Narendra Modi Russia Visit Details 2024: মোদি-পুতিনের গোপন চুক্তি,বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন মোড়?

Narendra Modi Russia Visit Details 2024: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাশিয়া সফর শুধু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্যই নয়, বিশ্ব রাজনীতিতেও এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। গত ৮-৯ জুলাই ২০২৪-এ মস্কোতে অনুষ্ঠিত ২২তম…

Ishita Ganguly

 

Narendra Modi Russia Visit Details 2024: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাশিয়া সফর শুধু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের জন্যই নয়, বিশ্ব রাজনীতিতেও এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। গত ৮-৯ জুলাই ২০২৪-এ মস্কোতে অনুষ্ঠিত ২২তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষ সম্মেলনে দুই দেশের মধ্যে ৯টি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই সফর শুধু দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক জোরদার করেনি, বরং বিশ্ব রাজনীতিতে ভারতের অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করেছে।

মোদির এই সফর ছিল তাঁর তৃতীয় মেয়াদে প্রথম বিদেশ সফর। ইউক্রেন যুদ্ধের পর এটিই ছিল তাঁর প্রথম রাশিয়া সফর। পশ্চিমা দেশগুলির কড়া নিষেধাজ্ঞার মুখে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের এই ঘনিষ্ঠতা অনেকেরই চোখে পড়েছে। তবে মোদি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে ভারত তার স্বার্থরক্ষার পাশাপাশি বিশ্বশান্তির প্রতিও সমান গুরুত্ব দেয়।

সফরের সময় মোদি ও পুতিনের মধ্যে যে আলোচনা হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা। দুই নেতা ২০৩০ সালের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। এটি একটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য, কিন্তু অসম্ভব নয়। কারণ ২০২৩-২৪ অর্থবছরেই দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ৬৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।

বাণিজ্য ছাড়াও অন্যান্য ক্ষেত্রেও সহযোগিতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রাশিয়ার সুদূর প্রাচ্য অঞ্চলে ভারতীয় বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য ২০২৪ থেকে ২০২৯ সাল পর্যন্ত একটি দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া আর্কটিক অঞ্চলে সহযোগিতার নীতিমালাও প্রণয়ন করা হয়েছে।

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দুই দেশ একযোগে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ জন্য ভারতের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং রাশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। এর আওতায় একটি যৌথ কর্মগোষ্ঠী গঠন করা হবে যা তথ্য বিনিময়, সেরা অনুশীলন ও স্বল্প ব্যয়ের প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সহযোগিতা করবে।

পারমাণবিক শক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। রাশিয়ার পারমাণবিক শক্তি সংস্থা রোসাটম ভারতে আরও ছয়টি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করছে। এটি ভারতের শক্তি নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। বিশেষ করে যৌথভাবে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে আত্মনির্ভরতা বাড়বে এবং অন্য দেশে রপ্তানির সুযোগও সৃষ্টি হবে।

তবে এই সফর কেবল দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বিশ্ব রাজনীতিতে এর প্রভাব অনস্বীকার্য। ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমা দেশগুলি রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা করলেও ভারত তার স্বতন্ত্র অবস্থান বজায় রেখেছে। মোদি স্পষ্টভাবে বলেছেন যে যুদ্ধের মাধ্যমে কোনো সমস্যার সমাধান হয় না। তিনি আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন।

এই সফরের প্রতিক্রিয়া বিশ্বব্যাপী মিশ্র। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি মোদির এই সফরকে “শান্তি প্রচেষ্টার জন্য বিধ্বংসী আঘাত” হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারত-রাশিয়া সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তবে ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে যে তার পররাষ্ট্রনীতি স্বাধীন এবং জাতীয় স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে প্রণীত।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সফর বহুমুখী কূটনীতির ক্ষেত্রে ভারতের দক্ষতা প্রমাণ করেছে। একদিকে পশ্চিমা দেশগুলির সঙ্গে সম্পর্ক অটুট রেখে, অন্যদিকে রাশিয়ার মতো ঐতিহ্যবাহী বন্ধুর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা – এটি ভারতের কূটনৈতিক সাফল্যের একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।

সামগ্রিকভাবে, মোদির এই রাশিয়া সফর শুধু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেই নয়, বিশ্ব রাজনীতিতেও একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এটি প্রমাণ করেছে যে ভারত শুধু একটি উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তিই নয়, বরং একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক শক্তি হিসেবেও আত্মপ্রকাশ করেছে। আগামী দিনগুলিতে এই সফরের প্রভাব আরও স্পষ্ট হয়ে উঠবে এবং বিশ্ব রাজনীতিতে ভারতের ভূমিকা আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

West Bengal BJP: পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচন ২০২৪ এ বিজেপির উত্থানের ১০ টিকারণ

মোদি-পুতিন সাক্ষাতের সম্ভাব্য ফলাফল নিয়ে একটি বিশ্লেষণ করা যাক:

১. বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদার: দুই নেতা ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন। এটি একটি উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য, যা অর্জন করা চ্যালেঞ্জিং হবে।

২. প্রতিরক্ষা সহযোগিতা: যৌথভাবে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ভারতের প্রতিরক্ষা খাতে আত্মনির্ভরতা বাড়তে পারে।

৩. পারমাণবিক শক্তি: রাশিয়া ভারতে আরও ছয়টি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করছে। এটি ভারতের শক্তি নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।

৪. ইউক্রেন যুদ্ধ: মোদি পুনরায় যুদ্ধের সমাধান আলোচনার মাধ্যমে করার আহ্বান জানিয়েছেন। তবে এতে কোন বড় পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা কম।

৫. ভারতীয় সৈন্যদের প্রত্যাবাসন: পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধে নিযুক্ত ভারতীয় সৈন্যদের মুক্তি দিতে সম্মত হয়েছেন। এটি একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।

৬. পশ্চিমা প্রতিক্রিয়া: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এই সফর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এটি ভারত-মার্কিন সম্পর্কে কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে।

৭. কূটনৈতিক ভারসাম্য: ভারত রাশিয়া ও পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে চলার চেষ্টা করবে।

সামগ্রিকভাবে, এই সফর ভারত-রাশিয়া সম্পর্ককে আরও মজবুত করবে বলে আশা করা যায়। তবে বিশ্ব রাজনীতিতে এর প্রভাব সীমিত হতে পারে, কারণ ভারত সতর্কতার সাথে এগোচ্ছে।

Money Printing Machine: ইচ্ছে মতো কেন টাকা ছাপানো যায় না? অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা ও প্রভাব

মোদি-পুতিনের সফরের ফলাফল ভারতের মধ্যপ্রদেশ নির্বাচনে কী প্রভাব ফেলতে পারে

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির রাশিয়া সফর এবং তার ফলাফল ভারতের মধ্যপ্রদেশ নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে। এই প্রভাবগুলি বিভিন্ন দিক থেকে বিশ্লেষণ করা যেতে পারে, যেমন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং কূটনৈতিক দিক।

 রাজনৈতিক প্রভাব

মোদি-পুতিনের সাক্ষাতের প্রধান রাজনৈতিক প্রভাব হতে পারে মোদির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি। মোদি রাশিয়ার সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান “অর্ডার অফ সেন্ট অ্যান্ড্রু দ্য অ্যাপোস্টল” পেয়েছেন, যা তাকে ভারতের জনগণের মধ্যে আরও জনপ্রিয় করে তুলতে পারে। এই সম্মাননা মোদির নেতৃত্বের প্রতি জনগণের আস্থা বাড়াতে পারে, যা মধ্যপ্রদেশের নির্বাচনে বিজেপির পক্ষে কাজ করবে।

অর্থনৈতিক প্রভাব

মোদি ও পুতিনের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা ভারতের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। ২০৩০ সালের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ১০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এই অর্থনৈতিক উন্নয়ন মধ্যপ্রদেশের জনগণের মধ্যে আশাবাদ সৃষ্টি করতে পারে এবং বিজেপির প্রতি সমর্থন বাড়াতে পারে।

 কূটনৈতিক প্রভাব

মোদি-পুতিনের সাক্ষাতের সময় ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গও উঠে এসেছে। মোদি যুদ্ধের মাধ্যমে কোনো সমস্যার সমাধান হয় না বলে উল্লেখ করেছেন এবং আলোচনা ও কূটনীতির মাধ্যমে সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন। এই কূটনৈতিক অবস্থান ভারতের আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করতে পারে এবং মধ্যপ্রদেশের ভোটারদের মধ্যে মোদির নেতৃত্বের প্রতি আস্থা বাড়াতে পারে।

স্থানীয় প্রভাব

মধ্যপ্রদেশের নির্বাচনে স্থানীয় ইস্যুগুলি যেমন কৃষি, বেকারত্ব, এবং দুর্নীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মোদির রাশিয়া সফর থেকে প্রাপ্ত অর্থনৈতিক সুবিধাগুলি যদি স্থানীয় পর্যায়ে কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা যায়, তবে এটি বিজেপির পক্ষে কাজ করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, রাশিয়া থেকে সস্তায় তেল আমদানি করে জ্বালানির দাম কমানো গেলে, এটি মধ্যপ্রদেশের কৃষকদের জন্য উপকারী হতে পারে।

 বিরোধী প্রতিক্রিয়া

মোদি-পুতিনের সাক্ষাতের বিরোধী প্রতিক্রিয়াও মধ্যপ্রদেশ নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে। বিরোধী দলগুলি মোদির রাশিয়া সফরকে সমালোচনা করে বলতে পারে যে এটি ভারতের আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। তবে মোদি যদি কূটনৈতিকভাবে এই সমালোচনার জবাব দিতে পারেন, তবে এটি বিজেপির পক্ষে কাজ করবে।

 

মোদি-পুতিনের সাক্ষাতের ফলাফল মধ্যপ্রদেশ নির্বাচনে বিভিন্ন দিক থেকে প্রভাব ফেলতে পারে। মোদির জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, এবং কূটনৈতিক সাফল্য বিজেপির পক্ষে কাজ করতে পারে। তবে বিরোধী দলগুলির সমালোচনা এবং স্থানীয় ইস্যুগুলির সমাধানও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সামগ্রিকভাবে, মোদির রাশিয়া সফর মধ্যপ্রদেশ নির্বাচনে বিজেপির জন্য একটি ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

 

About Author
Ishita Ganguly

ঈশিতা গাঙ্গুলী ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি (IGNOU) থেকে স্নাতক। তিনি একজন উদ্যমী লেখক এবং সাংবাদিক, যিনি সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ ও অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে থাকেন। ঈশিতার লেখার ধরন স্পষ্ট, বস্তুনিষ্ঠ এবং তথ্যবহুল, যা পাঠকদের মুগ্ধ করে। তার নিবন্ধ ও প্রতিবেদনের মাধ্যমে তিনি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সামনে আনেন এবং পাঠকদের চিন্তা-চেতনার পরিসরকে বিস্তৃত করতে সহায়তা করেন। সাংবাদিকতার জগতে তার অটুট আগ্রহ ও নিষ্ঠা তাকে একটি স্বতন্ত্র পরিচিতি দিয়েছে, যা তাকে ভবিষ্যতে আরও সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে।