Jay Shah BCCI Secretary: ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ডের (বিসিসিআই) সচিব জয় শাহ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বিরোধে নির্বাচিত হয়েছেন। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট ২০২৪) দুবাইয়ে অনুষ্ঠিত আইসিসি বোর্ড মিটিংয়ে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। জয় শাহ আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
মাত্র ৩৫ বছর বয়সে জয় শাহ আইসিসির সর্বকনিষ্ঠ চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। তিনি বর্তমান চেয়ারম্যান গ্রেগ বার্কলের স্থলাভিষিক্ত হবেন, যিনি তৃতীয় মেয়াদের জন্য প্রার্থী হননি। জয় শাহ একমাত্র মনোনীত প্রার্থী ছিলেন, ফলে নির্বাচন ছাড়াই তিনি নির্বিরোধে নির্বাচিত হন।
জয় শাহ ২০১৯ সাল থেকে বিসিসিআই সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া তিনি ২০২১ সাল থেকে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি হবেন পঞ্চম ভারতীয় যিনি আইসিসির শীর্ষ পদে আসীন হলেন। এর আগে জগমোহন দালমিয়া, শরদ পাওয়ার, এন শ্রীনিবাসন এবং শশাঙ্ক মনোহর এই পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।
নির্বাচিত হওয়ার পর জয় শাহ বলেন, “আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের চেয়ারম্যান হিসেবে মনোনীত হওয়ায় বিনীত বোধ করছি। আমি আইসিসি টিম এবং আমাদের সদস্য দেশগুলোর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে ক্রিকেটকে আরও বৈশ্বিক করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমরা একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি যেখানে একাধিক ফরম্যাটের সহাবস্থান বজায় রাখা, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানো এবং আমাদের প্রধান ইভেন্টগুলোকে নতুন বৈশ্বিক বাজারে প্রবেশ করানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের লক্ষ্য হলো ক্রিকেটকে আগের চেয়ে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও জনপ্রিয় করে তোলা।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা মূল্যবান শিক্ষাগুলোর উপর ভিত্তি করে গড়ে তুলব, কিন্তু সেই সাথে আমাদের অবশ্যই নতুন চিন্তাভাবনা ও উদ্ভাবনকে গ্রহণ করতে হবে যাতে বিশ্বব্যাপী ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসা আরও বাড়ানো যায়। ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে আমাদের খেলার অন্তর্ভুক্তি ক্রিকেটের বিকাশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়, এবং আমি আশাবাদী যে এটি অভূতপূর্ব উপায়ে খেলাটিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।”
জয় শাহের নেতৃত্বে আইসিসির সামনে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে পাকিস্তানে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি আয়োজন, টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ রক্ষা, বিভিন্ন ফরম্যাটের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা, টি-টোয়েন্টি লিগের কারণে দেশের হয়ে খেলা ছেড়ে দেওয়া খেলোয়াড়দের সমস্যা সমাধান করা। এছাড়া ২০২৮ সালের লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে ক্রিকেটের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।
জয় শাহের নির্বাচন নিয়ে ক্রিকেট মহলে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, তার নেতৃত্বে আইসিসি নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। আবার কেউ কেউ আশঙ্কা প্রকাশ করছেন যে, ভারতের প্রভাব আরও বাড়তে পারে। তবে জয় শাহ নিজে বলেছেন, তিনি সব দেশের স্বার্থ রক্ষা করে কাজ করবেন।
ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হরষা ভোগলে বলেছেন, “জয় শাহের নেতৃত্বে আইসিসি নতুন দিগন্ত খুঁজে পেতে পারে। তিনি একজন তরুণ ও গতিশীল নেতা। তার অভিজ্ঞতা ও দূরদর্শিতা ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।”
প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলী বলেছেন, “জয় শাহের নেতৃত্বে আইসিসি নিঃসন্দেহে লাভবান হবে। তিনি একজন দক্ষ প্রশাসক এবং ক্রিকেটের প্রতি তার ভালোবাসা অসীম। আমি আশা করি, তিনি ক্রিকেটের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন।” জয় শাহের নির্বাচন ভারতীয় ক্রিকেটের জন্যও একটি বড় সাফল্য। এর ফলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভারতের প্রভাব আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এটাও লক্ষ্যণীয় যে, জয় শাহকে এখন শুধু ভারতের নয়, বিশ্ব ক্রিকেটের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে।
সামগ্রিকভাবে, জয় শাহের নির্বাচন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। তার নেতৃত্বে ক্রিকেট কীভাবে এগিয়ে যায় তা দেখার জন্য এখন অপেক্ষা করতে হবে। তবে একজন তরুণ ও উদ্যমী নেতা হিসেবে তিনি যে ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবেন, সে ব্যাপারে অনেকেই আশাবাদী।