জাতীয় পশুসম্পদ মিশন (National Livestock Mission বা NLM) হল ভারত সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প যা পশুপালন খাতে উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে। এই প্রকল্পটি 2014-15 অর্থবছর থেকে চালু হয়েছে এবং 2021-22 সাল থেকে পুনর্গঠিত আকারে বাস্তবায়িত হচ্ছে[1]।
NLM-এর মূল উদ্দেশ্যসমূহ
1. ক্ষুদ্র জাবর (যেমন ভেড়া, ছাগল), হাঁস-মুরগি এবং শূকর পালন খাতে উদ্যোক্তা উন্নয়নের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
2. উন্নত জাতের প্রাণী প্রজনন এবং পালনের মাধ্যমে প্রতি প্রাণীর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি।
3. মাংস, ডিম, ছাগলের দুধ, পশম এবং পশুখাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি।
4. পশুখাদ্য ও চারার উপলব্ধতা বৃদ্ধি করে চাহিদা-সরবরাহের ব্যবধান কমানো।
5. পশুপালকদের জন্য ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থা প্রচার, যার মধ্যে পশু বীমা অন্তর্ভুক্ত।
6. হাঁস-মুরগি, ভেড়া, ছাগল, পশুখাদ্য ও চারা সম্পর্কিত গবেষণা উৎসাহিত করা।
7. পশুপালকদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে উৎপাদন খরচ কমানো এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
NLM-এর উপ-মিশনসমূহ
NLM তিনটি উপ-মিশনের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে:
1. পশুপালন ও হাঁস-মুরগি জাত উন্নয়ন উপ-মিশন: এর লক্ষ্য হল হাঁস-মুরগি, ভেড়া, ছাগল ও শূকর পালনে উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং জাত উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া।
2. পশুখাদ্য ও চারা উন্নয়ন উপ-মিশন: এর উদ্দেশ্য হল প্রত্যয়িত চারা বীজের উপলব্ধতা বাড়ানো এবং চারা প্রক্রিয়াজাতকরণ ইউনিট স্থাপনে উদ্যোক্তাদের উৎসাহিত করা।
3. উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ উপ-মিশন: এর লক্ষ্য হল ভেড়া, ছাগল, শূকর, পশুখাদ্য ও চারা সম্পর্কিত গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রম, সম্প্রসারণ কার্যক্রম, পশু বীমা এবং উদ্ভাবনী প্রকল্পগুলিকে উৎসাহিত করা।
NLM-এর আওতায় সাবসিডি
NLM উদ্যোক্তা প্রকল্পের আওতায় নিম্নলিখিত খাতগুলিতে 50% মূলধন সাবসিডি প্রদান করা হয়:
– গ্রামীণ হাঁস-মুরগি খামার স্থাপন
– ভেড়া/ছাগল প্রজনন খামার
– হ্যাচারি ও ব্রুডার ইউনিট
– শূকর প্রজনন খামার
– পশুখাদ্য মূল্য সংযোজন ইউনিট
– পশুখাদ্য সংরক্ষণ ইউনিট
বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য সর্বোচ্চ সাবসিডির পরিমাণ 25 লক্ষ থেকে 50 লক্ষ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
যোগ্যতা ও আবেদন প্রক্রিয়া
NLM-এর সুবিধা পাওয়ার জন্য উদ্যোক্তাদের নিম্নলিখিত যোগ্যতা থাকতে হবে:
– সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতা বা দক্ষ কর্মী থাকতে হবে
– ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রকল্পের জন্য ঋণ মঞ্জুর হতে হবে
– প্রকল্প স্থাপনের জন্য নিজস্ব বা ভাড়া করা জমি থাকতে হবে
– KYC-এর জন্য প্রয়োজনীয় সকল নথি থাকতে হবে
আবেদন প্রক্রিয়া:
1. অনলাইনে আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে
2. রাজ্য বাস্তবায়নকারী সংস্থা (SIA) আবেদনপত্র যাচাই করবে
3. ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ঋণ মঞ্জুর করবে
4. SIA কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে প্রকল্প সুপারিশ করবে
5. পশুপালন দপ্তর সাবসিডি অনুমোদন করবে
6. ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ঋণ ও সাবসিডি প্রদান করবে
জাতীয় পশুসম্পদ মিশন (NLM) ভারতের পশুপালন খাতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার পশুপালন খাতে উদ্যোক্তা উন্নয়ন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি এবং গবেষণা ও উন্নয়নকে উৎসাহিত করছে। NLM-এর আওতায় প্রদত্ত আকর্ষণীয় সাবসিডি ও সহায়তা পশুপালকদের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ, যা তাদের আর্থিক উন্নতি ও আত্মনির্ভরশীলতার পথ সুগম করবে।