Negative Effects of Mobile Phone usage at Night: আজকাল প্রায় সবারই হাতে স্মার্টফোন। দিনের বেশিরভাগ সময় এটি নিয়েই কাটে অনেকের। কিন্তু রাতে ঘুমানোর আগে মোবাইল ব্যবহার করা কতটা নিরাপদ? গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহার আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
চলুন জেনে নেওয়া যাক রাতে মোবাইল ব্যবহারের ৭টি ক্ষতিকর অভ্যাস সম্পর্কে, যা আপনার স্বাস্থ্যকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।
১. ঘুমানোর আগে সোশ্যাল মিডিয়া ব্রাউজিং:
অনেকেই রাতে শুয়ে শুয়ে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম বা অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ব্রাউজ করেন। কিন্তু এটি আপনার ঘুমের মান খারাপ করতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করলে ঘুমের সময় কমে যায় এবং ঘুমের গুণগত মান খারাপ হয়।সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্ক উত্তেজিত হয়ে ওঠে, যা ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় শান্ত অবস্থা তৈরি করতে বাধা দেয়। এছাড়া অন্যদের পোস্ট দেখে ঈর্ষা, উদ্বেগ বা অন্যান্য নেতিবাচক অনুভূতি জাগতে পারে, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
ঘুমের ঘাটতি: আপনার জীবন কীভাবে প্রভাবিত হচ্ছে
২. রাতে কাজ সংক্রান্ত ইমেইল চেক করা:
অনেকেই রাতে শোওয়ার আগে অফিসের ইমেইল চেক করেন। কিন্তু এটি আপনার মানসিক চাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে কাজ সংক্রান্ত ইমেইল চেক করলে উদ্বেগ ও মানসিক চাপ বেড়ে যায়।রাতে অফিসের ইমেইল পড়লে মস্তিষ্ক পুনরায় কর্মময় হয়ে ওঠে। এতে ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় শান্ত অবস্থা তৈরি হতে বাধা পায়। এছাড়া কোনো গুরুত্বপূর্ণ ইমেইল দেখলে চিন্তা ও উদ্বেগ বেড়ে যেতে পারে, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
৩. রাতে অনলাইন শপিং করা:
অনেকে রাতে শুয়ে শুয়ে অনলাইন শপিং করেন। কিন্তু এটি আপনার ঘুমের সময় কমিয়ে দিতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে অনলাইন শপিং করলে ঘুমের সময় গড়ে ৪০ মিনিট কমে যায়।রাতে অনলাইন শপিং করলে মস্তিষ্ক উত্তেজিত হয়ে ওঠে। নতুন পণ্য দেখা, দাম তুলনা করা, রিভিউ পড়া ইত্যাদি কাজে মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে। এতে ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় শান্ত অবস্থা তৈরি হতে দেরি হয়। এছাড়া অনেক সময় অযথা খরচের জন্য পরে অনুশোচনাও হতে পারে।
৪. রাতে ভিডিও গেম খেলা:
অনেকে রাতে শুয়ে শুয়ে মোবাইলে ভিডিও গেম খেলেন। কিন্তু এটি আপনার ঘুমের মান খারাপ করে দিতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে ভিডিও গেম খেললে ঘুমের সময় কমে যায় এবং ঘুমের গুণগত মান খারাপ হয়।ভিডিও গেম খেলার সময় মস্তিষ্ক অত্যন্ত সক্রিয় থাকে। এতে ঘুমের জন্য প্রয়োজনীয় শান্ত অবস্থা তৈরি হতে বাধা পায়। এছাড়া গেমের উত্তেজনা ও প্রতিযোগিতার মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে সময় লাগে, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।
৫. রাতে নিউজ পড়া:
অনেকে রাতে শুয়ে শুয়ে মোবাইলে নিউজ পড়েন। কিন্তু এটি আপনার মানসিক চাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে নিউজ পড়লে উদ্বেগ ও মানসিক চাপ বেড়ে যায়।রাতে নেতিবাচক খবর পড়লে মন অশান্ত হয়ে উঠতে পারে। বিশেষ করে রাজনৈতিক, অপরাধ বা দুর্ঘটনার খবর পড়লে উদ্বেগ বাড়তে পারে। এছাড়া সারাদিনের ঘটনা নিয়ে চিন্তা করতে থাকলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
৬. রাতে ব্লু লাইট নিঃসরণকারী ডিভাইস ব্যবহার:
মোবাইল, ট্যাবলেট, ল্যাপটপ ইত্যাদি ডিভাইস থেকে নির্গত ব্লু লাইট আমাদের সার্কাডিয়ান রিদম বা শরীরের স্বাভাবিক ছন্দকে বিঘ্নিত করে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে ব্লু লাইট নিঃসরণকারী ডিভাইস ব্যবহার করলে মেলাটোনিন হরমোনের নিঃসরণ কমে যায়, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।মেলাটোনিন হলো একটি হরমোন যা আমাদের ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে। সূর্যাস্তের পর শরীরে এর নিঃসরণ বাড়তে থাকে, যা আমাদের ঘুম পাওয়ার জন্য প্রস্তুত করে। কিন্তু ব্লু লাইটের প্রভাবে মেলাটোনিন নিঃসরণ কমে যায়, যার ফলে ঘুম আসতে দেরি হয় এবং ঘুমের মান খারাপ হয়।
রাতে ঘুম আসছে না? রইলো ঘুম না আসার কিছু কারণ ও তার প্রতিকার
৭. রাতে অতিরিক্ত সময় ধরে মোবাইল ব্যবহার:
রাতে দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল ব্যবহার করলে তা আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, রাতে ২ ঘণ্টার বেশি সময় মোবাইল ব্যবহার করলে ঘুমের সময় কমে যায়, ঘুমের মান খারাপ হয় এবং দিনের বেলায় ক্লান্তি বাড়ে।রাতে দীর্ঘ সময় মোবাইল ব্যবহার করলে চোখের উপর চাপ পড়ে, যা চোখের ক্লান্তি ও শুষ্কতা বাড়ায়।
এছাড়া একই ভঙ্গিমায় দীর্ঘক্ষণ থাকার ফলে গর্দান ও কাঁধে ব্যথা হতে পারে। অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে মানসিক চাপও বাড়তে পারে।উপরোক্ত ৭টি অভ্যাসই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই রাতে মোবাইল ব্যবহার সীমিত করা উচিত।
বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিচ্ছেন, ঘুমানোর কমপক্ষে ১ ঘণ্টা আগে মোবাইল ব্যবহার বন্ধ করা উচিত। এছাড়া নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে:
মনে রাখবেন, ভালো ঘুম আপনার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই রাতে মোবাইল ব্যবহার সীমিত করে নিজের স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। আপনার স্বাস্থ্যই আপনার সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।