How do fish sleep?: মাছ কীভাবে ঘুমায় – এটি একটি অত্যন্ত কৌতূহলোদ্দীপক প্রশ্ন যা অনেকেরই মনে জাগে। আমরা যেভাবে ঘুমাই, মাছেরা কি সেভাবেই ঘুমায়? নাকি তাদের ঘুমের ধরন সম্পূর্ণ আলাদা? আসুন জেনে নেওয়া যাক মাছের ঘুমের রহস্যময় দুনিয়া সম্পর্কে।গবেষণায় দেখা গেছে, মাছেরা আসলেই ঘুমায়। তবে তাদের ঘুমের ধরন মানুষের থেকে অনেকটাই আলাদা।
মাছেরা সাধারণত চোখ বন্ধ করে না বা শুয়ে পড়ে না। বরং তারা পানিতে ভেসে থেকে বা কোনো নিরাপদ জায়গায় স্থির হয়ে থেকে বিশ্রাম নেয়। এই সময় তাদের শারীরিক ক্রিয়াকলাপ কমে যায় এবং বাহ্যিক উদ্দীপনার প্রতি সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পায়।বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, মাছের মস্তিষ্কের ক্রিয়াকলাপও ঘুমের সময় পরিবর্তিত হয়। জিব্রাফিশের উপর গবেষণায় দেখা গেছে, তাদের মস্তিষ্কে দুই ধরনের ঘুমের অবস্থা দেখা যায় – ধীর তরঙ্গ ঘুম এবং প্যারাডক্সিক্যাল ঘুম। এই দুই ধরনের ঘুম স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মতোই। তবে মাছের ক্ষেত্রে দ্রুত চোখের গতি দেখা যায় না।মাছের ঘুমের সময়কাল ও ধরন বিভিন্ন প্রজাতির মধ্যে ভিন্ন হয়।
Indian National Fish: ভারতের জাতীয় মাছ নয়, জলজ প্রাণী – জানুন এই প্রাণীর অজানা রহস্য!
কিছু মাছ দিনের বেলায় ঘুমায়, আবার কিছু রাতের বেলায়। অনেক মাছ নিরাপদ আশ্রয়স্থলে গিয়ে ঘুমায়, যেমন প্রবাল প্রাচীরের ফাঁকে বা সমুদ্রতলের কাদায়। কিছু মাছ আবার জলের মধ্যে ভেসে থেকেই ঘুমায়।বিশেষ কিছু মাছ প্রজাতি, যেমন শার্ক, তাদের ঘুমের সময়ও সাঁতার কাটতে থাকে। কারণ তাদের ফুসফুসে অক্সিজেন সরবরাহের জন্য নিরন্তর জলপ্রবাহ প্রয়োজন। এসব মাছ মস্তিষ্কের একটি অংশ সক্রিয় রেখে অন্য অংশ ঘুমিয়ে নেয়, যাকে বলা হয় unihemispheric sleep বা অর্ধগোলার্ধ ঘুম।মাছের ঘুমের চক্র নিয়ন্ত্রণে মেলাটোনিন হরমোনের ভূমিকা রয়েছে। এই হরমোন মানুষের ঘুমেরও নিয়ামক। গবেষণায় দেখা গেছে, মাছের শরীরেও দিন-রাতের আলো-অন্ধকারের তালে মেলাটোনিন নিঃসরণ হয়, যা তাদের ঘুম-জাগরণ চক্র নিয়ন্ত্রণ করে।
মাছের ঘুমের আরও একটি আকর্ষণীয় দিক হল estivation বা গ্রীষ্মকালীন সুপ্তি। কিছু মাছ প্রজাতি শুষ্ক মৌসুমে জলাশয় শুকিয়ে গেলে মাটির নীচে লুকিয়ে থেকে দীর্ঘ সময় ধরে এক ধরনের সুপ্ত অবস্থায় থাকে। এটি শীতনিদ্রার মতোই একটি বিশেষ অভিযোজন।মাছের ঘুম নিয়ে গবেষণা থেকে জানা গেছে, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মাছেরাও মানুষের মতো sleep deprivation বা ঘুমের ঘাটতির শিকার হয়। এর ফলে তাদের স্বাস্থ্য ও আচরণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তাই অ্যাকোয়ারিয়ামে মাছ পালনের ক্ষেত্রে তাদের পর্যাপ্ত ঘুমের ব্যবস্থা করা গুরুত্বপূর্ণ।মাছের ঘুমের লক্ষণ চিনতে পারলে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার অ্যাকোয়ারিয়ামের মাছগুলো কখন ঘুমাচ্ছে। সাধারণত মাছ ঘুমানোর সময় নিশ্চল হয়ে থাকে, জলের তলায় বা উপরে ভেসে থাকে, বা কোনো নিরাপদ জায়গায় আশ্রয় নেয়। তারা বাইরের উদ্দীপনায় কম সাড়া দেয় এবং প্রতিদিন একই সময়ে বিশ্রাম নেয়।
অতিরিক্ত ঘুম থেকে মুক্তির ৯টি কার্যকর উপায় – যা আপনার জীবনকে বদলে দিতে পারে!
মাছের ঘুমের বৈশিষ্ট্য জানার পর এখন প্রশ্ন জাগতে পারে – মাছেরা কি স্বপ্ন দেখে? এখনও পর্যন্ত এর কোনো নিশ্চিত প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে যেহেতু মাছের মস্তিষ্কে REM sleep এর মতো অবস্থা দেখা যায়, তাই বিজ্ঞানীরা মনে করেন মাছেরাও হয়তো কোনো না কোনোভাবে স্বপ্ন দেখতে পারে।মাছের ঘুম নিয়ে গবেষণা থেকে আরও জানা গেছে, এই প্রক্রিয়া কমপক্ষে ৪৫০ মিলিয়ন বছর আগে থেকেই বিবর্তিত হয়েছে। অর্থাৎ জলচর প্রাণী স্থলভাগে আসার আগে থেকেই মাছের পূর্বসূরিদের মধ্যে ঘুমের প্যাটার্ন দেখা যেত। এটি প্রমাণ করে যে ঘুম জীবনের একটি মৌলিক প্রক্রিয়া যা প্রায় সব প্রাণীর মধ্যেই বিদ্যমান।
মাছের ঘুম নিয়ে গবেষণা শুধু জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিকোণ থেকেই গুরুত্বপূর্ণ নয়, এর ব্যবহারিক প্রয়োগও রয়েছে। জিব্রাফিশের মতো স্বচ্ছ মাছের উপর গবেষণা করে বিজ্ঞানীরা মানুষের ঘুমের রোগ ও ব্যাধি সম্পর্কে নতুন তথ্য জানতে পারছেন। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে ঘুমের ওষুধ তৈরির নতুন পথ খুলতে পারে।সামগ্রিকভাবে বলা যায়, মাছের ঘুম একটি জটিল ও আকর্ষণীয় বিষয়। এটি প্রমাণ করে যে প্রকৃতিতে জীবনের বিভিন্ন রূপ কত বিচিত্র ও বিস্ময়কর। মাছের ঘুম সম্পর্কে আরও গবেষণা হলে নিশ্চয়ই আমরা জীবনের আরও অনেক রহস্য জানতে পারব।
মন্তব্য করুন