২০২৬ থেকে রেশনে ‘বড়’ বদল? কোন কার্ডে কমবে চাল, বাড়বে গম/আটা—সরকারি তালিকা ও নিশ্চিতভাবে যাচাই করার নিয়ম

২০২৬ থেকে “চাল কমে গম/আটা বাড়ছে”—এমন খবর গত কয়েকদিনে অনেক জায়গায় ছড়াল, কিন্তু ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অফিসিয়াল “Entitlement” পাতায় (Food & Supplies Dept, WB) ২০২৬ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে বরাদ্দ…

Srijita Chattopadhay

 

২০২৬ থেকে “চাল কমে গম/আটা বাড়ছে”—এমন খবর গত কয়েকদিনে অনেক জায়গায় ছড়াল, কিন্তু ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অফিসিয়াল “Entitlement” পাতায় (Food & Supplies Dept, WB) ২০২৬ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে বরাদ্দ বদলের কোনো নতুন সরকারি তালিকা/নোটিফিকেশন দেখা যাচ্ছে না—সেখানে এখনও কার্ডভিত্তিক বর্তমান বরাদ্দই দেখানো আছে। তাই এই রিপোর্টে “ভাইরাল দাবি” কী বলছে, আর “সরকারি পোর্টালে এখন কী আছে”—দুটো আলাদা করে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হলো, যাতে ভুল তথ্যের কারণে কেউ আতঙ্কিত না হন।

২০২৬ নিয়ে ভাইরাল দাবি: কী বলা হচ্ছে, সমস্যা কোথায়?

অনেক অনলাইন পোস্ট/আর্টিকেলে দাবি করা হচ্ছে যে ২০২৬ থেকে “কেন্দ্রীয় কার্ড” বা কিছু নির্দিষ্ট ক্যাটাগরিতে চাল কমে গম/আটা বাড়বে—এমনকি টেবিল দিয়ে নতুন পরিমাণও দেখানো হচ্ছে। কিন্তু এই ধরনের পোস্টগুলোতে সাধারণত সরকারী গেজেট/ফুড ডিপার্টমেন্টের অফিসিয়াল অর্ডারের লিংক, মেমো নম্বর, কার্যকর হওয়ার তারিখ-সহ প্রামাণ্য নোটিফিকেশন—এসব স্পষ্টভাবে দেওয়া থাকে না, ফলে এগুলোকে “নিশ্চিত সরকারি পরিবর্তন” হিসেবে ধরার সুযোগ কম।

অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের Food & Supplies Department-এর “Ration Card Entitlements” পাতায় (যেখানে কার্ডভিত্তিক মাসিক বরাদ্দ দেওয়া থাকে) এখনও AAY/PHH-SPHH/RKSY-I/RKSY-II অনুযায়ী বরাদ্দ তালিকা দেখানো আছে—সেখানে ২০২৬ থেকে নতুন বরাদ্দ কার্যকর হবে এমন কোনো আপডেট টেক্সট নেই। তাই বাস্তবে যদি ২০২৬ থেকে পরিবর্তন আসেও, তা নিশ্চিতভাবে ধরতে হলে অফিসিয়াল নোটিফিকেশন/পোর্টালের আপডেট ছাড়া “ভাইরাল পোস্ট”কে একমাত্র সূত্র হিসেবে ব্যবহার করা ঠিক হবে না।

সরকারি তালিকা: পশ্চিমবঙ্গে এখন কোন কার্ডে কত চাল–গম/আটা?

নীচের টেবিলটি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের Food & Supplies Department-এর অফিসিয়াল “Entitlement” পেজে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী (ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত দৃশ্যমান) সাজানো। মনে রাখতে হবে—ডিলার/এলাকা/স্কিম-ভিত্তিক বিশেষ বরাদ্দ, উৎসবকালীন বা বিশেষ প্যাকেজ ইত্যাদির ক্ষেত্রে আলাদা নির্দেশ থাকতে পারে, তাই কার্ড নম্বর দিয়ে “Know your Entitlement” থেকে মিলিয়ে নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ।

রেশন কার্ড ক্যাটাগরি (WB) চাল (মাসিক) গম/আটা (মাসিক) নোট
AAY চাল 15 কেজি (পরিবার পিছু) food.wb Fortified Atta 19 কেজি (পরিবার পিছু) অথবা গম 20 কেজি (পরিবার পিছু) food.wb WB পোর্টালে পরিবার-ভিত্তিক দেখানো food.wb
PHH / SPHH চাল 2 কেজি (রেশন কার্ড পিছু) food.wb Fortified Atta 2.85 কেজি (রেশন কার্ড পিছু) অথবা গম 3 কেজি (রেশন কার্ড পিছু) food.wb WB পোর্টালে কার্ড-ভিত্তিক দেখানো food.wb
RKSY–I চাল 2 কেজি food.wb গম 3 কেজি food.wb অফিসিয়াল তালিকা অনুযায়ী food.wb
RKSY–II চাল 1 কেজি food.wb গম 1 কেজি food.wb অফিসিয়াল তালিকা অনুযায়ী food.wb

“চাল কমছে, গম বাড়ছে”—এটা কি এখনই ঘটেছে?

পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অফিসিয়াল entitlement পাতায় (ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত) ২০২৬ থেকে চাল-গমের অনুপাত বদলের কথা আলাদা করে লেখা নেই; সেখানে “বর্তমান entitlement”ই দেখানো। তাই “২০২৬ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে চাল কমবে/গম বাড়বে”—এমন সিদ্ধান্ত নিশ্চিত ধরে নেওয়ার আগে অফিসিয়াল নোটিফিকেশন বা পোর্টাল আপডেট আসা দরকার।

জাতীয় প্রেক্ষাপট: ফ্রি রেশন ২০২৪–২০২৮, চাল–গম মিশ্রণ কেন বদলাতে পারে?

কেন্দ্র সরকার ১ জানুয়ারি ২০২৪ থেকে ৫ বছরের জন্য প্রায় ৮১.৩৫ কোটি উপভোক্তাকে PMGKAY-এর আওতায় ফ্রি খাদ্যশস্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে, এবং এই ৫ বছরের আনুমানিক খাদ্যভর্তুকি ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১১.৮০ লক্ষ কোটি টাকা। এই ধরনের দীর্ঘমেয়াদি ফুড-সিকিউরিটি কমিটমেন্ট চলতে থাকলে রাজ্যভিত্তিক ডিস্ট্রিবিউশন/লজিস্টিকস/পছন্দের ভিত্তিতে (চাল বনাম গম/আটা) “মিশ্রণ” নিয়ে সময়ে সময়ে প্রশাসনিক সমন্বয় হতে পারে—কিন্তু সেটাও সাধারণত অফিসিয়াল অর্ডার/অ্যালোকেশন/ডিস্ট্রিবিউশন গাইডলাইন দিয়ে জানানো হয়।

আরও একটি বড় বিষয় হলো—দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন ও মজুত ব্যবস্থাপনা। PIB-এর তথ্য অনুযায়ী Third Advance Estimates (2024–25) অনুসারে ভারত 353.96 মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য উৎপাদনের কথা জানিয়েছে—যার মধ্যে গম 117.51 মিলিয়ন টন এবং চাল 149.07 মিলিয়ন টন। একই PIB নথিতে বলা হয়েছে, ১ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত FCI ও রাজ্য সংস্থাগুলোর কাছে কেন্দ্রীয় পুল খাদ্যশস্য মজুতের জন্য মোট স্টোরেজ ক্যাপাসিটি ছিল 917.83 লাখ মেট্রিক টন (LMT)। বাস্তবে এই উৎপাদন–মজুত–অ্যালোকেশন চেইনের ওপরেই নির্ভর করে অনেক সময় কোন রাজ্যে কোন শস্য (চাল/গম/আটা) কতটা প্রাধান্য পাবে—তবে “আপনার কার্ডে কত পাবেন” সেটা শেষ পর্যন্ত রাজ্যের অফিসিয়াল entitlement/ডিলার বরাদ্দেই প্রতিফলিত হয়।

২০২৫–২৬ থেকে যে পরিবর্তনগুলো সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ (কার্ড বাতিল/রেশন বন্ধ এড়াতে)

e-KYC/ভেরিফিকেশন নিয়ে কড়াকড়ি

২০২৫ সালে TPDS নীতিতে সংশোধনের মাধ্যমে রেশন কার্ডধারীদের e-KYC নির্দিষ্ট সময় অন্তর বাধ্যতামূলক করার মতো পরিবর্তনের খবর বিভিন্ন বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যমে রিপোর্ট হয়েছে, উদ্দেশ্য হিসেবে স্বচ্ছতা বাড়ানো ও ডুপ্লিকেট/ভুয়ো উপভোক্তা কমানোর কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ “চাল কমছে না বাড়ছে” বিতর্কের চেয়েও বাস্তব ঝুঁকি হলো—ভেরিফিকেশন/ডকুমেন্ট আপডেট না থাকলে কিছু ক্ষেত্রে রেশন পাওয়া আটকে যেতে পারে, তাই স্থানীয় খাদ্য দপ্তর/ডিলারের নির্দেশ নিয়মিত দেখা জরুরি।

ONORC (One Nation One Ration Card) ও পোর্টেবিলিটি

PMGKAY ঘোষণার প্রেস রিলিজে ONORC-এর মাধ্যমে দেশের যে কোনো Fair Price Shop থেকে সুবিধা নেওয়ার সুবিধার কথাও উল্লেখ আছে, বিশেষ করে মাইগ্র্যান্টদের জন্য। যারা কাজের প্রয়োজনে জেলা/রাজ্য বদলান, তাদের জন্য এই পোর্টেবিলিটি বাস্তবে উপকারী—তবে আধার লিংকিং, e-KYC, ফিঙ্গারপ্রিন্ট/OTP সমস্যার মতো বাস্তব বাধাও থাকে, তাই আগেভাগে স্ট্যাটাস চেক করা বুদ্ধিমানের।

কীভাবে নিশ্চিতভাবে জানবেন: আপনার কার্ডে আসলে কী বরাদ্দ? (No guesswork)

নিচের ৩টা কাজ করলে “ভাইরাল পোস্ট” না দেখে ২ মিনিটে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উত্তর বের করা যায়—কারণ এগুলো অফিসিয়াল সিস্টেম/পাতাভিত্তিক।

  • Food & Supplies Dept, WB-এর অফিসিয়াল “Ration Card Entitlements” পেজ দেখে নিন: https://food.wb.gov.in/food/Homepage/entitlement.aspx

  • একই সাইটে “Know Entitlement Against a Ration Card”/এন্টাইটেলমেন্ট চেক অপশন ব্যবহার করে কার্ড নম্বর দিয়ে মিলিয়ে নিন (যদি অপশনটি আপনার ক্ষেত্রে অ্যাক্টিভ থাকে)।

  • যদি ডিলার বাস্তবে কম/বেশি দেয় বা গমের বদলে আটা, কিংবা entitlement–বিলিং মেলেনা—তাহলে WB Food & Supplies সাইটের Complaint/Grievance অপশন ধরে লিখিত অভিযোগ করুন।

২০২৬ থেকে চাল কমে গম/আটা বাড়ছে—এমন দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়া/অনলাইন পোস্টে অনেক “নতুন তালিকা” ঘুরছে, কিন্তু ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অফিসিয়াল entitlement পাতায় ২০২৬ থেকে বাধ্যতামূলক পরিবর্তনের কোনো আলাদা আপডেট দেখা যায় না। তাই নিশ্চিত তথ্যের জন্য ভাইরাল পোস্ট নয়—সরকারি নোটিফিকেশন ও food.wb.gov.in পোর্টালই প্রধান রেফারেন্স হওয়া উচিত। কেন্দ্র ২০২৪ থেকে ৫ বছরের জন্য PMGKAY-এর আওতায় ফ্রি খাদ্যশস্য দেওয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়েছে, ফলে নীতিগতভাবে ফুড সিকিউরিটি সাপোর্ট চলমান থাকার কথাই অফিসিয়ালভাবে বলা আছে। একই সঙ্গে e-KYC/ভেরিফিকেশন সংক্রান্ত নিয়ম কড়াকড়ি হওয়ায় কার্ড-স্ট্যাটাস ঠিক রাখা এখন আরও জরুরি। সব মিলিয়ে—“কোন কার্ডে কত পাবেন” জানতে অফিসিয়াল entitlement চেক করুন, এবং কোনো পরিবর্তন হলে সেটাও প্রথমে অফিসিয়াল নোটিফিকেশন/পোর্টালেই প্রতিফলিত হবে।

About Author
Srijita Chattopadhay

সৃজিতা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতক। তিনি একজন প্রতিশ্রুতিশীল লেখক এবং সাংবাদিক, যিনি তার লেখা দ্বারা বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির সমৃদ্ধি তুলে ধরতে সদা উদ্যমী। সৃজিতার লেখার ধারা মূলত সাহিত্য, সমাজ এবং সংস্কৃতির বিভিন্ন দিককে ঘিরে আবর্তিত হয়, যেখানে তিনি তার গভীর পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা ও বিশ্লেষণী দক্ষতার পরিচয় দেন। তাঁর নিবন্ধ ও প্রতিবেদনগুলি পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে, যা তার বস্তুনিষ্ঠতা ও সংবেদনশীলতার পরিচয় বহন করে। সৃজিতা তার কর্মজীবনে ক্রমাগত নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে বদ্ধপরিকর, যা তাকে বাংলা সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন