যাত্মিকতা ও সামাজিকতার অপূর্ব সমন্বয়। ২০২৫ সালের মহাকুম্ভ মেলা যে ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় সমাবেশ হিসেবে চিহ্নিত হবে, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।