Navratri 2025: ৯ দিনে ৯টি রঙের পোশাক পরে পাবেন দেবী দুর্গার অসীম আশীর্বাদ!

আপনিও কি এবার নবরাত্রি ২০২৫ উদযাপন করতে চান ঐতিহ্যের সাথে তাল মিলিয়ে? জানেন কি, প্রতিদিন আলাদা রঙের পোশাক পরে দেবী দুর্গার আরাধনা করলে পাওয়া যায় বিশেষ শুভ ফল। এই বছর শারদীয়…

Sangita Chowdhury

 

আপনিও কি এবার নবরাত্রি ২০২৫ উদযাপন করতে চান ঐতিহ্যের সাথে তাল মিলিয়ে? জানেন কি, প্রতিদিন আলাদা রঙের পোশাক পরে দেবী দুর্গার আরাধনা করলে পাওয়া যায় বিশেষ শুভ ফল। এই বছর শারদীয় নবরাত্রি শুরু হবে ২২ সেপ্টেম্বর থেকে এবং শেষ হবে ১ অক্টোবর। মা দুর্গার নয়টি রূপের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এই নয় দিন ধরে নয়টি আলাদা রঙের পোশাক পরার রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য।

প্রতিটি রঙের নিজস্ব আধ্যাত্মিক শক্তি আছে, যা ভক্তদের মধ্যে ইতিবাচক শক্তি সঞ্চার করে এবং দেবী দুর্গার কৃপা লাভে সহায়তা করে। আজকের এই লেখায় আমরা জানবো নবরাত্রি ২০২৫-এর প্রতিদিনের রঙের তাৎপর্য, পোশাক নির্বাচনের টিপস এবং কীভাবে এই উৎসবকে আরও অর্থবহ করে তোলা যায়।

নবরাত্রি ২০২৫: তারিখ এবং দৈনিক রঙের তালিকা

এবছর শারদীয় নবরাত্রি শুরু হবে ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সোমবার থেকে এবং শেষ হবে ১ অক্টোবর মঙ্গলবার। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট রঙ পরে মা দুর্গার বিভিন্ন রূপের আরাধনা করার নিয়ম রয়েছে।

তারিখ দিন উপাস্য দেবী রং
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ প্রথম দিন (প্রতিপদ) মা শৈলপুত্রী সাদা
২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ দ্বিতীয় দিন (দ্বিতীয়া) মা ব্রহ্মচারিণী লাল
২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তৃতীয় দিন (তৃতীয়া) মা চন্দ্রঘণ্টা রয়্যাল ব্লু
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ চতুর্থ দিন (চতুর্থী) মা কুষ্মাণ্ডা হলুদ
২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পঞ্চম দিন (পঞ্চমী) মা স্কন্দমাতা সবুজ
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ষষ্ঠ দিন (ষষ্ঠী) মা কাট্যায়িনী ধূসর
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সপ্তম দিন (সপ্তমী) মা কালরাত্রী কমলা
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ অষ্টম দিন (অষ্টমী) মা মহাগৌরী ময়ূর সবুজ
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ নবম দিন (নবমী) মা সিদ্ধিদাত্রী গোলাপি

প্রথম দিন: সাদা রঙের তাৎপর্য ও পোশাক নির্বাচন

নবরাত্রির প্রথম দিন অর্থাৎ ২২ সেপ্টেম্বর সাদা রঙের পোশাক পরে মা শৈলপুত্রীর আরাধনা করতে হয়। সাদা রং পবিত্রতা, শান্তি এবং নির্মলতার প্রতীক। এই রঙ ভক্তদের মনে আধ্যাত্মিক শান্তি এবং স্থিরতা নিয়ে আসে।

পোশাকের পরামর্শ: সাদা তুলো বা রেশমি শাড়ি, কুর্তা-পায়জামা, অথবা সালোয়ার-কামিজ বেছে নিতে পারেন। সাথে রুপোর গহনা পরলে দেখতে আরও সুন্দর লাগবে।

দ্বিতীয় দিন: লাল রঙের শক্তি ও উৎসাহ

২৩ সেপ্টেম্বর লাল রঙের পোশাক পরে মা ব্রহ্মচারিণীর পূজা করার নিয়ম। লাল রং শক্তি, সাহস, এবং উৎসাহের প্রতীক। এই রঙ ভক্তদের মধ্যে প্রাণশক্তি ও সাহসিকতা বৃদ্ধি করে।

ফ্যাশন টিপস: গাঢ় লাল বা সিন্দুরি রঙের শাড়ি, লেহেঙ্গা বা কুর্তা বেছে নিন। সোনালী গহনা এবং লাল টিকা দিয়ে সাজুন।

তৃতীয় দিন: রয়্যাল ব্লুর গাম্ভীর্য

২৪ সেপ্টেম্বর রয়্যাল ব্লু রঙের পোশাক পরে মা চন্দ্রঘণ্টার আরাধনা করতে হয়। এই রঙ গভীরতা, প্রজ্ঞা এবং স্থিরতার প্রতীক। রয়্যাল ব্লু রং মানসিক শান্তি এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে।

স্টাইলিং গাইড: নেভি ব্লু বা গভীর নীল রঙের পোশাক নির্বাচন করুন। রুপোর বা সোনালী গহনা দিয়ে সাজতে পারেন।

চতুর্থ দিন: হলুদ রঙের আনন্দ ও উৎসাহ

২৫ সেপ্টেম্বর হলুদ রঙের পোশাক পরে মা কুষ্মাণ্ডার পূজা করার নিয়ম। হলুদ রং আনন্দ, উৎসাহ এবং ইতিবাচকতার প্রতীক। এই রঙ পরলে মন প্রফুল্ল থাকে এবং নেতিবাচক চিন্তা দূর হয়।

পোশাকের ধরন: উজ্জ্বল হলুদ, সোনালী-হলুদ বা হলদে রঙের শাড়ি, কুর্তা কিংবা স্যুট পরতে পারেন। সোনার গহনা হলুদ পোশাকের সাথে পারফেক্ট ম্যাচ।

পঞ্চম দিন: সবুজ রঙের প্রাণশক্তি

২৬ সেপ্টেম্বর সবুজ রঙের পোশাক পরে মা স্কন্দমাতার আরাধনা করতে হয়। সবুজ রং প্রকৃতি, বৃদ্ধি, এবং সমৃদ্ধির প্রতীক। এই রঙ নতুন সূচনা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করে।

ড্রেসিং আইডিয়া: গাঢ় সবুজ, পান্না সবুজ বা হালকা সবুজ রঙের পোশাক বেছে নিন। সোনার বা রুপোর গহনা দুটোই মানাবে।

ষষ্ঠ দিন: ধূসর রঙের ভারসাম্য

২৭ সেপ্টেম্বর ধূসর রঙের পোশাক পরে মা কাট্যায়িনীর পূজা করার রীতি। ধূসর রং ভারসাম্য, স্থিতিশীলতা এবং নিরপেক্ষতার প্রতীক। এই রঙ মানসিক স্থিরতা এবং ধৈর্য বৃদ্ধি করে।

ফ্যাশন চয়েস: হালকা ধূসর, স্লেট গ্রে বা চার্কোল গ্রে রঙের পোশাক পরুন। রুপোর গহনা এবং হালকা মেকআপ বেশি মানাবে।

সপ্তম দিন: কমলা রঙের তেজ ও উৎসাহ

২৮ সেপ্টেম্বর কমলা রঙের পোশাক পরে মা কালরাত্রীর আরাধনা করতে হয়। কমলা রং তেজস্বিতা, উৎসাহ এবং শক্তির প্রতীক। এই রঙ ভক্তদের মধ্যে ইতিবাচক শক্তি সঞ্চার করে।

স্টাইল টিপস: উজ্জ্বল কমলা, গেরুয়া বা কেশরী রঙের পোশাক নির্বাচন করুন। সোনার গহনা এবং কমলা রঙের আনুষাঙ্গিক ব্যবহার করতে পারেন।

অষ্টম দিন: ময়ূর সবুজের অনন্যতা

২৯ সেপ্টেম্বর ময়ূর সবুজ রঙের পোশাক পরে মা মহাগৌরীর পূজা করার নিয়ম। ময়ূর সবুজ রং অনন্যতা, সৃজনশীলতা এবং ব্যক্তিত্বের প্রতীক। এই রঙ আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে এবং সৃজনশীল চিন্তাভাবনা উদ্দীপিত করে।

পোশাক নির্বাচন: ময়ূর সবুজ, টিল বা সমুদ্র সবুজ রঙের শাড়ি বা স্যুট পরুন। রুপোর বা সোনার গহনা দুটোই সুন্দর লাগবে।

নবম দিন: গোলাপি রঙের ভালোবাসা ও সৌন্দর্য

৩০ সেপ্টেম্বর গোলাপি রঙের পোশাক পরে মা সিদ্ধিদাত্রীর আরাধনা করে নবরাত্রির সমাপনী দিন পালন করতে হয়। গোলাপি রং ভালোবাসা, কোমলতা এবং সৌন্দর্যের প্রতীক। এই রঙ হৃদয়ে আনন্দ এবং প্রেম সৃষ্টি করে।

চূড়ান্ত স্টাইলিং: হালকা গোলাপি, পিংক বা ম্যাজেন্টা রঙের পোশাক বেছে নিন। মুক্তো বা হীরের গহনা পরলে চমৎকার দেখাবে।

নবরাত্রি ২০২৫-এ পোশাক নির্বাচনের বিশেষ পরামর্শ

কাপড়ের ধরন নির্বাচন

নবরাত্রির সময় আরামদায়ক এবং শ্বাসযোগ্য কাপড় পরা জরুরি। তুলো, রেশম, জর্জেট, এবং চন্দ্রী সিল্কের পোশাক বেছে নিন। এগুলো পরতে আরামদায়ক এবং দেখতেও সুন্দর।

আঞ্চলিক ঐতিহ্য মেনে চলা

বাংলায় নবরাত্রি উদযাপনের সময় ঐতিহ্যবাহী তাঁত শাড়ি, ধুতি-পাঞ্জাবি, এবং কুর্তা-পায়জামা পরার রীতি রয়েছে। হাতে বোনা কাপড় ব্যবহার করলে স্থানীয় কারিগরদের সহায়তা হয় এবং সংস্কৃতির প্রতি শ্রদ্ধা প্রকাশ পায়।

গহনা ও আনুষাঙ্গিক

প্রতিদিনের রঙের সাথে মানানসই গহনা পরুন। সোনার গহনা উষ্ণ রঙের সাথে (হলুদ, কমলা, লাল) এবং রুপোর গহনা শীতল রঙের সাথে (সাদা, নীল, ধূসর) ভালো মানায়।

নবরাত্রি ২০২৫-এ পারিবারিক উদযাপনের উপায়

ঘরোয়া সাজসজ্জা

বাড়িতে রঙিন সাজসজ্জা করুন যা প্রতিদিনের রঙের সাথে মিলে। দীপাবলি, রঙিন ফুল, এবং মা দুর্গার ছবি দিয়ে ঘর সাজান।

সম্মিলিত পূজা-অর্চনা

পরিবারের সবাই একসাথে প্রতিদিনের নির্দিষ্ট রঙের পোশাক পরে পূজা করুন। এতে পারিবারিক বন্ধন আরও শক্তিশালী হয় এবং ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।

গরবা ও ডান্ডিয়া অংশগ্রহণ

স্থানীয় গরবা ও ডান্ডিয়া অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করুন। রঙিন পোশাক পরে নৃত্যে অংশগ্রহণ করা নবরাত্রির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।

আধুনিক যুগে নবরাত্রি পালনের নতুন ধারা

সোশ্যাল মিডিয়ায় উদযাপন

আজকালকার তরুণ প্রজন্ম সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিদিনের রঙিন পোশাকের ছবি শেয়ার করে নবরাত্রি উদযাপন করে থাকে। এই প্রবণতা উৎসবের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করেছে এবং ঐতিহ্যকে নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে।

ইকো-ফ্রেন্ডলি উদযাপন

পরিবেশ বান্ধব উপকরণ ব্যবহার করে নবরাত্রি উদযাপন করার প্রবণতা বাড়ছে। জৈব রঙ, পুনর্ব্যবহারযোগ্য সাজসজ্জা, এবং স্থানীয় কারুশিল্প ব্যবহার করা হচ্ছে।

স্বাস্থ্য ও সুস্থতার দিক

রঙ থেরাপির প্রভাব

প্রতিটি রঙের নিজস্ব মনোবৈজ্ঞানিক প্রভাব রয়েছে। নবরাত্রির নয় দিন ধরে বিভিন্ন রঙের পোশাক পরা আসলে একধরনের রঙ থেরাপি, যা মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।

আধ্যাত্মিক সুফল

বিশ্বাস অনুযায়ী, প্রতিদিনের নির্দিষ্ট রঙের পোশাক পরে মা দুর্গার আরাধনা করলে সেই দেবীর বিশেষ আশীর্বাদ পাওয়া যায়। এটি ভক্তদের আধ্যাত্মিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনে।

নবরাত্রি ২০২৫ একটি বিশেষ সময়, যখন আমরা ঐতিহ্যের সাথে তাল মিলিয়ে নয় দিন ধরে নয়টি আলাদা রঙের পোশাক পরে মা দুর্গার আরাধনা করতে পারি। প্রতিটি রঙের নিজস্ব তাৎপর্য এবং আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে, যা আমাদের জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। সাদা থেকে শুরু করে গোলাপি পর্যন্ত – প্রতিটি রঙই দেবী দুর্গার বিভিন্ন রূপের প্রতিনিধিত্ব করে এবং ভক্তদের হৃদয়ে নতুন আশার সঞ্চার করে।

এই বছর নবরাত্রি পালনের সময় শুধু রঙিন পোশাক পরাই নয়, বরং প্রতিটি রঙের গভীর অর্থ উপলব্ধি করে আধ্যাত্মিক যাত্রায় এগিয়ে চলুন। পারিবারিক ঐতিহ্য মেনে চলার পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের কাছে এই সুন্দর সংস্কৃতি পৌঁছে দিন। 

About Author