Narendra Modi and Trump Salary and Allowances: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বার্ষিক বেতন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর তুলনায় প্রায় ৮ গুণ বেশি। ট্রাম্প বছরে ৪০০,০০০ ডলার (প্রায় ৩.৩৬ কোটি টাকা) বেতন পান, অন্যদিকে মোদীর মাসিক বেতন মাত্র ৫,০৭,০৫০ টাকা (বার্ষিক প্রায় ৬০.৮৪ লক্ষ টাকা)।
বেতনের পাশাপাশি দুই নেতাই বিভিন্ন ধরনের ভাতা ও সুযোগ-সুবিধা পেয়ে থাকেন। তবে এক্ষেত্রেও মার্কিন প্রেসিডেন্টের সুবিধাগুলো অনেক বেশি মূল্যবান ও ব্যাপক। ট্রাম্প বছরে প্রায় ৫৬৯,০০০ ডলার (৪.৭৮ কোটি টাকা) মূল্যের বিভিন্ন ভাতা পান, যার মধ্যে রয়েছে ৫০,০০০ ডলার ব্যয় ভাতা, ১০০,০০০ ডলার ভ্রমণ ভাতা, ১৯,০০০ ডলার বিনোদন ভাতা এবং হোয়াইট হাউস সাজানোর জন্য ১০০,০০০ ডলার।
অন্যদিকে মোদীর ক্ষেত্রে মাসিক ভাতার পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। তিনি মাসে ৪৫,০০০ টাকা সংসদীয় ভাতা, ৪৫,০০০ টাকা এমপি বিশেষ ভাতা এবং ৩৫,০০০ টাকা অন্যান্য ভাতা পেয়ে থাকেন।
আবাসন ও পরিবহন সুবিধার দিক থেকেও মার্কিন প্রেসিডেন্ট এগিয়ে রয়েছেন। ট্রাম্প বিনামূল্যে হোয়াইট হাউসে বসবাস করেন এবং এয়ার ফোর্স ওয়ান, মেরিন ওয়ান ও বর্মবাহী লিমোজিন ব্যবহারের সুযোগ পান। মোদীও অবশ্য সরকারি বাসভবনে থাকেন এবং সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন, তবে সেগুলোর মান ও মূল্য তুলনামূলকভাবে কম।
নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রেও মার্কিন প্রেসিডেন্টের সুবিধা অনেক বেশি। ট্রাম্প চব্বিশ ঘণ্টা সিক্রেট সার্ভিসের সুরক্ষা পান এবং সম্পূর্ণ বিনামূল্যে সর্বোচ্চ মানের স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেন। মোদীও অবশ্য উচ্চ নিরাপত্তা ও চিকিৎসা সুবিধা পেয়ে থাকেন, তবে সেগুলোর মান ও ব্যাপকতা তুলনামূলকভাবে কম।
পদত্যাগের পরও মার্কিন প্রেসিডেন্টরা উল্লেখযোগ্য আর্থিক ও লজিস্টিক সহায়তা পেয়ে থাকেন। প্রাক্তন প্রেসিডেন্টরা বছরে প্রায় ২৩০,০০০ ডলার (১.৯৩ কোটি টাকা) পেনশন পান। এছাড়াও তারা অফিস স্পেস, কর্মী ও আনুষঙ্গিক খরচের জন্য অর্থ সহায়তা পেয়ে থাকেন। ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীরাও পেনশন ও অন্যান্য সুবিধা পান, তবে সেগুলোর পরিমাণ অনেক কম।
বেতন ও ভাতার পাশাপাশি দুই নেতার মোট সম্পদের পরিমাণেও বিশাল পার্থক্য রয়েছে। ট্রাম্পের মোট সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৩.১ বিলিয়ন ডলার (২৬,০৪০ কোটি টাকা), যা মূলত তার ব্যবসায়িক উদ্যোগ থেকে অর্জিত। অন্যদিকে মোদীর মোট সম্পদের পরিমাণ মাত্র ৭০ লক্ষ টাকার মতো।
তবে এই তুলনা করার সময় দুটি বিষয় মাথায় রাখা প্রয়োজন। প্রথমত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ভারতের তুলনায় অনেক বড় ও শক্তিশালী। দ্বিতীয়ত, মার্কিন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ও ঝুঁকি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর তুলনায় অনেক বেশি।
দুই দেশের জিডিপি’র সাথে তুলনা করলে দেখা যায়, মার্কিন প্রেসিডেন্টের বেতন দেশের মাথাপিছু জিডিপি’র ৬০৬% এর সমান। অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বেতন দেশের মাথাপিছু জিডিপি’র তুলনায় অনেক কম।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের বেতন ২০০১ সাল থেকে অপরিবর্তিত রয়েছে। অনেকে মনে করেন, মুদ্রাস্ফীতির কারণে এই বেতন বাস্তবে কমে গেছে। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বেতন সময়ে সময়ে বৃদ্ধি করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী বছরে প্রায় ১.৬ মিলিয়ন ডলার (১৩.৪৪ কোটি টাকা) বেতন পান, যা বিশ্বের সবচেয়ে বেশি। অন্যদিকে কেনিয়ার প্রেসিডেন্টের বেতন দেশের মাথাপিছু জিডিপি’র ২,৩৬০% এর সমান, যা অনুপাতের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প কখন আবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন? জানুন বিস্তারিত
মার্কিন প্রেসিডেন্টের উচ্চ বেতন ও ভাতার পেছনে যুক্তি হলো, এটি পদের মর্যাদা ও গুরুত্ব প্রতিফলিত করে এবং দুর্নীতি প্রতিরোধে সহায়ক। অন্যদিকে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর তুলনামূলকভাবে কম বেতন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও সামাজিক পরিস্থিতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করা হয়।
তবে শুধু বেতন ও ভাতার পরিমাণ দিয়ে দুই নেতার কার্যকারিতা বা যোগ্যতা বিচার করা যায় না। উভয় নেতাই নিজ নিজ দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। মোদী ও ট্রাম্প উভয়েই জনপ্রিয় নেতা এবং তাদের নেতৃত্বে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নত হয়েছে।
মোদী ও ট্রাম্পের মধ্যে ব্যক্তিগত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, যা দুই দেশের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। উভয় নেতাই ব্যবসাবান্ধব নীতি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দেন। এছাড়া সন্ত্রাসবাদ দমন ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীলতা রক্ষার ক্ষেত্রেও তাদের দৃষ্টিভঙ্গি মিলে যায়।
তবে বাণিজ্য ক্ষেত্রে দুই দেশের মধ্যে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে। ট্রাম্প ভারতের উচ্চ শুল্ক নীতির সমালোচনা করেছেন এবং “পারস্পরিক কর” আরোপের কথা বলেছেন। এ বিষয়ে ভবিষ্যতে আরও আলোচনা হতে পারে।
সামগ্রিকভাবে বলা যায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বেতন ও ভাতার দিক থেকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদীর তুলনায় অনেক এগিয়ে রয়েছেন। তবে এই পার্থক্য দুই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার ভিন্নতার কারণেও। উভয় নেতাই নিজ নিজ দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন এবং তাদের নেতৃত্বে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর হচ্ছে।
মন্তব্য করুন