Paris Olympics 2024: সোনার লক্ষ্যে নীরাজ : প্যারিস অলিম্পিকে ভারতীয় বীরের সামনে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বীরা

২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকে ভারতের সবচেয়ে বড় আশা নীরাজ চোপড়া। টোকিও অলিম্পিকের স্বর্ণজয়ী এই জ্যাভেলিন থ্রোয়ার এবার আরও একটি স্বর্ণপদক জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামছেন। কিন্তু এই পথে তাঁর সামনে রয়েছে…

Ishita Ganguly

 

২০২৪ সালের প্যারিস অলিম্পিকে ভারতের সবচেয়ে বড় আশা নীরাজ চোপড়া। টোকিও অলিম্পিকের স্বর্ণজয়ী এই জ্যাভেলিন থ্রোয়ার এবার আরও একটি স্বর্ণপদক জয়ের লক্ষ্যে মাঠে নামছেন। কিন্তু এই পথে তাঁর সামনে রয়েছে বেশ কিছু কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী। আসুন জেনে নেওয়া যাক, কারা কারা নীরজের স্বপ্নপূরণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন।

নীরাজের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীরা

যাকুব ভাদলেচ (চেক প্রজাতন্ত্র): টোকিও অলিম্পিকের রৌপ্যপদক বিজয়ী ভাদলেচ এ বছর দারুণ ফর্মে রয়েছেন। ২০২৪ মৌসুমের দ্বিতীয় সেরা থ্রো (৮৮.৬৫ মিটার) তাঁর। জুন মাসে ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে স্বর্ণ জিতেছেন তিনি। কাতার ডায়মন্ড লীগেও নীরাজকে হারিয়েছেন মাত্র ২ সেন্টিমিটারের ব্যবধানে।

জুলিয়ান ওয়েবার (জার্মানি): টোকিও অলিম্পিকে চতুর্থ স্থান অর্জনকারী এই জার্মান অ্যাথলিট এবার পদক জয়ের লক্ষ্যে মরিয়া। চলতি মৌসুমে ৮৮.৩৭ মিটার দূরে জ্যাভেলিন নিক্ষেপ করেছেন তিনি। ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে রৌপ্যপদকও জিতেছেন।
ম্যাক্স ডেহনিং (জার্মানি): ২০২৪ সালের শুরুতে ৯০.২০ মিটার থ্রো করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন এই তরুণ জার্মান অ্যাথলিট। এ বছর একমাত্র তিনিই ৯০ মিটার অতিক্রম করতে পেরেছেন। তবে পরবর্তী প্রতিযোগিতাগুলোতে সেই ফর্ম ধরে রাখতে পারেননি।
অ্যান্ডারসন পিটার্স (গ্রেনাডা): প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পিটার্স ২০২২ সালে চারটি ইভেন্টে ৯০ মিটার অতিক্রম করেছিলেন। ২০২৩ সালে একটি দুর্ঘটনার কারণে ফর্ম হারিয়েছিলেন। তবে এ বছর কাতার ডায়মন্ড লীগে ৮৮.৬২ মিটার থ্রো করে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছেন।

আরশাদ নাদিম (পাকিস্তান): মৌসুমের সেরা তালিকায় ১৬তম স্থানে থাকলেও নাদিমকে অবহেলা করা যাবে না। বড় মঞ্চে তিনি প্রায়ই চমকে দেন। প্যারিস ডায়মন্ড লীগে ৭৫ মিটারের কম থ্রো দিয়ে শুরু করে মিনিটের মধ্যেই ৮৪.২১ মিটার পর্যন্ত উন্নতি করেছিলেন।

নীরাজের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স

নীরাজ চোপড়া ২০২৪ সালে মাত্র তিনটি ইভেন্টে অংশ নিয়েছেন। তবে বড় মঞ্চে তিনি যে কতটা দক্ষ, তা আমরা জানি। তাঁর ব্যক্তিগত সেরা থ্রো ৮৯.৯৪ মিটার, যা ভারতীয় জাতীয় রেকর্ড। ২০২৩ সালের বুদাপেস্ট বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে ৮৮.৭৭ মিটার থ্রো করেছিলেন তিনি।

প্রতিদ্বন্দ্বীদের তুলনামূলক পারফরম্যান্স

নীরাজ এবং তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের একটি তুলনামূলক চিত্র দেখা যাক:

অ্যাথলিট দেশ ২০২৪ সালের সেরা থ্রো ব্যক্তিগত সেরা
নীরাজ চোপড়া ভারত ৮৮.৬৭ মি. ৮৯.৯৪ মি.
যাকুব ভাদলেচ চেক প্রজাতন্ত্র ৮৮.৬৫ মি. ৯০.৮৮ মি.
জুলিয়ান ওয়েবার জার্মানি ৮৮.৩৭ মি. ৮৯.৫৪ মি.
ম্যাক্স ডেহনিং জার্মানি ৯০.২০ মি. ৯০.২০ মি.
অ্যান্ডারসন পিটার্স গ্রেনাডা ৮৬.৬২ মি. ৯৩.০৭ মি.
আরশাদ নাদিম পাকিস্তান ৮৪.২১ মি. ৯০.১৮ মি.

নীরাজের প্রস্তুতি

নীরাজ চোপড়া প্যারিস অলিম্পিকের প্রস্তুতি নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী। তিনি বলেছেন, “আমি আমার সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব। আমার লক্ষ্য হল নিজের রেকর্ড ভাঙা এবং দেশের জন্য আরেকটি স্বর্ণপদক জেতা।”নীরজের কোচ ক্লাউস বার্টোনিৎজ জানিয়েছেন, তাঁরা প্রতিদিন ৬-৭ ঘণ্টা কঠোর অনুশীলন করছেন। বিশেষ করে নীরজের থ্রোয়িং টেকনিক এবং শারীরিক শক্তি বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে।

চ্যালেঞ্জ এবং সম্ভাবনা

নীরাজের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল নিজের ওপর চাপ সামলানো। তিনি বর্তমানে অলিম্পিক এবং বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। তাই তাঁর কাছ থেকে সবাই আশা করছে আরেকটি স্বর্ণপদক।তবে নীরাজের পক্ষে সুবিধা হল, তিনি বড় মঞ্চে পারফর্ম করতে অভ্যস্ত। টোকিও অলিম্পিকে তিনি যেভাবে নিজেকে সামলে নিয়েছিলেন, তা থেকে আশা করা যায়, প্যারিসেও তিনি সেরাটা দিতে পারবেন।

প্যারিস অলিম্পিকে নীরাজ চোপড়ার সামনে অনেক কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী রয়েছে। তবে তাঁর প্রতিভা, অভিজ্ঞতা এবং মানসিক দৃঢ়তা দেখে আশা করা যায়, তিনি এবারও ভারতের জন্য গৌরব বয়ে আনবেন। যাকুব ভাদলেচ, জুলিয়ান ওয়েবার বা ম্যাক্স ডেহনিংদের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে নীরাজ যদি আবারও স্বর্ণপদক জিততে পারেন, তাহলে তা হবে ভারতীয় ক্রীড়াঙ্গনের এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।ভারতের কোটি কোটি মানুষের আশা এবং ভালোবাসা নীরজের সঙ্গে রয়েছে। আসুন আমরাও আশা করি, প্যারিসের আকাশে আবারও ভারতের জাতীয় সঙ্গীত বাজবে, নীরজের কাঁধে ঝুলবে সোনার পদক।

About Author
Ishita Ganguly

ঈশিতা গাঙ্গুলী ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি (IGNOU) থেকে স্নাতক। তিনি একজন উদ্যমী লেখক এবং সাংবাদিক, যিনি সমাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে গভীর বিশ্লেষণ ও অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে থাকেন। ঈশিতার লেখার ধরন স্পষ্ট, বস্তুনিষ্ঠ এবং তথ্যবহুল, যা পাঠকদের মুগ্ধ করে। তার নিবন্ধ ও প্রতিবেদনের মাধ্যমে তিনি সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে সামনে আনেন এবং পাঠকদের চিন্তা-চেতনার পরিসরকে বিস্তৃত করতে সহায়তা করেন। সাংবাদিকতার জগতে তার অটুট আগ্রহ ও নিষ্ঠা তাকে একটি স্বতন্ত্র পরিচিতি দিয়েছে, যা তাকে ভবিষ্যতে আরও সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে।