ছাত্র জনতার নবান্ন অভিযানে সকাল থেকেই মারমুখী উভয় পক্ষই

Nabanna Abhijan Protest March: আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছাত্রীর মৃত্যুর প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২৭ অগস্ট, ২০২৪) কলকাতা ও হাওড়ায় নবান্ন অভিযান শুরু হয়েছে। 'পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ' নামক একটি সংগঠনের আহ্বানে…

Chanchal Sen

 

Nabanna Abhijan Protest March: আরজি কর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছাত্রীর মৃত্যুর প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২৭ অগস্ট, ২০২৪) কলকাতা ও হাওড়ায় নবান্ন অভিযান শুরু হয়েছে। ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজ’ নামক একটি সংগঠনের আহ্বানে এই অভিযান শুরু হয়। সকাল থেকেই কলকাতা ও হাওড়ার বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। পুলিশের লাঠিচার্জ ও জলকামানের মুখে পড়েছেন বিক্ষোভকারীরা। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরাও পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছুড়েছেন। এই সংঘর্ষে উভয় পক্ষের বেশ কিছু লোক আহত হয়েছেন।

বিক্ষোভকারীরা মূলত দুটি জায়গায় জমায়েত হয়েছিলেন – কলকাতার কলেজ স্কোয়্যার এবং হাওড়ার সাঁতরাগাছি বাসস্ট্যান্ড। কলেজ স্কোয়্যার থেকে মিছিল সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ, ধর্মতলা, ইডেন গার্ডেন্স, হেস্টিংস হয়ে নবান্নের দিকে এগোনোর পরিকল্পনা ছিল। অন্যদিকে সাঁতরাগাছি থেকে কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ধরে নবান্নের দিকে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল।

তবে বিক্ষোভকারীদের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে দেয়নি পুলিশ। সকাল থেকেই কলকাতা ও হাওড়ার বিভিন্ন জায়গায় পুলিশের বিশাল বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। বিক্ষোভকারীদের আটকাতে পুলিশ জলকামান, কাঁদানে গ্যাস এবং লাঠিচার্জের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। হাওড়া ব্রিজে বিক্ষোভকারী-পুলিশের সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করে। পুলিশের জলকামানের মুখে পড়েন বিক্ষোভকারীরা।

মমতার ‘ভুল’-এর মালা: R.G Kar কাণ্ডে মুখ্যমন্ত্রীর ৭টি বিতর্কিত মন্তব্য

পুলিশের এই কঠোর পদক্ষেপের প্রতিবাদে বিক্ষোভকারীরাও হিংসাত্মক হয়ে ওঠেন। তাঁরা পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল ছোড়েন। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ অফিসার আহত হন। একজন পুলিশ অফিসারের মাথায় ইটের আঘাতে গুরুতর জখম হয়েছে বলে জানা গেছে।

এই অভিযানের আয়োজকদের মধ্যে অন্যতম শুভঙ্কর হালদারের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির অভিযোগ রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি মেজাজ হারিয়ে ফেলেন এবং স্বীকার করেন যে তিনি আরএসএস-এর সদস্য। অন্য একজন আয়োজক সায়ন লাহিড়িও জানান যে তিনি একসময় তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এবং পরে বিজেপির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।

এই অভিযানকে কেন্দ্র করে কলকাতা ও হাওড়ার বিভিন্ন জায়গায় যান চলাচলে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। বিদ্যাসাগর সেতু, খিদিরপুর রোড, তারাতলা রোড, কোল বার্থ রোড, ফিডার রোড, সার্কুলার গার্ডেন রিচ রোড-সহ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। যাত্রীদের বিকল্প পথে যাতায়াতের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা কুণাল ঘোষ এই অভিযানকে “সমাজবিরোধীদের অভিযান” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “এখন জাস্টিস নয়, চেয়ার চাই। বিজেপির মুখোশ খুলে গিয়েছে। বিজেপির কিছু গুন্ডা অরাজকতা করেছে। এর মধ্যে অনেক বাংলা বিরোধী অপশক্তি আছে।” তিনি পুলিশের ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, “পুলিশ সমস্ত আক্রমণের মুখে পড়ে, রক্তাক্ত হয়েও, গোটা পুলিশবাহিনী সংযমের পরিচয় দিয়েছে।”

কোটা আন্দোলনে ছাত্র মৃত্যুর পিছনে লুকানো সত্য যা জানলে আপনিও স্তম্ভিত হবেন!

অন্যদিকে, বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী বিধানসভায় গিয়ে হুমকি দিয়েছেন যে ছাত্রদের মারধর করা হলে বিজেপি রাস্তায় অবস্থান করবে।

এই অভিযানের প্রভাব শুধু কলকাতা ও হাওড়াতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। উত্তরবঙ্গের উত্তরকন্যাতেও কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিকরা কোনও ঝুঁকি নিতে চাননি।

এই ঘটনা প্রমাণ করে যে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এখনও অস্থির। শাসক দলের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ ক্রমশ বাড়ছে। অন্যদিকে, বিরোধী দলগুলি এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা করছে। এই ধরনের হিংসাত্মক বিক্ষোভ রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে পারে এবং সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় বাধার সৃষ্টি করতে পারে।

তবে এই ধরনের হিংসাত্মক বিক্ষোভ কোনও সমস্যার সমাধান নয়। সরকার ও বিরোধী পক্ষ উভয়কেই সংযম প্রদর্শন করে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করা উচিত। পাশাপাশি, যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই বিক্ষোভ শুরু হয়েছে, সেই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা প্রয়োজন। এটি করলে জনগণের মধ্যে আস্থা ফিরে আসবে এবং এই ধরনের হিংসাত্মক ঘটনা এড়ানো যাবে।

 

About Author
Chanchal Sen

চঞ্চল সেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক। তিনি একজন অভিজ্ঞ লেখক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক, যিনি পলিটিক্স নিয়ে লেখালিখিতে পারদর্শী। চঞ্চলের লেখায় রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের গভীর বিশ্লেষণ এবং সমসাময়িক ঘটনাবলীর সঠিক উপস্থাপন পাঠকদের মুগ্ধ করে। তার নিবন্ধ এবং মতামতমূলক লেখা বস্তুনিষ্ঠতা ও বিশ্লেষণধর্মিতার কারণে পাঠকমহলে ব্যাপকভাবে সমাদৃত। চঞ্চল সেনের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিভঙ্গি এবং গভীর গবেষণা তাকে রাজনৈতিক সাংবাদিকতার জগতে একটি স্বতন্ত্র স্থান প্রদান করেছে। তিনি তার লেখনীর মাধ্যমে পাঠকদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে এবং সমাজে পরিবর্তন আনতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে চলেছেন।