Emerging COVID-19 symptoms: ২০২৫ সালে এসে করোনাভাইরাস আবারও নতুন রূপে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নতুন কোভিডের লক্ষণগুলো কি কি – এই প্রশ্নটি এখন অনেকের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে। বিশেষ করে NB.1.8.1, XEC এবং LP.8.1 এর মতো নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলির উপস্থিতিতে আমাদের সচেতন থাকা আরও বেশি জরুরি হয়ে উঠেছে। এই নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলি পূর্বের তুলনায় বেশি সংক্রামক হলেও, তাদের লক্ষণগুলি কিছুটা ভিন্ন এবং অনেক ক্ষেত্রে হালকা। আসুন জেনে নিই এই নতুন রূপের করোনার লক্ষণগুলি সম্পর্কে বিস্তারিত।
নতুন কোভিড ভ্যারিয়েন্টের পরিচিতি
২০২৫ সালের মে মাসে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা NB.1.8.1 ভ্যারিয়েন্টকে “ভ্যারিয়েন্ট আন্ডার মনিটরিং” হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই ভ্যারিয়েন্টটি মূলত চীনে প্রথম শনাক্ত হয় এবং দ্রুত এশিয়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। একইসাথে XEC এবং LP.8.1 ভ্যারিয়েন্টও বিশ্বব্যাপী সংক্রমণের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
NB.1.8.1 হল ওমিক্রন লাইনেজ JN.1 এর একটি সাবভ্যারিয়েন্ট, যা XDV.1.5.1 রিকম্বিন্যান্ট ভ্যারিয়েন্ট থেকে উৃপত্তি হয়েছে। এই ভ্যারিয়েন্টের প্রথম নমুনা ২২ জানুয়ারি ২০২৫ সালে সংগ্রহ করা হয়।
নতুন কোভিডের লক্ষণগুলো কি কি – প্রধান উপসর্গসমূহ
সাধারণ লক্ষণসমূহ
নতুন করোনার ভ্যারিয়েন্টগুলির লক্ষণ পূর্বের ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টগুলির সাথে অনেকটাই মিল রয়েছে। তবে কিছু নতুন বৈশিষ্ট্যও লক্ষ্য করা যাচ্ছে:
শ্বাসতন্ত্রের লক্ষণ:
- গলা ব্যথা (সবচেয়ে সাধারণ)
- শুকনো কাশি বা কফের সাথে কাশি
- নাক বন্ধ এবং সর্দি
- শ্বাস নিতে অসুবিধা বা হাঁপানি
সাধারণ শারীরিক লক্ষণ:
- জ্বর বা ঠান্ডা লাগা
- চরম ক্লান্তি বা অবসাদ
- পেশী ও শরীরে ব্যথা
- মাথাব্যথা
নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিশেষ লক্ষণ
NB.1.8.1 ভ্যারিয়েন্টের বিশেষত্ব:
- ক্রমাগত লো-গ্রেড হাইপারথার্মিয়া (দীর্ঘস্থায়ী হালকা জ্বর)
- ক্ষুধামন্দা
- বমি বমি ভাব
- গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা
JN.1 সাবভ্যারিয়েন্টের লক্ষণ:
- উর্ধ্ব শ্বাসতন্ত্রে প্রধানত সমস্যা
- হালকা থেকে মাঝারি উপসর্গ
- সাধারণত ৪-৫ দিনের মধ্যে উন্নতি
- চরম ক্লান্তি এবং পেশীর দুর্বলতা
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল লক্ষণসমূহ
নতুন কোভিড ভ্যারিয়েন্টগুলিতে পেটের সমস্যা একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হয়ে দাঁড়িয়েছে:
- ডায়রিয়া: ১-১৫ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে
- বমি বমি ভাব এবং বমি
- ক্ষুধামন্দা
- পেট ব্যথা
এই লক্ষণগুলি পূর্বের MERS-CoV বা SARS-CoV এর তুলনায় COVID-19 এ বেশি দেখা যায়।
ত্বক এবং অন্যান্য লক্ষণ
ত্বকের সমস্যা
- হাত ও পায়ে ফুসকুড়ি (অ্যাক্রাল র্যাশ)
- ত্বকে জ্বালাপোড়া
- ত্বকের বিবর্ণতা
চোখ ও কানের সমস্যা
- গোলাপী চোখ বা কনজাংটিভাইটিস
- শ্রবণশক্তি হ্রাস (নতুন ভ্যারিয়েন্টে)
- চোখ লাল ও জ্বালাপোড়া
মুখের লক্ষণ
- মুখ শুকিয়ে যাওয়া এবং লালা নিঃসরণ কমে যাওয়া
- জিহ্বার রং ও গঠনের পরিবর্তন
- মুখে ঘা বা ফোসকা
- খেতে অসুবিধা
গুরুতর লক্ষণ যা দেখলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
কিছু লক্ষণ আছে যেগুলি দেখলে দেরি না করে জরুরি চিকিৎসা নেওয়া প্রয়োজন:
জরুরি সতর্কতা সংকেত:
- শ্বাস নিতে প্রচণ্ড কষ্ট
- বুকে ক্রমাগত ব্যথা বা চাপ অনুভব
- নতুন ধরনের বিভ্রান্তি
- জেগে থাকতে অক্ষমতা
- ত্বকের রং, ঠোঁট, নখের রং নীলচে বা ধূসর হয়ে যাওয়া
অন্যান্য গুরুতর লক্ষণ:
- কাশির সাথে রক্ত পড়া (হিমোপটিসিস)
- তীব্র বুকে ব্যথা
- অতিরিক্ত প্রস্রাব
- ঝাপসা দৃষ্টি
- পক্ষাঘাত বা তীব্র অসাড়তা
বয়স অনুযায়ী লক্ষণের পার্থক্য
শিশুদের মধ্যে কোভিডের লক্ষণ
- জ্বর এবং ফ্লুর মতো উপসর্গ
- শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ
- হজমের সমস্যা
- গন্ধ ও স্বাদের পরিবর্তন
- শরীরে ব্যথা
- আচরণগত পরিবর্তন
কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে
- কাশি ও গলা ব্যথা
- নাক দিয়ে পানি পড়া ও হাঁচি
- জ্বর ও পেশীতে ব্যথা
- মেজাজের পরিবর্তন
- ঘুমের সমস্যা
- হালকা নিউমোনিয়া
যুবকদের মধ্যে
- তীব্র মাথাব্যথা
- শুষ্ক মুখ
- গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট সংক্রমণ
- স্বাদ ও গন্ধ হারানো
- চরম দুর্বলতা
- বমি
নতুন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ক্ষমতা ও তীব্রতা
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, NB.1.8.1 ভ্যারিয়েন্ট পূর্বের কিছু ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় বেশি সংক্রামক। এর মানব কোষের সাথে আবদ্ধ হওয়ার ক্ষমতা বেশি, যার ফলে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে আশার কথা হল, বর্তমান তথ্য অনুযায়ী এই ভ্যারিয়েন্ট অন্যান্য প্রচলিত ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় বেশি গুরুতর অসুস্থতার কারণ হয় না। কোভিড-১৯ এর কারণে হাসপাতালে ভর্তির হার ৯.৮% কমেছে।
রোগ নির্ণয় ও পরীক্ষা
নতুন কোভিডের লক্ষণগুলো কি কি তা জানার পাশাপাশি সঠিক সময়ে পরীক্ষা করানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলির লক্ষণ অন্যান্য সাধারণ জ্বর-সর্দির সাথে মিলে যেতে পারে, তাই যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে পরীক্ষা করানো উচিত।
বিনামূল্যে র্যাপিড টেস্ট কিট পাওয়া যাচ্ছে এবং অনলাইনেও অর্ডার করা যায়। COVID, ইনফ্লুয়েঞ্জা A, ইনফ্লুয়েঞ্জা B এবং RSV এর জন্য একসাথে পরীক্ষা করার ব্যবস্থাও রয়েছে।
প্রতিরোধ ও সুরক্ষা
টিকাদানের গুরুত্ব
নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলির বিরুদ্ধে টিকা এখনও কার্যকর। বিশেষজ্ঞরা প্রতি ৬-১২ মাস অন্তর বুস্টার ডোজ নেওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন, বিশেষ করে যারা উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন তাদের জন্য।
সাধারণ সুরক্ষা ব্যবস্থা
- মাস্ক ব্যবহার, বিশেষ করে ভিড়ের মধ্যে
- সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা
- নিয়মিত হাত ধোয়া
- অসুস্থ ব্যক্তি থেকে দূরে থাকা
- ভালো বায়ু চলাচল নিশ্চিত করা
দীর্ঘমেয়াদী কোভিড (লং কোভিড)
নতুন ভ্যারিয়েন্টগুলিতে আক্রান্ত হওয়ার পরও লং কোভিডের ঝুঁকি রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুযায়ী, প্রাথমিক সংক্রমণের ৩ মাস পর থেকে কমপক্ষে ২ মাস ধরে লক্ষণ থাকলে তাকে লং কোভিড বলা হয়।
লং কোভিডের সাধারণ লক্ষণ:
- ক্রমাগত ক্লান্তি
- শ্বাসকষ্ট
- জ্ঞানীয় কর্মক্ষমতা হ্রাস
- মাথাব্যথা
- বুকে ব্যথা
- জয়েন্টে ব্যথা
গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড-১৯ এ আক্রান্তদের প্রায় ১০-২০% লং কোভিডের লক্ষণ দেখাতে পারে।
চিকিৎসা ও পরামর্শ
কখন ডাক্তার দেখাবেন
- যেকোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে
- সংক্রামিত ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার পর লক্ষণ দেখা দিলে
- লক্ষণ ৫ দিনের বেশি স্থায়ী হলে
- শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা হলে
ঘরোয়া যত্ন
- পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন
- প্রচুর তরল পান করুন
- জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল খেতে পারেন
- অন্যদের থেকে আলাদা থাকুন
- মাস্ক পরুন
বর্তমান পরিস্থিতি ও ভবিষ্যৎ প্রত্যাশা
২০২৫ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত তথ্য অনুযায়ী, LP.8.1 এবং XEC ভ্যারিয়েন্ট নতুন কোভিড সংক্রমণের ৭৩% এর জন্য দায়ী। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই আতঙ্কের কোনো কারণ নেই। সাবধানতা অবলম্বন করলে এবং প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা মেনে চললে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
ভারতে বর্তমানে কোভিড-১৯ এর ক্ষেত্রে হালকা বৃদ্ধি দেখা যাচ্ছে, প্রধানত JN.1 সাবভ্যারিয়েন্টের কারণে। তবে হাসপাতালে ভর্তির হার তেমন বাড়েনি।
নতুন কোভিডের লক্ষণগুলো কি কি – এই প্রশ্নের উত্তর জানার পাশাপাশি আমাদের সচেতন থাকতে হবে যে, ভাইরাস ক্রমাগত পরিবর্তিত হচ্ছে। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুসরণ করা এবং প্রয়োজনীয় সুরক্ষা ব্যবস্থা মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মনে রাখবেন, প্রতিরোধই সর্বোত্তম চিকিৎসা। যেকোনো উপসর্গ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং অন্যদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।